রেলমন্ত্রীর পদ থেকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের পদত্যাগের ঘোষণা ‘বাংলাদেশের রাজনীতিতে মাইল ফলক’ হয়ে থাকবে বলে মনে করেন ক্ষমতাসীন দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহাবুব-উল-আলম হানিফ।
সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে সুরঞ্জিত সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত জানানোর পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় হানিফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত কোনো রকম অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন- তা আমরা বিশ্বাস করতে চাই না।”
রেলভবনে জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে সুরঞ্জিত বলেন, “পুরো দায় দায়িত্ব আমার, দল বা সরকারের নয়।”
হানিফ বলেন, “রেলমন্ত্রীর পদ থেকে তার এই পদত্যাগ রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে। অতীতে আর কোনো রাজনীতিবিদ ব্যর্থতার দায়ভার নিজের কাঁধে নিয়ে এভাবে পদত্যাগ করেন নাই।”
গত ৯ এপ্রিল রাতে সুরঞ্জিতের এপিএস ওমর ফারুক তালুকদারের গাড়িতে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাওয়ার ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর থেকে তা নিয়ে শোরগোল শুরু হয়। গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ওই রাতে ফারুকের সঙ্গে ৭০ লাখ টাকা পাওয়া যায়। পূর্বাঞ্চল রেলের জিএম ইউসুফ আলী মৃধা ও তার কম্যান্ড্যান্ট এনামুল হকও সে সময় ওই গাড়িতে ছিলেন।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ইউসুফ আলী মৃধা ও কমান্ডেন্ট এনামুল হককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। চাকরিচ্যুত করা হয় ওমর ফারুক তালুকদারকে। এছাড়া ওমর ফারুক ও তার স্ত্রী মারজিয়া ফারহানার ব্যাংক হিসাব (অ্যাকাউন্ট) জব্দ করার নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
রোববার রাতে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে আসার পর সোমবার এই সংবাদ সম্মেলন ডাকেন সুরঞ্জিত।
প্রায় ২০ মিনিটের বক্তব্যে তিনি বলেন, “ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততা না থাকার পরও গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে আমি দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিলাম।”
দল, নেত্রী (শেখ হাসিনা) বা অন্য কারো জন্য বোঝা হতে চান না- এমন মন্তব্য করে বিমর্ষ সুরঞ্জিত বলেন, “রাজনীতিতে এটা আমার যাত্রাবিরতি। আমি তদন্তে নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে আবার ফিরে আসব।”
এ বিষয়ে হানিফ বলেন, “তদন্ত চলছে। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রমাণের জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।”
পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়ে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ‘রাজনৈতিক দক্ষতার’ পরিচয় দিয়েছেন বলেও মনে করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
স্বাধীনতার পর থেকে অধিকাংশ সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সুরঞ্জিত শেখ হাসিনার গত সরকারের সময়ে মন্ত্রী মর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে গত ২৮ নভেম্বর প্রথমবারের মতো রেলমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন তিনি।