অতি বর্ষণ এবং আত্রাই নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় প্লাবিত হয়েছে চলনবিলের নিম্নাঞ্চল। হাওরাঞ্চলে হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি ইতোমধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে। পাকা ধান কেটে ঘরে তুলতে জরুরিভাবে পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ।
একদিকে প্রতিকূল আবহাওয়া অপরদিকে অকাল বন্যায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। ধান, ভুট্টাসহ নানা ফসল পানির নিচে। অবিরাম বৃষ্টির কারণে শ্রমিক সঙ্কট দেখা দিয়েছে। পাকা ধানও কাটতে পারছেন না কৃষকরা। ফলে অকালে ফসল ডুবে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন চাষিরা।
সিংড়া উপজেলার বিলদহর, আনন্দনগর, বেড়াবাড়ি, কাউয়াটিকরী কালিনগর, সারদানগর, হুলহুলিয়া, চৌগ্রাম, বড়িয়া,পাটকোল, দমদমাসহ বিভিন্ন গ্রামে বন্যার পানি প্রবেশ করায় ফসলের ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এছাড়া গুরুদাসপুর উপজেলার সাপগাড়ী, বিলসা, রুহাই, হরদামাসহ কয়েকটি গ্রামের নিমাঞ্চলে পানি ঢুকে পড়ায় ফসল নিমজ্জিত হয়েছে।
এলাকাবাসী জানায়, টানা কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে আত্রাই এবং গুড় নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে এবার চলনবিলে প্রবেশ করছে বর্ষার পানি। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে এই অঞ্চলের প্রায় শতাধিক কৃষক। বোরো ধান ঘরে তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে চলনবিলের কৃষকদের।
বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় পানি বৃদ্ধির কারণে জোড় মলিকা, নিংগইন এবং পাটকোল ব্রিজের নিচ দিয়ে চলনবিলের ফসলি জমিতে প্রতিনিয়ত পানি প্রবেশ করছে। এতে নিংগইন, বালুভরা, হাসপুকুরিয়া, শেরকোল, তেলীগ্রাম, ভাগনাগরকান্দি মাঠের বোরো ধান ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া উপজেলার নূরপুর, ভাগনাগরকান্দিসহ বেশ কিছু এলাকায় পানিতে তলিয়ে গেছে বোরো ধান। হাটু পানির ভিতর থেকে ধান কাটছে কৃষকরা।
নিংগইন এলাকার কৃষক আলহাজ্ব আশকান আলী জানান, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তিনি জোড়মলিকা বিলে ১৫ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষাবাদ করেছেন। হঠাৎ নদীর পানি বিলে প্রবেশ করায় প্রায় শতাধিক কৃষক আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়েছে।
আরেক কৃষক জব্বার আলী বলেন, যেভাবে বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে, তা চলতে থাকলে চলনবিলের সকল ধান তলিয়ে যাবে। বছরে একটি মাত্র ফসল, তাও যদি তলিয়ে যায় তাহলে সন্তান নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে।
এদিকে সোমবার নদীর পানি যাতে বিলে ঢুকতে না পারে সেজন্য সকালে খবর পেয়ে জোড় মলিকা, নিংগইন এবং পাটকোল এলাকায় জরুরি ভাবে মাটি দিয়ে বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করে উপজেলা প্রশাসন। ইতোমধ্যেই বাঁধগুলোর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে।
বুধবার সকালে বাঁধগুলো সরজমিনে পরিদর্শন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মাদ নাজমুল আহসান।
তিনি বলেন, চলনবিলে পানি ঢুকে পড়লেও ফষল তলিয়ে যায়নি। তবে অনেক স্থানে নৌকায় করে ধান কাটতে হচ্ছে।
আগামী তিন চারদিন আবহাওয়া ভাল থাকলে নদীর পানি কমে যাবে। তখন ফসলের আর কোনো ক্ষতি হবে না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আত্রাই নদীতে ঢলের পানি উপচে চলনবিলে প্রবেশের চেষ্টা করছিল। কিন্তু বাঁধ দেওয়ার কারণে এখন আর প্রবেশ করছে না। তবে ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকলে চলনবিলে পানি ঢুকে ফসল নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।এ কারণে কৃষকদের যত দ্রুত সম্ভব ধান কেটে ঘরে তোলার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, এবার চলনবিলের সিংড়ায় ৩৭ হাজার ২শ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। আর এই উপজেলা থেকে ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে দুই লাখ মেট্রিক টন।