২২ ঘণ্টাতেও উদ্ধার হয়নি এমভি গ্রীন লাইন

২২ ঘণ্টাতেও উদ্ধার হয়নি এমভি গ্রীন লাইন

বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া সংলগ্ন কীর্তনখোলা নদীতে ডুবে যাওয়া এমভি গ্রীন লাইন-২ ও কয়লা বোঝাই কার্গোটি দুর্ঘটনার ২২ ঘণ্টা পরও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

রোববার সকালে উদ্ধারকারী নৌ-যান নির্ভীক ঘটনাস্থলে এসে ডুবন্ত এমভি গ্রীন লাইন-২ ও কয়লা বোঝাই কার্গোকে টেনে তোলার চেষ্টা চালায়। তবে সব চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।

উদ্ধারকারী নৌ-যান নির্ভীকের কমান্ডার রফিকুল ইসলাম জানান, উদ্ধারকারী নৌ-যান নির্ভীকের উত্তোলন ক্ষমতা ২৫০ টন। তবে এমভি গ্রীন লাইন-২ এর ওজন ৬৪৫ টন। তার উপর পানি ঢুকে ওজন অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে।

অন্যদিকে কার্গোটিতে থাকা কয়লার ওজনই ৫০০ টন। এছাড়া কার্গোর ওজন আরও ৫০০ টন হবে। ফলে দু’টি নৌ-যানকেই উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তবে তল্লাশি চালিয়ে কয়লা বোঝাই কার্গোটি নদীর ৩০ ফুট গভীরে সনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে।

নির্ভীকের কমান্ডার রফিকুল ইসলাম আরো জানান, এমভি গ্রীন লাইন-২ এর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা নিজস্ব ব্যবস্থায় পাম্প দিয়ে পানি সেচ দিয়ে ফেলে অন্য নৌ-যান দিয়ে টেনে চর থেকে নামাবেন বলে জানিয়েছেন।

এর আগে গতকাল শনিবার বিকেলে কীর্তনখোলা নদীতে যাত্রীবাহী গ্রিনলাইন-২ নৌ-যানের সঙ্গে বালুবাহী কার্গোর মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। এতে বালুবাহী কার্গোটি ডুবে গেলেও কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কার্গোটি ঢাকা থেকে বরিশালের দিকে আসছিল। অপরদিকে প্রায় ৪ শতাধিক যাত্রী নিয়ে বরিশাল আধুনিক নৌ বন্দর থেকে বিকেলে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায় গ্রিনলাইন-২ নৌ-যান। পরে কীর্তনখোলা নদীর চরবাড়িয়া পয়েন্টে এলে বালুবাহী কার্গোর সঙ্গে গ্রিনলাইনের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।

এতে কয়েক মিনিটের মধ্যে কার্গোটি ডুবে যায় এবং গ্রীন লাইন-২ এর তলা ফেটে যায়। তবে তাৎক্ষণিকভাবে তীরের ধারে নেয়ায় প্রায় ৪ শতাধিক যাত্রী প্রাণে বেঁচে গেছেন।

বালুবাহী কার্গোটিতে ৬ জন শ্রমিক ছিলেন। তারা কোনোভাবে সাঁতরে তীরে ওঠেন। অন্যদিকে গ্রীন লাইন-২ লঞ্চের সামনের নিচের অংশের তলা ফেটে পানি উঠতে শুরু করে। যাত্রীরা আতঙ্কে ছোটাছুটি করেন। কোনোভাবে চরে ওঠে রক্ষা হয় যাত্রীদের।

ঘটনার সময় এমভি গ্রীন লাইন-২ এ থাকা মো. ফারুক হোসেন নামে এক যাত্রী বলেন, চালকের বেপরোয়া মনোভাবের কারণে আজকের এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। দূর থেকেই দেখা যাচ্ছিল কার্গোটি এগিয়ে আসছে। এরপর এমভি গ্রীন লাইনের চালক তা তোয়াক্কা না করে বা গতি না কমিয়ে সে দিকেই চালাচ্ছিল। চালক যদি গতি কমিয়ে নৌযানটি অন্যদিকে ঘুরাত তাহলে দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হতো।

বিআইডব্লিউটিএর বরিশালের নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপ-পরিচালক আজমল হুদা মিঠু বলেন, কারও না কারও অবহেলার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। কেননা দিনের বেলা আকাশ পরিষ্কার ছিল আর নৌপথও ছিল স্বাভাবিক। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। কারও অবহেলা পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে শনিবার রাতে এমভি গ্রীন লাইন নৌ-যান ও কার্গোর সংঘর্ষের ঘটনায় ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক ড. গাজী সাইফুজ্জামানের নির্দেশে ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটিকে আগামী ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

তদন্ত কমিটির প্রধান হচ্ছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. জাকির হোসেন। এছাড়াও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, নৌ-পুলিশের প্রতিনিধি, বিআইডব্লিউটিএর একজন প্রতিনিধি ও ফায়ার সার্ভিসের একজন প্রতিনিধিসহ ৫ জন সদস্য রয়েছেন।

জেলা প্রশাসক ড. গাজী সাইফুজ্জামান জানান, তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন, যাত্রী ও প্রতক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য নেয়াসহ দুর্ঘটনার কারণ, কারো অবহেলা ছিল কি না, আগামীতে এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে কী করণীয় সে সম্পর্কে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করতে বলা হয়েছে।

জেলা সংবাদ