অসময়ের বন্যায় তলিয়ে গেছে হাওরাঞ্চলের ফসলি জমি। মারা গেছে হাজার হাজার মেট্রিক টন মাছ। তবে মাছের মড়কের এ হিসাব কিসের ভিত্তিতে করা হয়েছে তা জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে তা কে পরিমাপ করেছেন তাও জানতে চেয়েছেন তিনি।
তবে বৈঠকে তাৎক্ষণিক এ প্রশ্নের কোনো সঠিক উত্তর পাননি প্রধানমন্ত্রী। এ নিয়ে মন্ত্রীদের মধ্যে খোসগল্প হয়েছে, হয়েছে হাসিঠাট্টাও (হাসাহাসিও)।
সোমবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকের পর এক অনির্ধারিত আলোচনায় একজন সিনিয়র মন্ত্রী হাওরের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়াদি নিয়ে কথা বলেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব প্রশ্ন করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বৈঠকে উপস্থিত মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বৈঠকে হাওরের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিবদের দেয়া পরিসংখ্যান নিয়েও আলোচনা হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, মন্ত্রী-সচিবদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখ করে নিউজ ছাপান হয়েছে।
‘হাওরে আকস্মিক বন্যায় ক্ষতি হয়েছে এটা ঠিক, কিন্তু ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিয়ে আনুমানিক বা ভুল তথ্য দেয়া উচিৎ নয়।’
তিনি বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে আমরা প্রচুর সাহায্য দিচ্ছি, এটাও প্রচার করার ব্যবস্থা করেন।’
এছাড়া ভারতের ইউরেনিয়াম খনি থেকে বাংলাদেশের হাওরাঞ্চলে ইউরেনিয়াম ছড়িয়ে পড়ছে- পত্রিকায় প্রকাশিত এ খবর নিয়েও হাসাহাসি করেন মন্ত্রিরা।
তারা এ সময় বলেন, ভারত থেকে ইউরেনিয়াম এলে তো বাংলাদেশের জন্যই ভালো। কারণ ইউরেনিয়ামের যে মূল্য, তাতে তা সংগ্রহ করতে পারলে বাংলাদেশই লাভবান হবে।
এর আগে, রোববার সচিবালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাকসুদুল হাসান খান বলেন, হাওরে বন্যায় মোট এক হাজার ২৭৬ মেট্রিক টন মাছ নষ্ট হয়েছে। সেই সঙ্গে মারা গেছে তিন হাজার ৮৪৪টি হাঁস।
ওই সময় কৃষি সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ্ বলেন, হাওরে দুই লাখ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। যেখান থেকে ছয় লাখ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যেত।
প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে হাওর এলাকায় পানিবন্দি মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের নির্দেশনা দেন। একই সঙ্গে দুর্গতদের জন্য ত্রাণসহায়তা ও পুনর্বাসনে আরও বেশি তৎপর হওয়ারও নির্দেশ দেন তিনি।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের জানান, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, হাওর অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পুনর্বাসনের জন্য যা যা করা প্রয়োজন সব পদক্ষেপ যেন নেয়া হয়। ত্রাণের কার্যক্রম আরও জোরদার করারও নির্দেশ দেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, হাওর এলাকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ শুরু হওয়ার পর থেকে সরকার যেভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে, ইতোমধ্যে এর সুফল সেখানকার মানুষ পেতে শুরু করেছে। শুধু সেখানকার মানুষ জানলেই হবে না, সহায়তার বিষয়গুলো গণমাধ্যমে যাতে ফলাও করে প্রচারিত হয় সেজন্য গণমাধ্যমের মালিক-কর্মীদের প্রতি অনুরোধ জানান প্রধানমন্ত্রী।