জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মামলার শুনানি ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত মুলতবি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
জামায়াতের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আব্দুর রাজ্জাক সোমবার নিজামী ও মুজাহিদের অব্যাহতির আবেদনের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে শুনানি শুরু করেন।
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে ২০১০ সালের ২৫ মার্চ গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লা ও মো. কামারুজ্জামানের আবেদনেরও শুনানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাদের মামলা নবগঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ স্থানান্তরিত হওয়ায় তা হয়নি।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, প্রসিকিউশন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং সেকারণে মামলাগুলো ষড়যন্ত্রমূলক।
“আওয়ামী লীগ মনে করে ক্ষমতা দখলের ক্ষেত্রে জামায়াত গুরুত্বপূর্ণ এবং মামলাগুলোর পিছনে এটাই কাজ করেছে।”
তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনাল যদি মামলাগুলো ষড়যন্ত্রমূলক বলে প্রমাণ পায় তাহলে এগুলো নিয়ে এর আর এগোনোর কোনো দরকার নেই এবং তাৎক্ষণিকভাবে অভিযোগ খারিজ করে দিতে পারে।
জামায়াত নেতাদের এ আইনজীবী বলেন, ১৯৫ জন চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী যারা বাংলাদেশি নয়, পাকিস্তানি কর্মকর্তা তাদের বিচারের আওতায় আনার উদ্দেশ্যে ১৯৭৩ সালে এ আইন করা হয়।
“দালাল আইনে সম্ভবত আমার মক্কেলদের বিচার হতে পারে। কিন্তু এ আইনে নয়।”
নুরেমবার্গ, টোকিও, রুয়ান্ডা, সাবেক যুগোস্লাভিয়া ও সিয়েরা লিওনসহ সাতটি যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের দৃষ্টান্ত টেনে রাজ্জাক বলেন, এখানে ৪০ বছরের অস্বাভাবিক বিলম্ব রয়েছে প্রসিকিউশন যার ব্যাখ্যা দিতে পারেনি।
“এটা এমন নয় যে, আমি (মানে তার মক্কেল) বিদেশে ছিলাম বা দেশ থেকে দূরে ছিলাম। আমি বাংলাদেশেই ছিলাম এবং এর আগে এ ধরনের বিচারের কোনো ইঙ্গিতই ছিল না।”
তিনি বলেন, বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এক সময় জামায়াতের সঙ্গে একযোগে সরকারবিরোধী আন্দোলন করেছিল। কিন্তু এখন ওই দলটিরই পিছু লেগেছে।
এরপর জামায়াতের এ আইনজীবী দলটির আমির নিজামীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের উত্থাপিত ১৫টি অভিযোগের বিষয়ে নিজের যুক্তি তুলে ধরেন।
আগামী ২৪ এপ্রিল অভিযোগ থেকে অব্যাহতি চেয়ে নিজামির করা আবেদনের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শেষে মুজাহিদের আবেদনের শুনানি হবে।
বক্তব্য
নিজামীর বিরুদ্ধে বক্তব্যের মাধ্যমে উস্কানি, প্ররোচনা ও মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টির অভিযোগ এনেছে প্রসিকিউশন।
ওই বক্তব্যগুলোর অংশবিশেষ পাঠ ও নিজামি কী বলতে চেয়েছিলেন তা ব্যাখ্যা করে রাজ্জাক বলেন, এগুলো মানবতাবিরোধী অপরাধের কাছাকাছি আসে না।
তিনি বলেন, জামায়াতের তৎকালীন ছাত্র শাখা ইসলামী ছাত্র সংঘের প্রধান নিজামী ১৯৭১ সালে শুধুই একজন ছাত্র ছিলেন এবং তার পক্ষে তখন ক্ষুব্ধ বিবৃতি দেওয়াটা স্বাভাবিক।
“তবে সেগুলো ছিল শুধুই রাজনৈতিক বক্তব্য, আর কিছু নয়।”
“পাকিস্তানকে সমর্থন করা নিশ্চয়ই অপরাধ হতে পারে না।”
“ওই সব বক্তব্যের কারণে নির্দিষ্ট কোনো হত্যাযজ্ঞ হয়েছে তা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে প্রসিকিউশন,” বলেন তিনি।