ভারতীয় গরুর অভাবে অচল যাত্রাপুর হাট

ভারতীয় গরুর অভাবে অচল যাত্রাপুর হাট

দেশের উত্তরাঞ্চলের একেবারে সীমান্ত ঘেষা জেলা কুড়িগ্রাম। দুর্ভিক্ষ কিংবা মঙ্গাকে জয় করে এ জনপদের মানুষ ক্রমেই এগিয়ে যাচ্ছে। এ জেলার সঙ্গে ভারতের প্রায় ২৭০ কি. মি. সীমান্ত। ভারতের সীমান্ত হয়ে অবৈধভাবে আসা হাজার হাজার গরু, মহিষ, ছাগল করিডোরের মাধ্যমে বৈধতা পায়।

এসব ভারতীয় গবাদিপশুকে ঘিরে সীমান্তবর্তী কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হওয়ার পাশাপাশি পশুর হাটের ইজারা মূল্য বেড়ে যায় কয়েক গুণ। কিন্তু প্রশাসনিক নানা জটিলতায় ভারতীয় গবাদি পশু আসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সীমান্তবর্তী যাত্রাপুর হাট কার্যত অচল হয়ে পড়েছে।

গত ১৪২৩ বঙ্গাব্দের হাট ইজারা মূল্য ছিল চার কোটি ৫৩ লাখ টাকা। শুধুমাত্র ভারতীয় গরু না আসায় ইজাদারের লোকসান হয় প্রায় তিন কোটি টাকা। ফলে চলতি ১৪২৪ বঙ্গাব্দে ৭ দফা ইজারা দরপত্র আহ্বান করলেও সর্বোচ্চ দর উঠেছে মাত্র ৫৩ লাখ টাকা। যা গত বছরের চেয়ে চার কোটি টাকা কম।

অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রশাসনিক ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় কুড়িগ্রাম জেলার ঐতিহ্যবাহী যাত্রাপুর হাটের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ভারতীয় গরু আমদানি শূন্যের কোঠায়। হাটে পেরিফেরির মাধ্যমে সীমানা নির্ধারণ না করা, হাটের পর্যাপ্ত জায়গা না থাকা এবং নিয়ম-নীতি লংঘন করে নতুন নতুন বিট/খাটাল স্থাপনের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে হাট ইজারাদারকে লোকসান গুণতে হয় কয়েক কোটি টাকা। এ সংক্রান্ত একাধিক অভিযোগ জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর দাখিল করেও সুফল মেলেনি।

যাত্রাপুর হাটের ইজারাদার ওমর ফারুক জানান, ভারতীয় গরু নির্ভর এ হাটের ১৪২৩ বাংলা সনের ইজারা মূল্য ছিল (১৫ ভাগ ভ্যাট এবং পাঁচ ভাগ আয়করসহ) চার কোটি ৫৩ লাখ ৩৩ হাজার ৩৩১ টাকা। কিন্তু শুরু থেকে হাটের পেরিফেরি (সীমানা নির্ধারণ) করে না দেয়ায় প্রায় ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে হাটের জন্য তিন একর জমি ভাড়া নিতে হয়।

এছাড়া সিমানা নির্ধারণ করে না দেয়ার জটিলতার সুযোগ নিয়ে প্রায় সাড়ে চারশত দোকানের টোল তোলা সম্ভব হয়নি। একই সঙ্গে স্থানীয় দোকান-পাট থেকে খাজনা আদায় করা যায়নি। এতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা। একই সঙ্গে গত বন্যায় হাট ডুবে যাওয়ায় এবং ভাঙনে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

ভারতীয় গরু নির্ভর হওয়ায় যাত্রাপুর হাটে সরকার বিট চালু করে। অথচ নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে নতুন করে এ হাটের চারপাশে ভারতীয় আন্তর্জাতিক সীমানা সংলগ্ন দই খাওয়ার চর, নারায়াণপুরে বিট/খাটাল স্থাপন করা হয়। ফলে এসব বিটের গবাদি পশু আর যাত্রাপুর হাটে আসতে দেয়া হয় না। যাত্রপুর হাটে আসার পথে কালিয়ার চর ও চিতুলিয়া নামক স্থানে শাখা নদী পারাপারে কৃষকদের কৃষি পণ্য ও গবাদি পশু প্রতি টোল আদায়ে বাধ্য করে এবং যাত্রাপুর হাটে যেতে একটি চক্র বাধার সৃষ্টি করে। ফলে তারা আর যাত্রাপুর হাটে আসতে পারে না।

যাত্রাপুর হাটের অন্যতম অংশীদার আব্দুল জব্বার জানান, স্থানীয় প্রশাসন হাট ইজারার মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা আয় করলেও ব্যবসায়ীদের ন্যূনতম স্বার্থ রক্ষা করেনি। বরং সরকারি বিধিমালা লঙ্ঘন করে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেছে। নতুন বিট স্থাপনে স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়মের আশ্রয় নেয়া হয়েছে। এ কারণে আমরা যাত্রাপুর হাট ইজারার মেয়াদ বৃদ্ধিরও আবেদন করেছি। তা না হলে এ হাটের সাথে সম্পৃক্ত শতাধিক ব্যবসায়ী মারাত্মক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে।

এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিন আল পারভেজ জানান, ইজারাদারের পক্ষ থেকে আবেদন করা হলেও আইনত মেয়াদ বৃদ্ধি করার কোনো সুযোগ নেই। তবে বাজারের পেরিফেরি (সীমানা নির্ধারণ) ও দোকানদারদের খাজনা প্রদানের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।

জেলা সংবাদ