গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এবং সব ব্যর্থতার দায় কাঁধে নিয়ে রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চাইলেন রেলপথমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।
সোমবার জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী বলেন, “৯ এপ্রিলের ঘটনায় যেহেতু রেলওয়ের লোকজন যুক্ত তাই স্বাভাবিকভাবে দায়টা রেলওয়ের ওপর বর্তায়। তাই আমি রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিতে চাই।”
দুপুর ১২টায় প্রেসব্রিফিং ডাকেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। রেলভবনে প্রবেশ করেন দুপুর ১২টা ৪৮মিনিটে। সভাকক্ষে উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন ১টা ১৩ মিনিটে।
সুরঞ্জিত বলেন, “আমি কারো বোঝা হতে চাই না। দল, সরকার ও প্রধানমন্ত্রীর দায় হতে চাই না। গণতন্ত্র রক্ষায় আমি এ সাহসী সিদ্ধান্ত নিলাম। ৪০ বছরে যে দৃষ্টান্ত নেই সে দৃষ্টান্ত আমি স্থাপন করলাম। গণতন্ত্রের মাত্রাকে আমি প্রসারিত করলাম।”
তিনি বলেন, “বিষ খেয়ে আমি নীলকণ্ঠ হতে চাই।”
“তদন্তে নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে আবার রাজনীতিতে ফিরে আসবো“– ঘোষণা দেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।
পদত্যাগের আগের ধারাবাহিক ঘটনাবলির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “রোববার রাতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে দেখা করতে গিয়েছিলাম। দায়িত্ব থেকে অব্যাহতির অভিপ্রায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানালে তিনি সানুগ্রহ অনুমতি দেন।”
সংবাদ সম্মেলনে সুরঞ্জিত বলেন, “আমি পদত্যাগপত্র প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে দেবো।”
পদত্যাগের কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমার দলের কিছু নেতাসহ সুশীল সমাজ ও অবশ্যই গণমাধ্যমের কর্মীরা মনে করেন সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আমার এ দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়া উচিত।”
তিনি আরও বলেন, “আমার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের বিচারবুদ্ধি ও স্বভাবসিদ্ধ বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী সরে দাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটি একটি রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ, যা আমি গ্রহণ করলাম।”
তিনি বলেন, “গণতন্ত্রের সুবিধাটুকুই সবাই নেয়। কিন্তু দায়িত্ব কেউ নেয় না। আমি দায়িত্ব নিলাম।”
গত ৯ এপ্রিল রাতে ঘটে যাওয়া ঘটনাকে ‘অনিভেপ্রেত’ উল্লেখ করে সুরঞ্জিত বলেন, “জীবন সায়াহ্নে এসে আমি আত্মত্যাগ করলাম। এটা গণতন্ত্র রক্ষায় একটি সাহসী সিদ্ধান্ত।“
তিনি বলেন, “ওই ঘটনায় আমার পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তবে আমার মন্ত্রণালয়ের ঘটণা হওয়ায় এই ব্যর্থতার দায় নিয়ে দায়িত্ব থেকে অব্যহতি নিচ্ছি।”
সেদিনের ঘটনার তদন্ত যুক্তিসংগত সময়ে শেষ হবে বলে আশা করে সুরঞ্জিত বলেন, “এবার তদন্তে নিশ্চয় প্রকৃত ঘটনা উদঘাটিত হবে।”
পদত্যাগী রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে যাননি। সচিবালয়ে মন্ত্রিসভাকক্ষে সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠক হয়।
উল্লেখ্য, ৯ এপ্রিল মন্ত্রীর এপিএস ওমর ফারুক তালুকদারের গাড়িতে অর্থ পাওয়ার ঘটনা ঘটে। ওই সময় গাড়িতে রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (পূর্বাঞ্চল) ইউসুফ আলী মৃধা ও তার নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন রেলওয়ের কমানড্যান্ট এনামুল হক।
রেলওয়েতে নিয়োগ বাবদ ঘুষ হিসেবে পাওয়া ৭০ লাখ টাকাসহ তারা পিলখানা বিজিবি সদর দফতরের প্রধান ফটকে আটক হন। পরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। অভিযোগ ওঠে গাড়িটি রেলমন্ত্রীর বাসার দিকে যাচ্ছিল।
এদিকে এ ঘটনায় গতকাল রোববার রেলওয়ে ভবনে মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত জানান, সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) ওমর ফারুক তালুকদারকে চাকরি অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। রেলের অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (পূর্বাঞ্চল) ইউসুফ আলী মৃধা ও কমানড্যান্ট এনামুল হককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
প্রায় পাঁচ দশকের রাজনৈতিক জীবন সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত গত বছরের ২৮ নভেম্বর রেলমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন। শেখ হাসিনার গত সরকারে তিনি মন্ত্রীর মর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন।
দেড় দশক আগে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া সুরঞ্জিত দেশের প্রথম সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য ছিলেন। পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধন কমিটির কো-চেয়ারম্যানও ছিলেন তিনি। মন্ত্রিত্ব পাওয়ার আগেও তিনি সরকারের কয়েকটি কর্মকাণ্ডের সমালোচনা মূখর ছিলেন। বিশেষ করে মহাজোট সরকারের আমলে শেয়ার কেলেংকারির পরও এবং বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব সালমান এফ রহমানকে শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়ার পর তিনি মন্তব্য করেছিলেন ‘শুটকির বাজারে বেড়াল চৌকিদার’ । আর মন্ত্রী হিগসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর তার মন্তব্য ‘রেলের কালো বেড়াল’ –বিতর্কের জন্ম দেয়।