রাষ্ট্রের তিনটি অর্গানের মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে : প্রধানম

রাষ্ট্রের তিনটি অর্গানের মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে : প্রধানম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অর্গান আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ এবং নির্বাহী বিভাগের মধ্যে সমন্বয় থাকার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটি রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ লেজিসলেটিভ, জুডিশিয়ারি ও এক্সিকিউটিভ- এ তিনটি অঙ্গের মধ্যে একটি সমন্বয় থাকতে হবে এবং একে অপরের সম্পূরক হিসেবেই কাজ করবে।’
তিনি বলেন, ‘একে অপরকে অতিক্রম করবে না, বা এখানে ক্ষমতার শক্তি দেখিয়ে নয়, ক্ষমতা কারো কিন্তু কম নয়। এখন কে কাকে সম্মান করবে এবং কে কাকে করবে না, কে কার সিদ্ধান্ত মানবে আর কারটা নাকচ করবে এই দ্বন্দ্বে যদি আমরা যাই তাহলে কিন্তু একটা রাষ্ট্র সুষ্ঠুভাবে চলতে পারে না।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার রাজধানীর কাকরাইলে সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিদের জন্য নবনির্মিত আবাসিক ভবন উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রকে সুষ্ঠুভাবে চলতে গেলে এই তিনটি অঙ্গকেই যথাযথভাবে তার কর্মপরিকল্পনা চালাতে হবে। সেই সাথে আমি আরেকটু বলব, প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই সকলের কিছু কিছু ক্ষমতা থাকে। সেই ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে আমরা কতটুকু প্রয়োগ করতে পারি, যেটা জনস্বার্থের পক্ষে কতটা করলে জনস্বার্থ ব্যাহত হতে পারে, তিনটি অর্গানের মধ্যে দ্বন্দ্ব হতে পারে- এই বিবেচনাটুকু সকল পক্ষের থাকা উচিত বলে আমি মনে করি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এতে সভাপতিত্ব করেন। গণপূর্ত সচিব মো. শহীদুল্লাহ খন্দকার স্বাগত বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, বিচারপতিবৃন্দ এবং আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বিচারপতিদের জন্য নির্মিত প্রায় দেড় একর জমির ওপর আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত ২০ তলা ভবনের উদ্বোধন করেন। সেখানে ৩৬শ’ বর্গফুটের বেশি আয়তন সম্বলিত ৭৬টি ফ্লাট রয়েছে। ১৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ভবনটিতে বিদ্যুৎ সাবস্টেশন, সোলার সিষ্টেমসহ আধুনিক সব ধরনের আবাসন সুবিধা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী এরপর রাজধানীর রাজউক অ্যাভেনিউতে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের ২৫ তলা বাণিজ্যিক ভবনেরও নামফলক উন্মোচন করেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী এবং জাতির পিতার বিচার সম্পন্ন করে জাতিকে অভিশাপমুক্তকরণে সহযোগিতার জন্য বিচারপতিদের ধন্যবাদ জানান। প্রধানমন্ত্রী এ সময় আইন প্রণয়ন সম্পর্কে বলেন, আমরা হঠাৎ করেই সংসদে কোন আইন পাস করি না। এটা একটি দীর্ঘ পথ পরিক্রমার মধ্যদিয়ে আসে।
তিনি বলেন, একটি আইন যখন মন্ত্রণালয় থেকে কেবিনেট ডিভিশনে আসল, সেখান থেকে আমরা কেবিনেটে বসে নীতিগত সিদ্ধান্ত দেই, প্রথম রিডিংটা ওখানে আমরা করি। এরপর এটি চলে যায় আইন বিভাগে ভেটিংয়ের জন্য। সেখান থেকে ভেটিং হয়ে আবার কেবিনেটে আসার পর সেটাকে আবার আমরা রিডিং দিয়ে অনুমোদন দেই এবং এটা চলে যায় সংসদে। সংসদে বিল যাবার পর সেটার সঙ্গে যদি আর্থিক সংশ্লিষ্টতা থাকে তাহলে সেটি অর্থ মন্ত্রণালয় হয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে যায় এবং তিনি সই করে দেন। সেখানে থেকে সংসদে আসার পর বিল আকারে এটি সংসদে উত্থাপন করা হয়, এ সময় বিরোধী পক্ষের কারো যদি বিলটির বিষয়ে কোন আপত্তি থাকে ওই সময়ই তারা চাইলে আপত্তি দিতে পারেন। এরপর আপত্তি গ্রহণযোগ্য হলে সেটা গ্রহণ করা হয় আবার বিলটি ফেরত পাঠানো হয়। আর যদি আপত্তি গ্রহণযোগ্য না হয় তাহলে সেটি সংসদীয় স্থায়ী কমিটিকে চলে যায় এবং ওই কমিটিতে দীর্ঘদিন এটা আলাপ-আলোচনা হয়। এই আলোচনার সময় সংশ্লিষ্ট কোন মন্ত্রণালয়ের যদি কোন বিভাগ কারো প্রতিনিধির প্রয়োজন হয় তখন তাদেরকে ডেকেও আলোচনা করা হয় এবং সবশেষে ওই কমিটি আবার বিলটি সংসদে উত্থাপন করে। সংসদে উত্থাপনের পর সময় দেয়া হয়- যদি কেউ এখানে কোন সংশোধনী দিতে চান এবং দফাওয়ারি সংশোধন এবং জনমত যাচাইয়ের জন্য। যারা জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাব করবেন তারা সংসদে এর স্বপক্ষে বক্তব্য দেবেন এবং এরমধ্যে দফা ওয়ারি সংশোধনী দিলে সেগুলো গ্রহণ করেই বিলটি পাস করার জন্য এবং বিবেচনার জন্য উত্থাপন করা হয়। তারপর পাস হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা একটা আইন এতগুলো ধাপ পেরিয়ে তারপর পাস করি এবং প্রতিটি আইন যখন পাস করা হয় তখন বিষয়টি নেয়াই হয় জনগণের কোন না কোন স্বার্থে। আর সেই আইনটি যদি আমরা দেখি দু’জন বসে নাকচ করে দিলেন। আর কিছুই করার থাকলো না। তাহলে এতদিন ধরে খাটা-খাটুনি, সরকারি অফিসার থেকে জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে সবাই মিলে যে খাটা-খাটুনি করলো সব কিন্তু ব্যর্থ হয়ে যায়।
শেখ হাসিনা বলেন, এই সব ক্ষেত্রে বোধ হয় আরো বিবেচনার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি। আমি আর একটি কথা বলব, এখানে প্রধান বিচারপতি কিছু প্রসংগ তুলেছেন- তাঁকে অনুরোধ করবো- রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীকে নিয়োগ দেয়া এবং প্রধান বিচারপতিকে নিয়োগ দেয়া। এখানে আমার কিন্তু কোন ক্ষমতা নেই।
তিনি বলেন, সংবিধানেই আছে রাষ্ট্রপতি যখন বিচারপতি নিয়োগ দেন তখন প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শ করবেন। কাজেই এখানে কোনরকম কিছু হলে সেটা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সমাধান করাটাই ভালো। আর এক্ষেত্রে আমাদের কিছু করণীয় থাকলে নিশ্চয়ই আমরা সেটা দেখব। আমি চাই না এ রকম কোন কথা উঠুক যে আমাদের দ্বন্দ্ব বা কোন কিছু আছে। এ ধরনের কথা উঠলে এটি সমগ্র জাতি বা জনগণের জন্য ভালো হবে না। বিচার বিভাগের ইমেজ সেটাও যেমন প্রশ্নবিদ্ধ হবে তেমনি লেজিসলেটিভ এবং এক্সিকিউটিভ সমন্ধেও জনগণ একটা ভুল ধারণা নিয়ে যাবে। যে কোন বিষয় আমি মনে করি আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান করা উচিত এবং সেগুলো বিবেচনা করে দেখা উচিত বলে আমি মনে করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিচারকদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত দিতে হয়, বিএনপি দুই দুইজন বিচারককে বোমা মেরে হত্যা করেছে। গাজীপুর এবং ঝালকাঠিতে, এরকম ঘটনাও ঘটে গেছে বাংলাদেশে এবং তারপর থেকে আমরা শংকিত হই। কাজেই বিচারপতিদের নিরাপত্তার বিষয়টাও আমরা চিন্তা করি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের বিচার বিভাগকে আমরা আধুনিক এবং প্রযুক্তিনির্ভর হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছি। এখানে বসেই ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে যেন বিচারকার্য করা যায়। তিনি বলেন, যারা দুর্ধর্ষ আসামী তাদের আদালতে আনা একটি কঠিন কাজ । ইতোমধ্যেই আসামী ছিনতাইয়ের চেষ্টাও হয়েছে আমরা দেখেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেরাণীগঞ্জের যে জেলখানা করা হয়েছে সেখানে আমি নির্দেশ দিয়েছি আদালতে বিশেষ রুম করে দেয়ার। যেন ঢাকা থেকে বসেও ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে ওখানে বিচারকার্য পরিচালনা করা যেতে পারে। আসামী নিয়ে যেন টানাটানি করতে না হয় সেখানে আইনজীবীরাও থাকবেন সেরকম ব্যবস্থা আমরা করে দিচ্ছি। আর এ ধরনের আধুনিক বিচার ব্যবস্থা বিশ্বে চালু আছে আর আমরা সেটাই অনুসরণ করতে চাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে আরেকটি নতুন যে উৎপাত শুরু হয়েছে জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ, এর হাত থেকে আমরা দেশকে মুক্ত করতে চাই এবং সেজন্য আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
তিনি বলেন, এজন্য আমি আল্লাহর কাছেও শোকরিয়া আদায় করতে চাই এবং আমাদের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আমি ধন্যবাদ জানাই -যে গতকাল ১লা বৈশাখ সেখানে নানা ধরনের হুমকি আমরা পেয়েছিলাম। যদিও তখন কাউকে বলিনি এবং যেহেতু আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষকারী সংস্থা একটা সক্রিয় ছিলেন, যে কারণে সমগ্র বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ উৎসবমুখর পরিবেশে নববর্ষ উদযাপিত হয়েছে। নববর্ষের সঙ্গে ধর্মের কোন বিরোধ নেই। এরসঙ্গে অর্থনীতির একটা সম্পর্ক আছে। পুরাতন হিসাব মিলিয়ে হালখাতা করে আবার নতুন করে হিসাব শুরু হয় এবং দেশে সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষই নববর্ষ পালন করে। প্রধানমন্ত্রী এ সময় তাঁর সরকারের উদ্যোগে নববর্ষে ভাতা প্রদানের প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন।

বাংলাদেশ