রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শিল্পী লাকী আখন্দের দাফন সম্পন্ন

রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শিল্পী লাকী আখন্দের দাফন সম্পন্ন

রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বীর মুক্তিযোদ্ধা, সুরকার, সংগীত পরিচালক ও জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী লাকী আখন্দের দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জাতির শ্রদ্ধানুষ্ঠানে এ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শিল্পীকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষে একটি চৌকষ দল তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করে।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জাতির শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। সেখান থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে বাদ জোহর দ্বিতীয় নামাজে জানাজা এবং মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তৃতীয় জানাজা শেষে তাকে সেখানে দাফন করা হয়। এর আগে শনিবার সকালে পুরান ঢাকার আরমানিটোলা মসজিদের সামনের মাঠে শিল্পীর প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
অসংখ্য জনপ্রিয় গানের শ্রষ্টা এ শিল্পীর মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শনিবার সকাল ১১টার নিয়ে আসা হয়। সর্বস্তরের মানুষ তাকে সেখানে শ্রদ্ধা জানান।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তার শ্রদ্ধানুষ্ঠানে শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গণসহ সর্বস্তরের মানুষের ঢল নামে। সবাই ফুলেল শ্রদ্ধায় সিক্ত করেন এ মুক্তিযোদ্ধা শিল্পীকে। সেখানে তার স্মরণে দাাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। খোলা হয় শোক বই।
শিল্পীর মরদেহে রাষ্ট্রীয় সম্মানের পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিলসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) পক্ষে দলের সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এবং সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপিসহ নেতৃবৃন্দ শ্রদ্ধা জানান।
শিল্পীর মরদেহে আরো শ্রদ্ধা জানান সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পেরেশনের মেয়র আনিসুল হক, শিল্পী খুরশিদ আলম, গীতিকার ও সুরকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার, শিল্পী ফাহমিদা নবী, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের পক্ষে সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, হাসান আরিফ, আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সভাপতি আহকামউল্লাহ প্রমুখ।
বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ মিউজিশিয়ান্স, প্রাচ্যনাট, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশান, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ (বিএসএমএমইউ) বিভিন্ন সংগঠন শ্রদ্ধা জানায়। পরিবারের পক্ষ থেকে মেয়ে মাম্মিন্তি নূর আখন্দ ও ছেলে সভ্যতা আখন্দ চোখের জলে তাদের পিতাকে শেষ বিদায় জানান।
এ গুণী শিল্পীর অকাল মৃত্যুতে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, তিনি যেমন গান দিয়ে মানুষের মন জয় করেছিলেন, তেমনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েও দেশবাসীর মন জয় করেছিলেন। এ শিল্পীর জনপ্রিয় গানগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হবে বলেও তিনি জানান।
আসাদুজ্জামান নূর বলেন, লাকী একজন শক্তিমান শিল্পী। তার মৃত্যু নেই। তিনি খাঁটি বাঙালী ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হৃদয়ে ধারণ করে তিনি আজীবন দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করে গেছেন। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক বলেন, লাকী আকন্দ তার কর্মের মধ্যদিয়েই বেঁচে থাকবেন।
এ গুণী শিল্পী দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুসের ক্যানসারে ভুগছিলেন। সম্প্রতি হাসপাতাল থেকে পুরান ঢাকার বাসায় ফিরে আসেন। কিন্তু শুক্রবার হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে মিটফোর্ড হাসপাতালে নেয়া হয় এবং সন্ধ্যায় তিনি মারা যান।
মুক্তিযোদ্ধা এই শিল্পীর চিকিৎসায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার তহবিল থেকে সহায়তা করেন। এছাড়া ‘ট্রিবিউট টু স্যার লাকী আখান্দ্’ শিরোনামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে গত বছর অনুষ্ঠিত হয় দু’দিনব্যাপী কনসার্ট।
লাকী আখন্দের জন্ম ১৯৫৫ সালে, পুরান ঢাকায়। মাত্র ১৪ বছর বয়সে তিনি এইচএমভি পাকিস্তানের সুরকার এবং ১৬ বছর বয়সে এইচএমভি ভারতের সংগীত পরিচালক হিসেবে নিজের নাম যুক্ত করেন। ১৯৭১ সালে তিনি স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রে যোগ দেন।

বাংলাদেশ