চড়া দামে গ্রাহকদের নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে আবারও প্রস্তাব দিয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড-পিডিবি।
এর আগে ‘ন্যায্যতা ও ন্যায়-নীতি’ রক্ষার বিবেচনায় পিডিবির এ সংক্রান্ত প্রস্তাবে ‘না’ বলেছিলো বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।
বিইআরসির চেয়ারম্যান সৈয়দ ইউসুফ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, এবার বিভিন্ন ‘ভোল্টেজ লেভেলে’ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য নতুন একটি মূল্যহার (ট্যারিফ কাঠামো) প্রস্তাব করেছে পিডিবি।
সোমবার জমা দেওয়া এই প্রস্তাবে এই মূল্যহারকে উল্লেখ করা হয়েছে ‘কিউ’ শ্রেণীর ট্যারিফ কাঠামো হিসাবে।
ইউসুফ হোসেন বলেন, ‘কিউ’ শ্রেণী বলতে ‘কোয়ালিটি পাওয়ার’ অর্থাৎ মানসম্মত নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ বোঝানো হয়েছে। বর্তমানে খুচরা বিদ্যুতের মূলহার নির্ধারণে ‘এ’ থেকে ‘জে’ পর্যন্ত নয়টি শ্রেণী রয়েছে।
এ প্রস্তাবটি বিবেচনা করার ইঙ্গিত দিয়ে বিইআরসির চেয়ারম্যান বলেন, “নতুন এই মূল্যহার নির্ধারণের জন্য উন্মুক্ত সভা ও গণশুনানি হবে। তারপরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।”
পিডিবি এই প্রস্তাব পাঠানোর আগে গত ১০ এপ্রিল বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে বেশি দামে শিল্প ও বাসাবাড়িতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।
পিডিবির প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটানো ও নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের জন্য তরল জ্বালানিতে ব্যয়বহুল বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হচ্ছে। অনেক সময় তরল জ্বালানিচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা থাকা সত্বেও বাজেট সীমিত রাখতে উৎপাদন বন্ধ রাখা হয়।
বর্তমানে বিভিন্ন শ্রেণীর খুচরা গ্রাহক (রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান, শিল্প কারখানা) প্রকৃত উৎপাদন মূল্যে বা তার চেয়ে বেশি দামে হলেও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়ার আগ্রহ দেখাচ্ছে বলে প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়।
“এ অবস্থায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের বাড়তি ব্যয় ওই শ্রেণীর গ্রাহকরা পরিশোধ করলে তরল জ্বালানিতে ব্যয়বহুল উৎপাদন কেন্দ্র চালু রেখে বর্ধিত বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব।”
প্রস্তাবে ‘কিউ’ শ্রেণীর মূল্যহারে বলা হয়েছে, ৪০০ ভোল্টেজ লাইনের জন্য (আবাসিক) প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে ১৩ টাকা; অনাবাসিক সংযোগে বেশি চাহিদার সময়ে (পিক আওয়ার) ২২টাকা ও অফ-পিক সময়ে ১৮ টাকা এবং ফ্ল্যাট রেটে (যদি পিক কিংবা অফ পিক সময় না ধরা হয়) ১৯ টাকা।
এছাড়া ১১ কেভি লাইনের জন্য পিক সময়ে ২১ টাকা, অফ-পিক সময়ে ১৭ টাকা এবং ফ্লাট রেটে ১৮ টাকা; ৩৩ কেভি লাইনের জন্য পিক সময়ে ২০টাকা, অফ-পিক সময়ে ১৬ টাকা এবং ফ্ল্যাট রেটে ১৭ টাকা; ১৩২ এবং ২৩০ কেভি লাইনের জন্য পিক সময়ে ১৯ টাকা, অফ-পিক সময়ে ১৫ টাকা এবং ফ্ল্যাট রেটে ১৬ টাকা দর প্রস্তাব করেছে পিডিবি।
বর্তমানে তরল জ্বালানিতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুুৎ উৎপাদনে ব্যয় হচ্ছে ১৬ থেকে ১৮ টাকা। আর গ্যাসে প্রায় ২ টাকা, কয়লায় প্রায় ৫ টাকা এবং জলবিদ্যুতে ১ টাকা ব্যয় হচ্ছে।
পিডিবি চেয়ারম্যান এ এস এম আলমগীর কবীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিদেশে বেশি দামে কোয়ালিটি পাওয়ার সরবরাহের ব্যবস্থা রয়েছে। আমাদের দেশেও তা চালু করতে চাই।”
এর আগে দেশে প্রথমবারের মতো নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য গত বছরের ১৬ মে পিডিবি প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য গড়ে ১৩ টাকা দাম ধরে একটি প্রস্তাব দেয়।
ওই প্রস্তাবের পর গত বছরের ৫ অক্টোবর বিইআরসিতে উম্মুক্ত সভা এবং ১৭ নভেম্বর গণশুনানি হয়।
গণশুনানীতে বিইআরসির আবেদন মূল্যায়ন কমিটির জানায়, সব গ্রাহককে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেওয়া পিডিবির স্বাভাবিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এর জন্য আলাদা গ্রাহকশ্রেণী সৃষ্টি করা ন্যায্যতা ও ন্যায়-নীতির পরিপন্থী। ওই বছরের ২২ ডিসেম্বর কমিশনের রায়ে বলা হয়, পিডিবির ওই প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়।
বর্তমানে আবাসিক গ্রাহকদের জন্য ১০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুতের দাম ৩ টাকা ০৫ পয়সা। ১০১ থেকে ৪০০ ইউনিট পর্যন্ত ৪ টাকা ২৯ পয়সা এবং চারশ’র বেশি ইউনিট ব্যবহারের ক্ষেত্রে ৭ টাকা ৮৯ পয়সা হারে দাম নেয় পিডিবি।
এছাড়া ১১ কেভি, ৩৩ কেভি এবং ১৩২ কেভি লাইনের জন্য বিভিন্ন শ্রেণীর গ্রাহকরা গড়ে সাড়ে পাঁচ টাকা দরে বিদ্যুৎ কিনছে। বর্তমানে ২৩০ কেভি লাইন থেকে বিদ্যুৎ বিক্রি হয় না।