৩০ হাজার ৯৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে কুমিল্লা হয়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামের মধ্যে ডাবল ট্রাক স্ট্যান্ডার্ড গেজ লাইন নির্মাণ করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে । ২০১৯ সালে এ উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে রেলপথে ঢাকা-চট্টগ্রামের দূরত্ব কমবে ৯০ কিলোমিটার। ফলে তখন চট্টগ্রাম থেকে মাত্র দুই ঘণ্টায় ঢাকা পৌঁছানো যাবে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম বাংলাদেশ রেলওয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রুটের একটি। এ রুটের দৈর্ঘ্য ৩২০ দশমিক ৭৯ কিলোমিটার। বর্তমানে ঢাকা থেকে টঙ্গী-ভৈরব বাজার-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-কুমিল্লা হয়ে চট্টগ্রামে পৌঁছে। ফলে ভ্রমণে অনেক বেশি সময় লাগছে।
ঢাকা থেকে কুমিল্লার লাকসাম হয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত হাইস্পিড ট্রেন লাইন নির্মিত হলে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরত্ব ও প্রায় দুই ঘণ্টা সময় কমবে। তখন ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের দূরত্ব দাঁড়াবে ২৩০ কিলোমিটার। এ পথে ট্রেন চলবে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতিতে।
রেল মন্ত্রী মো. মুজিবুল হক শনিবার বলেন, সাধারণ মানুষের বৃহত্তর সুবিধায় সরকার বাংলাদেশ রেলওয়ের (বিআর) সেবা বাড়াতে অনেকগুলো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার জনগণের জন্য এই জনপ্রিয় সরকারি পরিবহন ব্যবস্থা সহজতর করতে আন্তরিক হওয়ায় বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশ রেলওয়ের সেবার মান উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আনুমানিক ৩০ হাজার ৯৫৫ কোটি ৭ লাখ টাকার এই প্রস্তাবিত বিশাল প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বিআর। প্রকল্প সহায়তা হিসেবে চীন থেকে আসবে ২৪ হাজার ৭৬৪ কোটি ৬ লাখ টাকা।
২০১৯ সালের সম্ভাব্য সময়ের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করতে চায়না রেলওয়ে ইইয়াম ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ কো. লি. এর সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ডেভেলপমেন্ট অব প্রজেক্ট প্রপ্রোজাল (ডিপিপি) অনুমোদন করেছে। চীন সরকারের আর্থিক সহায়তায় এ প্রকল্প বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)।
সরকারি পরিবহন হিসেবে রেলওয়েকে একটি সহজ পরিবহনে রূপান্তরিত করতে রেলওয়ে লাইন, কোচ, লোকোমোটিভ ও অন্যান্য উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করা হবে।
মন্ত্রী চলমান ৪৬টি প্রকল্পের উল্লেখ করে বলেন, এসব প্রকল্পের কাজ শেষ হলে রেলওয়ের অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হবে।
স্ট্যান্ডার্ড গেজ নাকি ব্রড গেজ
তবে নতুন এ রেলপথ স্ট্যান্ডার্ড গেজে নির্মাণ করার প্রস্তাবের অনেকেই সমালোচনা করছেন। বর্তমানে বাংলাদেশে দুই ধরনের রেললাইন প্রচলিত রয়েছে। এগুলো হলো মিটার গেজ ও ব্রড গেজ। নতুন লাইন স্ট্যান্ডার্ড গেজে তৈরি করা হলে তা আরেক ধরনের হবে। এতে স্ট্যান্ডার্ড গেজের ইঞ্জিন ও বগি চালাতে হবে। ফলে মিটারগেজ ও ব্রডগেজ এ লাইনে চলবে না। এতে উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে বা দেশের অন্যান্য অংশের সঙ্গে এ লাইন ব্যবহার করে সরাসরি চট্টগ্রাম পর্যন্ত রেল পরিচালনা করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।
উল্লেখ্য, মিটার গেজ লাইন প্রস্থে ৩ ফুট ৩ ইঞ্চি প্রায় (১০০০ মিলিমিটার), স্ট্যান্ডার্ড গেজ লাইন ৪ ফুট ৮.৫ ইঞ্চি (১৪৩৫ মিলিমিটার) ও ব্রড গেজ লাইন ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি (১৬৭৬ মিলিমিটার)।
এক্ষেত্রে ঢাকা-চট্টগ্রাম নতুন রেলপথে স্ট্যান্ডার্ড গেজের বদলে ব্রড গেজ ব্যবহার করলে তাতে দেশের অন্যান্য অংশের রেলের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করা সম্ভব হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। এছাড়া সেটি সম্ভব না হলে ব্রড গেজের সঙ্গে স্ট্যান্ডার্ড গেজ লাইন একত্রে দেয়া যায় কি না, তাও খতিয়ে দেখতে অনুরোধ করেছেন রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা।