বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যকার দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক আরও সুসংহত করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে পারস্পরিক স্বার্থে বিদ্যুৎ ও পানিসম্পদ খাতে সহযোগিতা জোরদারে দ্বি-পাক্ষিক ও উপ-আঞ্চলিকভাবে কাজের বিষয়ে সম্মত হয়েছে দুই দেশ।
বৃহস্পতিবার ভুটানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তিনদিনের রাষ্ট্রীয় সফরের যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়, এ অঞ্চল ও বিশ্বের বৃহত্তর শান্তি, সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য দুই দেশ একত্রে কাজ করার ব্যাপারে সম্মত হয়েছে।
২৬ দফা সংবলিত ওই বিবৃতিতে বলা হয়, দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকে পারস্পরিক স্বার্থে বিদ্যুৎ, পানিসম্পদ ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার সুযোগ গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভুটানের প্রধানমন্ত্রী দাসো তেরেসিং তোবগে।
আঞ্চলিক কাঠামোয় নীতিগত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে জলবিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে প্রস্তাবিত ত্রি-পাক্ষিক সমঝোতা স্মারকের (এমওইউ) বিষয়টি স্বাগত জানান উভয় নেতা। পরবর্তীতে তিনটি দেশের নেতারা একত্রিত হলে এ বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের আশা প্রকাশ করেন তারা।
আঞ্চলিক যোগাযোগের জন্য বিবিআইএন মোটর ভেহিকল এগ্রিমেন্টের গুরুত্ব অনুধাবন করে দ্রুত এ চুক্তি বাস্তবায়নে আগ্রহের কথা জানান দুই প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে বিদ্যমান ঐতিহাসিক সম্পর্ক জোরদার এবং বোঝাপড়ার কথা স্মরণ করেন দুই প্রধানমন্ত্রী। এ সম্পর্কের সূচনা করেছিলেন ভুটানের রাজা জিগমে দরজি ওয়াংচুক এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দুই নেতা চমৎকার দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কে সন্তোষ ব্যক্ত করে ভ্রাতৃপ্রতীম দুটি দেশের পারস্পরিক স্বার্থে দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক আরো সংহত করার ব্যাপারে নিজেদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, দুই প্রধানমন্ত্রী জলবিদ্যুৎ, পানিসম্পদ, ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ ট্যুরিজম, সংস্কৃতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইসিটি ও কৃষিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
উভয়পক্ষ বিমসটেক, সার্ক ও জাতিসংঘ এবং অন্যান্য সব প্রধান ইস্যুতে তাদের মতামত ও অবস্থানসহ অন্যান্য আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক ফোরামে সহযোগিতার বিষয় মতবিনিময় করেন বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর সফরে বাংলাদেশ ভুটানে আরও তৈরি পোশাক, সিরামিক, ওষুধ, পাট, পাটজাত ও চামড়াজাত পণ্য, প্রসাধন সামগ্রী ও কৃষিপণ্য রফতানির প্রস্তাব দেয়। এসব পণ্য বাজারজাতকরণ ও দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ অধিকতর সম্প্রসারণে সম্মত হয়েছে ভুটান।
বাংলাদেশে গুঁড়া চুন (লাইম স্টোন পাউডার), জিপসাম ও ক্যালসিয়াম কার্বোনেট রফতানিতে শুল্ক ছাড় সমস্যা নিষ্পন্নে তামাবিল-ডাউকি ও নাকুয়াগং-দালু, গোবরাকুরা ও কড়াইতলি-গাসুয়াপারান্দ স্থলবন্দর চালুসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানানে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী।
প্রাচীন সংস্কৃতি ও উভয় দেশের জনগণের মধ্যকার সম্পর্কের কথা স্মরণ করে পর্যটনের সম্ভাবনাকে সর্বোচ্চ কাজে লাগাতে এখাতে সহযোগিতার জন্য দুই দেশ অভিন্ন মত পোষণ করে।
যৌথ বিবৃতিতে দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি সম্প্রসারণ ও উভয় দেশের মধ্যকার বন্ধুত্ব আরও সুসংহত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশের আইসিটি খাতের অগ্রগতির প্রশংসা করেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী। উভয় নেতা আইসিটি খাতে সহযোগিতায় একমত হন।
সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি প্রদানে ভুটানের অমূল্য সমর্থনের কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন। তিনি ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের উল্লেখ করে বলেন, ভুটান ওই সময় বাংলাদেশের মানুষের দুর্ভোগ ও দুর্দশায় সহানুভূতি ও সহমর্মিতা প্রকাশ করেছিল।
ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ‘সোনার বাংলা’ ভিশনের রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুপ্রেরণাদায়ী নেতৃত্বের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘বর্তমানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সোনার বাংলার এ ভিশন বাস্তবায়িত হচ্ছে।’ ভুটানের রাজা ও রানী এবং প্রধানমন্ত্রীকে তাদের সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিবৃতিতে বলা হয়, তেসেরিং তোবগে চলতি বছরের ১ থেকে ৫ এপ্রিল ঢাকায় ১৩৬তম আইপিইউ অ্যাসেম্বলির সফল আয়োজনের জন্য শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানান।
দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী সংসদ সদস্যদের মধ্যে নিয়মিত সফর বিনিময়ের কথা সন্তোষের সঙ্গে উল্লেখ করে তাদের মধ্যকার পারস্পরিক যোগাযোগ আরও বৃদ্ধিতে উৎসাহ প্রদান করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভুটানে অনুষ্ঠিত ‘অটিজম অ্যান্ড নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার’ শীর্ষক তিনদিনের এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগদান শেষে বৃহস্পতিবার সকালে দেশে ফেরেন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ভুটান ও বাংলাদেশের মধ্যে উচ্চপর্যায়ে সফর বিনিময়ের ঐতিহ্য এবং উভয় দেশের বন্ধুত্ব সমুন্নত ও জোরদার করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ সফর ছিল খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।