সিটিং সার্ভিস বন্ধ নিয়ে বিভ্রান্তি

সিটিং সার্ভিস বন্ধ নিয়ে বিভ্রান্তি

রাজধানী ঢাকার গণপরিবহনে সিটিং সার্ভিস বন্ধ নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ বলছেন আজ থেকে এ সার্ভিস বন্ধ, আবার কেউ কেউ বলছেন আজকের পর থেকে। এ নিয়ে যাত্রী, গাড়িচালক ও হেলপারদের মধ্যে বিভ্রান্তি দেখা গেছে। ভাড়া নিয়ে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ছেন তারা। সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

গত ৪ এপ্রিল (মঙ্গলবার) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ সার্ভিস বন্ধ ঘোষণা করে ঢাকা পরিবহন মালিক সমিতি। ওইদিন সমিতির পক্ষ থেকে বিআরটিএ নির্ধারিত চার্ট অনুসরণ করে ভাড়া আদায়ের কথা বলা হয় গণপরিবহনগুলোকে।

পরে এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে বিস্তারিত জানান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, সিটিং সার্ভিসের বিষয়টি নিয়ে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে এতে মালিক ও শ্রমিক উভয়ই খুশি। বাস মালিকদের সরকারের নির্ধারণ করা ভাড়াই নিতে হবে। আর কেউ যদি তা অমান্য করেন তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ঢাকা পরিবহন মালিক সমিতি ঘোষণা অনুযায়ী আজ (১৫ এপ্রিল) থেকে রাজধানীতে সিটিং সার্ভিস, গেইট লক, বিরতিহীন কিংবা স্পেশাল সার্ভিস নামে কোনো গণপরিবহন থাকবে না। তারপরও সিটিং সার্ভিসের নামে রাজধানীতে সেবা দেয়া গণপরিবহনগুলো আগের মতোই ভাড়া আদায় করছে।

প্রতিদিনের মতো শনিবার সকাল থেকে রাজধানীর মেরাদিয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে সিটিং সার্ভিস নামধারী বাসগুলো বিভিন্ন রুটে ছেড়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে আলিফ, রবরব, অছিম, তরঙ্গ প্লাসসহ বেশ কয়েকটি পরিবহন কোম্পানির বাস রয়েছে। আজ থেকে সাটিং সার্ভিসের নামে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ করার কথা থাকলেও তারা আগের মতোই ভাড়া আদায় করছে। আগে নির্ধারিত আসনের বাইরে যাত্রী ওঠানো না হলেও আজ সকাল থেকে অতিরিক্ত যাত্রী ওঠানো হচ্ছে। ভাড়া আদায় করা হচ্ছে আগের মতোই। এ নিয়ে যাত্রী ও হেলপারদের মধ্যে তর্ক-বিতর্কও হয়।

সকাল সাড়ে ৭টা থেকে মেরাদিয়া হাট থেকে রামপুরা ব্রিজ, বাড্ডা লিংক রোড, গুলশান-১, মহাখালী, আগারগাঁও হয়ে মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদের উদ্দেশে নির্ধারিত সময় অন্তর ছেড়ে যাচ্ছে আলিফ পরিবহনের বাসগুলো। প্রতিটি গাড়িই অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে সিটিং সার্ভিস হিসেবে ভাড়া আদায় করেছে। এ রুটটিতে পরিবহনটির চারটি চেক পোস্ট রয়েছে। প্রতিটি পোস্টে একজন করে চেকার থাকেন। তারা প্রতিটি গাড়িতে উঠে যাত্রী গুনে ওয়েবিলে সই করেন। এরপর একটি চেক পোস্ট অতিক্রমের জন্য একজন যাত্রীকে দিতে হয় ১০ টাকা করে। এভাবে যতটি চেক পোস্ট অতিক্রম করা হয় ১০ টাকা হারে তত টাকা দিতে হয়। শনিবারও ঠিক একই কায়দায় ভাড়া আদায় করা হয়েছে।

রামপুরা ব্রিজের চেক পোস্টে আসার পর একজন চেকার গাড়িতে উঠে যাত্রী গুনে নির্ধারিত একটি কাগজে যাত্রীর সংখ্যা লিখে দিচ্ছেন। এ সময় একজন যাত্রী দাঁড়িয়ে বলেন, আজ থেকে তো সিটিং সার্ভিস বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তোমরা সিটিং সার্ভিসের ভাড়া আদায় করছ কেন? জবাবে, হেলপার বলেন, ‘আমাদের কাছে এ সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা আসেনি। মালিক যাই বলেছে আমরা তাই করছি। আমরা কর্মচারী। আপনাদের থেকে বেশি ভাড়া নিলেও আমাদের লাভ নেই। কম নিলেও লস নেই।’

জানতে চাইলে এই পরিবহনের হেলপার শামছুদ্দিন বলেন, ‘আজ থেকে নয়। বলা হয়েছে ১৫ তারিখের পর থেকে সিটিং সার্ভিস বন্ধ। মানে আজও সিটিংয়ের ভাড়া আদায় করা যাবে। তাই আমরা তুলছি। আর আমাদেরকে মালিকপক্ষ থেকেও কিছুই বলা হয়নি।’

একই কথা জানান অছিম পরিবহনের চালক আরাফাত রানা। তিনি বলেন, ‘আমরা তো জানি ১৫ তারিখের পর থেকে সিটিং সার্ভিস বন্ধ হবে। আমাদেরকে মালিকপক্ষ থেকে বলা হলে বন্ধ করে দেব। আমরা তো মাসওয়ারা বেতনভুক্ত চালক।’

এই রুটে চলাচলকারী রবরব পরিবহনের যাত্রী ও রাজধানীর ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী নুসরাত জাগো নিউজকে বলেন, তারা সরকারের কোনো সিদ্ধান্ত মানছে না। মন্ত্রী টেলিভিশেনের সামনে বলবেন এক কথা আর তার অধীনস্তরা বলবেন আরেক কথা। বনশ্রী থেকে আমার ভার্সিটি পর্যন্ত যেতে ২০ টাকা দিতে হচ্ছে। অথচ এর ভাড়া হওয়ার কথা ৫ টাকা। কয়েকদিন আগে মন্ত্রীর ঘোষণা শুনে আশ্বস্ত হয়েছি। কিন্তু আজ থেকে ভিন্নচিত্র। আগের মতোই সিটিং সার্ভিসের নামে ভাড়া আদায় করছে।’

বাংলাদেশ