ন্যাম ফ্লাটে যেসব এমপি থাকছেন না- তাদের বরাদ্দ বাতিল হতে পারে : প্রধানমন্ত্রী

ন্যাম ফ্লাটে যেসব এমপি থাকছেন না- তাদের বরাদ্দ বাতিল হতে পারে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ জাতীয় সংসদ সদস্যদের ন্যাম ফ্লাট ব্যবহারে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, যেসব সংসদ সদসরা ন্যাম ফ্লাট বরাদ্দ নিয়ে সেখানে থাকছেন না, তাদের বরাদ্দ বাতিল করা হতে পারে। তিনি বলেন, ‘যারা নিজেরা থাকবেন, ন্যাম ফ্লাটে শুধু সেই এমপি’রা থাকবেন। আর যারা নিজেরা না থেকে ন্যাম ফ্লাট নিয়ে রেখেছেন- তাদের নাম কাটা যাবে।’ আর যারা নিজেরা না থেকে লোক রাখবেন- ড্রাইভার রাখবেন, কাজের লোক রাখবেন, কর্মকর্তা রাখবেন, …এভাবে যারা ব্যবহার করবেন সেটা তারা নাখালপাড়ায় আমাদের করে দেয়া যে এমপি হোষ্টেল আছে সেখানে করবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের জন্য নবনির্মত ভবনসমূহের উদ্বোধনকালে প্রধান অথিথির ভাষণে একথা বলেন। তিনি আরো বলেন, যারা নিজেরা থাকবেন, ন্যাম ফ্লাটে শুধু সেই এমপি’রা থাকবেন। আর যারা নিজেরা না থেকে ন্যাম ফ্লাট নিয়ে রেখেছেন- তাদের নাম কাটা যাবে। যারা থাকবেন না, ঠিক আছে নাখালপাড়ায় থাকেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আর যেসব সংসদ সদস্য পরিবার নিয়ে থাকছেন বা নিজেরা থাকছেন তাদের জন্য ন্যাম ফ্লাট বরাদ্দ থাকবে। তাহলে এটার রক্ষণাবেক্ষণও ভালো হবে। এটা আমি পার্টি মিটিংয়ে বলেছিলাম, আপনারা শোনেন নাই। তাই আজকে পাবলিকলি বললাম। আর চিফ হুইপকে বললাম যদি এ বিষয়ে ব্যবস্থা না নেয়া হয় তাহলে তার ব্যবস্থা আমি নেব।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত জাতীয় সংসদের স্পিকারের কাছেও প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে মতামত প্রত্যাশা করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আসম ফিরোজ।
অনুষ্ঠানে সভপতিত্ব করেন গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। আরো বক্তৃতা করেন জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. আব্দুর রব হাওলাদার। গণপূর্ত সচিব মো.শহীদুল্লাহ খন্দকার অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন। জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া, জাতীয় সংসদের হুইপবৃন্দ, জাতীয় সংসদ সচিবালয় এবং সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, সরকারের গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ২১৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের জন্য শেরেবাংলা নগরে এই অত্য্যাধুনিক সরকারি আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। এখানে ২০ তলা করে ৮টি ভবনে কর্মকর্তা-কর্মচারিদের জন্য ৪৪৮টি ফ্লাট নির্মাণ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই যে ভবনগুলো আমরা তৈরি করে দিলাম এ সম্পর্কে আমি একটি বিষয় বলব, এটা যথাযথবাবে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। ‘সরকারি মাল দরিয়া মে ঢাল’ এ মানসিকতা যেন না থাকে। কারণ সরকার কার ? আপনাদের সরকার। টাকাটা দেশের জনগণের টাকা। কাজেই প্রতিটি সরকারি জিনিস যেন সুন্দরভাবে সুরক্ষিত থাকে। নিজের গরজেই এর রক্ষণাবেক্ষণ কাজটা করতে হবে। সেটা যে যেখানেই থাকেন না কেন। যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলে বা চলতে চলতে একটা পানির বোতল ছুঁেড় মারলাম- সেভাবে যেন নোংরা করা না হয়। তিনি বলেন, একটা কল ব্যবহার করতে গিয়ে অসাবধানতাবশত ভেঙ্গেই ফেললাম, ওটাতো সারিয়ে দেয়াই হবে- ফ্যান ছেড়ে রাখলাম, পানির কল ছেড়ে রেখে অপচয় করলাম- এই মানসিকতাটা যেন কারো না থাকে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা পানি শোধন করি আমরা জানি, এক সময় এই পানির জন্য ঢাকা শহরে হাহাকার ছিল, এক লিটার পানি শোধন করতে কিন্তু অনেক টাকা ব্যয় হয়। এজন্য ব্যবহারের পর কলটা ভালোভাবে বন্ধ করে রাখতে হবে। পানি যাতে কোনরকম অপচয় না হয় এ ব্যাপারে সারাদেশের মানুষের প্রতি তিনি আহবান জানান।
বিদ্যুতে অতীতে ঘন্টার পর ঘন্টা লোড শেডিং থাকতো। সেখান থেকে বর্তমানে আমরা দৈনিক ১৫ হাজার ৭শ’ ২৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছি। কাজেই এটা কিন্তু অপচয় করার জন্য নয়।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় অনুষ্ঠানে চিফ হইপ প্রদত্ত বক্তব্যের আলোকে বলেন, ‘চিফ হুইপ বললেন এমপিদের থাকার জায়গা- এগুলো নষ্ট হয়ে গেছে নড়বড়ে হয়ে গেছে ইত্যাদি। কিন্তু এগুলো তো এত তাড়াতাড়ি খারাপ হবার কথা নয়। কারণ এমপি’রা যেমন ন্যাম ফ্লাট নেবেন অথচ কেউ থাকবেন না। আর যাদের সেখানে রাখেন তারা কিন্তু সেখানে থেকে ঐ জায়গাটির কিভাবে যতœ নিতে হবে সে বিষয়ে যতœবান না। এটা হলো বাস্তবতা। আর বারবার নষ্ট হলে এটাকে সারাতে হবে। এরপর থেকে সেখানকার কিছু যদি নষ্ট হয় তবে, এমপিদের কাছ থেকে টাকা কেটে নেব। টাকা কেটে নেব, আমি ছাড়ব না, বলে দিয়েছি।’জিনিস নষ্ট হলে তা পরিবর্তনের সুযোগ থাকলেও ব্যবহারের ক্ষেত্রে আন্তরিকতাটা থাকবে না কেন মর্মে প্রশ্ন উত্থাপন করে সরকার প্রধান বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রী হলেও বিদ্যুতের সুইচটা বেরোবার আগে আমি নিজের হাতেই বন্ধ করি। এ রকম গোসলের সময়ও যেন পানির অপচয় না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখাটাও তাঁর অভ্যাসে পরিণত হয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আমি মনে করি প্রত্যেকটা জিনিস ব্যবহার করলে যতœ নিয়ে করা উচিৎ। এই যতœটা অন্তত আপনারা নেবেন এটা আমি চাই।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী গৃহস্থালী কাজে এবং ব্যক্তিগত কাজে পানির অপচয় বন্ধ করে সাশ্রয়ী হবার জন্য সকলকে পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিজে করতে পারলে আপনারা পারবেন না কেন। আর এখনি সাশ্রয়ী না হলে ভবিষতে পানির জন্য আরো ভোগান্তি পোহাতে হতে পারে বলেও প্রধানমন্ত্রী সকলকে সতর্ক করেন। তিনি বলেন, শুধু ঢাকা শহরে আমাদের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিকে দেখলে হবে না, ঢাকার বাইরে যারা আছেন- জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত যারা আছেন, আমাদের সরকারি-কর্মকর্তা-কর্মচারি যেন ভালভাবে থাকতে পারেন এজন্য আমরা একদম তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত ফ্লাট করে দেব। যেন দিন শেষে কাজ করে ঘরে ফিরে সকলে একটু হলেও আরামে থাকতে পারেন। একটু নিজের মত করে থাকলে পরদিন কাজ আরেকটু বেশি করতে পারবেন এবং দেশটাও আমরা আরো দ্রুত উন্নতি করতে পারব।

বাংলাদেশ শীর্ষ খবর