প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, চট্টগ্রামের মহেশখালী ছিল বিচ্ছিন্ন দ্বীপ, যা চিরদিন অবহেলিত ছিল। ডিজিটাল পদ্ধতির মাধ্যমে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে এবং বিশ্বব্যাপী এই মহেশখালীর একটি সংযোগ স্থাপিত হয়ে গেল আজ। সারা বিশ্ব আজ মহেশখালীবাসীর হাতের মুঠোয়।
আজ বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ‘ডিজিটাল আইল্যান্ড মহেশখালী’ প্রকল্পের উদ্বোধন করে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক কবির বিন আনোয়ার ভিডিও কনফরেন্সটি সঞ্চালনা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, শুধু মহেশখালী নয়, আরও যেসব বিচ্ছিন্ন এলাকা আছে সেখানেও আমরা এই ডিজিটাল পদ্ধতি চালু করে দেব। আর মহাশূন্যে আমরা যে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করব (বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট) সেটা উৎক্ষেপণ হয়ে গেলে আরও সুবিধা হবে।
প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ অঞ্চলের জনগণের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই অঞ্চলের মানুষ আর নিজেদের কখনও অবহেলিত ভাববে না। তাছাড়া মহেশখালীতে আমরা আরও অনেকগুলো প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। কাজেই এই অঞ্চলের সার্বিকভাবে উন্নতি হবে।
তিনি বলেন, এ প্রকল্পের মাধ্যমে এই অঞ্চলের মানুষ আরও উন্নতমানের শিক্ষার সুযোগ পাবে, চিকিৎসার সুযোগ পাবে, তাদের কর্মসংস্থানের সুবিধা হবে। সারা বিশ্বকে জানতে পারবে। দেশে-বিদেশে যোগাযোগটা রাখতে পারবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা একটি স্বাধীন জাতি। এই স্বাধীনতা আমরা অর্জন করেছি আমাদের মহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে, তিনি আমাদের একটি স্বাধীন দেশ দিয়ে গেছেন। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে এই দেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলা, সেভাবেই গড়ে তুলব। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে চাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমুদ্রসীমা আমরা পেয়েছি। এই সমুদ্র সম্পদকে কাজে লাগানো এবং পাশাপাশি জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে তাদের জীবনমানের উন্নয়ন করাই হচ্ছে আমাদের সরকারের প্রধান লক্ষ্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সরকারে আসার পরই উদ্যোগ নিয়েছি পতিত অঞ্চলগুলোর উন্নয়নের জন্য। কারণ আমাদের অর্থনৈতিক নীতিমালার মূল কথাটাই হচ্ছে উন্নয়নের ছোঁয়াটা একেবারে তৃণমূল পর্যায় থেকে হবে। সাধারণ গ্রামের মানুষ, বিচ্ছিন্ন এলকার মানুষ, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে শুরু করে বিচ্ছিন্ন ছোট ছোট দ্বীপ অঞ্চলের মানুষ, হাওড়-বাওড় অঞ্চলের মানুষ যেন এই উন্নতির ছোঁয়াটা পায়।
অনুষ্ঠানে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী জানান, এ অঞ্চলের জনগণ ইতোমধ্যেই ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা পেতে শুরু করেছেন। এখানে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা, গর্ভবতী মায়েদের জন্য ডিজিটাল আল্ট্রাসাউন্ড সেবা, ইউরিন অ্যানালাইজার প্রভৃতি সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
প্রায় ৩৬২ দশমিক ১৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের মহেশখালী দ্বীপের ৪ লাখ বাসিন্দার জন্য প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সরকার। প্রায় ২২ কোটি ৩৫ লাখ ৮১ হাজার টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পের কাজ ২০১৮ সালের ৩০ জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। কোরিয়ান টেলিকম (কেটি) প্রতিষ্ঠানের কারিগরি সহযোগিতায় প্রকল্পটি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সরকার এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে মহেশখালীর মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ উচ্চগতির ইন্টারনেট এবং প্রযুক্তি সেবা পাবে। তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, তথ্য ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় প্রবেশাধিকার বাড়বে।
অনুষ্ঠানে সরাসরি দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল থেকে কোরিয়া টেলিকম (কেটি) কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তারা, দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জুলফিকার আহমেদ এবং দেশের মহেশখালী প্রান্তে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসন, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং স্থানীয় জনগণ সম্পৃক্ত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে সিউল প্রান্ত থেকে কেটির চেয়ারম্যান কিউ শিক শিন, মহেশখালী প্রান্ত থেকে আইওএমের চিফ অব মিশন শরৎ চন্দ্র দাস এবং আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক বক্তব্য রাখেন।
গণভবনে টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, বাংলাদেশে দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত আন সিওন দো, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।