বাংলাদেশ দলের পাকিস্তান সফর নিয়ে অনেক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। ওসব আমলে নিচ্ছেন না বিসিবি সভাপতি আ হ ম মোস্তফা কামাল। বরং তিনি বলছেন, পাকিস্তানে না গেলে বড় ক্ষতির মুখে পড়বে বাংলাদেশের ক্রিকেট। ক্রিকেট নিয়ে তার সিদ্ধান্তকেই সরকারের অনুমোদন বলে দাবি করছেন মোস্তফা কামাল! আইসিসির বৈঠক শেষে দেশে ফেরার পর মোবাইলফোনে এই সাক্ষাৎকারটি দিয়েছেন বিসিবি সভাপতি।
প্রশ্ন: পাকিস্তান সফরে যাওয়ার প্রস্তাবে আইসিসির সভ্যগণদের প্রতিক্রিয়া কেমন ছিলো?
মোস্তফা কামাল: আইসিসি শতভাগ আমাদের অনুকূলে আছে। একজনও বিপক্ষে বলেনি। বরং আমাদের এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছে। একদেশ আরেক দেশে গেলে আইসিসি কখনো মিডিয়া বিজ্ঞপ্তি দেয় না। বাংলাদেশ পাকিস্তানে যাবে দেখে আইসিসি থেকে একপৃষ্ঠার মিডিয়া বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। এটা কখনো করে না।
প্রশ্ন: এত অল্প সময়ের মধ্যে পাকিস্তানে যাওয়া সম্ভব হবে?
মোস্তফা কামাল: আমরা তো আশাবাদি। সংক্ষিপ্ত সফরে আমাদের দিক থেকে সব প্রস্তুত করাই আছে। আইসিসি কাজ করছে। যথা সময়ে সব জানা হবে।
প্রশ্ন: সরকারের কাছ থেকে অনুমোদন পাওয়া গেছে কি না এনিয়ে একটা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আসলে সত্যিটা কি?
মোস্তফা কামাল: সরকারের অনুমোদন আমি নিজেই। সরকার দায়িত্ব দিয়েছে আমাকে ক্রিকেট চালাবার জন্য। আমরা যেটা ভালো মনে করবো সেটাই সরকার। দেশের জনগণকে নিয়েই সরকার। আমরা ক্রিকেটের স্বার্থে এই উদ্যোগ নিয়েছি। আজকে যদি পাকিস্তানে না যাই, পাকিস্তান যদি তাদের সমস্ত খেলোয়াড়ের অনুমোদন আটকে দেয়, তাহলে কি হবে? আইসিসির গত সভায় আইন করা হয়েছে, কোন বিদেশি খেলোয়াড় নিজের দেশের ক্রিকেট বোর্ডের ছাড়পত্র ছাড়া খেলতে পারবে না। এখন পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা না খেললে বিপিএল বন্ধ হয়ে যাবে। ঘরোয়া ক্রিকেটও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ভারতের খেলোয়াড়রা এখানে আসবে না। ভারতের খেলোয়াড়দের নূন্যতম মূল্য এক কোটি টাকা। পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা এখনো রিক্সায় করে এসে খেলে যায়। আমরা আবাহনী মোহামেডান থেকে টাকা দেই অন্য দলগুলো থেকে তাও পায় না। শোয়েব মালিক কবে থেকে আসা শুরু করেছে বাংলাদেশে, যখন সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলে তখন থেকে।
প্রশ্ন: পাকিস্তান সফরের বিষয়টি আপনার ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা কি না?
মোস্তফা কামাল: আমরা আশা করছি সহ-সভাপতি হবো। একসময় সভাপতি হবো। সভাপতি হলে তো নেতৃত্বে দিতে হবে। ‘কামাল ইজ ডুইং রাইট জব’। প্রত্যেকটা দেশ প্রশংসা করেছে সভায়। যদি আমি একটা কাজ করতাম তারা যদি না জানতো তাহলে তারা আমাকে তো তুলোধুনো করতো সভায়। সবাই আমাকে বলেছে, তুমি এই উদ্যোগ নিয়ে ঠিক কাজই করেছো।
প্রশ্ন: তাহলে আপনি বাংলাদেশের ক্রিকেটের বৃহত্তর স্বার্থের কথা বিবেচনা করে পাকিস্তান সফরের উদ্যোগ নিয়েছেন?
মোস্তফা কামাল: বাংলাদেশের ক্রিকেট লাভবান হবে। নিজস্ব খেলাগুলো এখন তারা দুবাইয়ে এবং ইংল্যান্ডে খেলে। বাংলাদেশ পাকিস্তানে গেলে তাদের অনেক খেলা ঢাকায় চলে আসবে। আমরা লাভবান হবো। ইংল্যান্ড খেলবে বাংলাদেশের মাঠে। এটাও আমার সঙ্গে চুক্তি হয়েছে।
প্রশ্ন: আইসিসির সহ-সভাপতি হিসেবে আপনার মনোনয়নের বিষয়টি পিছিয়ে গেলো কেন?
মোস্তফা কামাল: কতগুলো সংশোধনী আনা হয়েছে। সেগুলো গঠনতন্ত্রে অনুমোদনের পর আমার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সভাপতি এক বছর করায় সবার ক্ষতি হবে। আমার জন্য ক্ষতিটা বেশি হবে। সবাই ওই সিদ্ধান্ত মেনে নিলেও আমি মানি নাই। একটা ভালোর উদ্যোগ চেয়ারম্যানের পদ সৃষ্টি। তাই বলে সভাপতির মেয়াদ একবছর হতে হবে কেন?
প্রশ্ন: সভাপতি হলেও খুব বেশি কাজের সুযোগ থাকবে কি?
মোস্তফা কামাল: বাংলাদেশের ক্রিকেট বোর্ডে সভাপতির কাজ আছে কিন্তু আইসিসিতে কোন কাজ নেই। আইসিসির সহ-সভাপতি এবং সভাপতির ভোটাধিকার নেই। তাদের কাজটা কি? জিল্লুর রহমন সাহেব যেরকম, এটাও সেরকম। আইসিসি অনেক বড় হয়ে গেছে বলে চেয়ারম্যান দরকার। চেয়ারম্যানকে বেতন দেওয়া হবে। আমাকে ১০ কোটি টাকা বেতন দিলেও তো আমি চেয়ারম্যান হবো না। অত সময় আমার হাতে নেই। আমি নিশ্চয়ই আইসিসি থেকে বেতন নিবো না। যিনি চেয়ারম্যান হবেন তিনি বেতন পাবেন। তাকেও বোর্ড নির্বাচিত করবে। যিনি চেয়ারম্যান হবেন তিনি বর্তমান বোর্ডের বা সাবেক বোর্ড সদস্য হতে হবেন।