৪৬তম স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালন করেনি বাংলাদেশ বার কাউন্সিল! প্রতি বছর রাষ্ট্রের সকল সরকারি-বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা-স্বায়ত্তশাসিত, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন থেকে শুরু করে ব্যক্তিপর্যায়ে দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে পালিত হয়।
প্রতি বছরই দিবসটি গুরুত্বসহকারে পালন করে আইনজীবীদের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ বার কাউন্সিল। জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়। কিন্তু এবার কোনো কর্মসূচি পালিত হয়নি।
বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গে জানা না গেলেও ৫ এপ্রিল বার কাউন্সিলের ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান শ ম রেজাউল করিমের লিখিত একটি অভিযোগপত্র থেকে এটি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
অভিযোগপত্রটি বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান (পদাধিকার বলে) ও রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম-সহ সংগঠনটির ভাইস চেয়ারম্যান ও এক্সিকিউটিভ কমিটি বরাবর লেখা হয়েছে। অভিযোগপত্রে জাড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণেরও অনুরোধ জানানো হয়।
অভিযোগপত্রে শ ম রেজাউল করিম উল্লেখ করেন, ‘বাংলাদেশ বার কাউন্সিল একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্রপতির আদেশ নং- ৪৬/১৯৯৭ মূলে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা লাভ করে। আইন অনুযায়ী গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত বাংলাদেশ বার কাউন্সিল সরকারি বিধিবদ্ধ সংস্থা। এ সংস্থার আইন ও বিধি সরকারের নিয়ম অনুসারে প্রণীত হয়।’
এতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মহান স্বাধীনতা ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যুদয় হয় ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ। সরকার দিবসটি স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। দিবসটি প্রতিপালন রাষ্ট্রের সকল ব্যক্তি, সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের বাধ্যবাধকতাপূর্ণ। বাংলাদেশ বার কাউন্সিল আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রণকারী সর্বোচ্চ সংস্থা- রাষ্ট্রের সকল জাতীয় দিবস উদযাপন করে থাকে যথাযত মযার্দার সঙ্গে। ২০১৭ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপনের সিদ্ধান্তও গ্রহণ করা হয়। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সচিব মো. আনিসুর রহমান (জেলা ও দায়রা জজ) কর্তৃক ২৩ মার্চ, ২০১৭ তারিখে দিবসটি যথাযথভাবে পালনে অফিস আদেশও জারি করা হয়।’
অভিযোগপত্রে শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘বার কাউন্সিলের একজন নির্বাচিত সদস্য হিসেবে আমি উক্ত দিবসে সাভার স্মৃতিসৌধে যাই। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করার পরও বার কাউন্সিলের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সেখানে না পেয়ে মুঠোফোন যোগাযোগ করলে বার কাউন্সিলের কর্মকর্তা নাজমুল জানায়, তাকে প্রশাসন বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে যে, স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে। বিষয়টি আমার নিকট বিস্ময়কর মনে হয়। ফলে সচিব মো. আনিসুর রহমানকে টেলিফোন (মুঠোফোন) করে জানতে পারি যে, তিনি কর্মসূচি বাতিল সংক্রান্ত বিষয় অবহিত নন।’
অভিযোগপত্রে বলা হয়, ‘স্বাধীন বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালন করতে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের পক্ষ থেকে ব্যানার, শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য ফুলের মালাসহ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও অন্যান্যরা সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে যান দীর্ঘদিন ধরে।জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা জানানো তথা স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপনের কর্মসূচি বাতিল করার ঔদ্ধত্য অত্যন্ত গুরুতর বিষয়। বিষয়টি সরকারি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত অবমাননার সামিল। বিষয়টি, রাষ্ট্রের অস্তিত্বের উৎসকে তথা জাতীয় দিবসকে অবজ্ঞা ও অবমাননাপূর্ণ। এহেন ঘটনা, আমাকে হতবাক করেছে।’
অভিযোগে আরও বলা হয়, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় এহেন সিদ্ধান্ত তথা কাজ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বিষয়টি রাষ্ট্রদ্রোহীতার সমতুল্য। বিষয়টি তদন্ত করে ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা অবশ্যক। সে মতে, অনুগ্রহপূর্বক ওই বিষয়ের গুরুত্ব সদয় বিবেচনায় গ্রহণ করে তদন্তপূবর্ক জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।’
বার কাউন্সিলের ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘কাউন্সিলের উপ-সচিব মো. আফজালুর রহমান জানিয়েছিল এবারের অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে।’ তবে কারা বাতিলের সিদ্ধান্ত দিয়েছিল সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি উপ-সচিব আফজালের নিকট থেকেই জানেন।’
বিষয়টি জানতে যোগাযোগ করা হয় বার কাউন্সিলের উপ-সচিব মো. আফজালুর রহমানের সঙ্গে। তিনি এ প্রতিবেদকের প্রতি পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে জানতে চান, ‘কে বলেছে আপনাকে। আপনি কিভাবে জানলেন।’
আমাদের কাছে অভিযোগ রয়েছে বলা হলে আফজালুর রহমান আবার বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি জানি না, আমি তখন ছুটিতে ছিলাম।’
তবে শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে না পেরে একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমি তিনটি আবেদন করেছি। আমি মনে করি এটি বড় ধরনের ঘটনা। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ পেয়েছি। সংস্থার প্রধান হিসেবে এ মুহূর্তে বিষয়টি নিয়ে কোনোকিছু বলার এখতিয়ার আমার নেই। এক্সিকিউটিভ (নির্বাহী) কমিটির সঙ্গে বৈঠকের পর কী কারণে কর্মসূচি বাতিলের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে এবং এর সঙ্গে কারা জড়িত, তা তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’