পেশাজীবীরা কর দেয় কিনা খতিয়ে দেখা হবে

পেশাজীবীরা কর দেয় কিনা খতিয়ে দেখা হবে

চিকিৎসকসহ বিভিন্ন পেশাজীবীরা ঠিক মতো কর দেয় কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কর প্রদানকারীরা যেন সেচ্ছায় কর দেয় সে উদ্যোগ নিচ্ছে এনবিআর। ভয় ভীতি কাটাতে করবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে এনবিআর।

দেশের সবক্ষেত্রে একটি রাজস্ববান্ধব সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করতে চায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তারই ধারাবাহিকতায় নববর্ষে বকেয়া রাজস্ব আদায়ে ‘হালখাতা’ আয়োজন করেছে। বৃহস্পতিবার চৈত্র সংক্রান্তির দিনে বাংলাদেশের রাজস্ব ব্যবস্থাপনার ইতিহাসে ‘বকেয়া কর আদায় নয়, পরিশোধ’ স্লোগানে প্রথমবারের মতো সারাদেশে রাজস্ব হালখাতা আয়োজন করা হয়েছে।

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় এলটিইউর সম্মেলন কক্ষে ‘রাজস্ব হালখাতা’ বিষয়ে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। স্বাস্থ্য ও পরিকল্পনা কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে এলটিইউর কর কমিশনার মো. আলমগীর হোসেন সভাপতিত্ব করেন।

জাহিদ মালেক বলেন, হালখাতার মাধ্যমে নববর্ষ পালনের যাত্রা শুরু হয়েছিল। আজ সেই উৎসব পরিবেশ ফিরে এসেছে। চলতি বাজেটের আকার বাস্তবায়নে এ ধরনের উদ্যোগ কাজে দিবে।

তিনি আরও বলেন, ব্যবসায়ীসসহ কররপ্রদানকারীরা উন্নয়নের কারিগর। সেই কারিগররা যেন স্বাচ্ছন্দে কর দিতে পারে সেটা নিশ্চত করতে হবে। এনবিআর সে দিকেই এগুচ্ছে।

বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা গেছে ঢাকার কর অঞ্চলের কার্যালয়গুলোতে উৎসবমুখর পরিবেশে এই আয়োজন চলছে। এতে করদাতাদের বকেয়া রাজস্ব পরিশোধ ও করসেবা নিতে ভিড় করতে দেখা গেছে।

সকাল ৯টা থেকে ‘ওপেন হাউজ ডে’ পরিবেশে ঢাকার কর অঞ্চলগুলোর পাশাপাশি সারাদেশের কর, ভ্যাট ও কাস্টমস অফিসে ‘রাজস্ব হালখাতা’ শুরু হয়েছে।

এনবিআরের অধীনস্থ বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ) এর অধীনে ১ হাজার ১৪১ বৃহৎ করদাতা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান রয়েছে। চলতি বছর এলটিইউ এর আদায়যোগ্য ৫০০ কোটি টাকার বকেয়ার বিপরীতে মার্চ পর্যন্ত আদায় হয়েছে প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা।

বাকি কর আদায়ে চেয়ারম্যানের নির্দেশনায় এলটিইউ ‘ওপেন হাউজ ডে’ এর পরিবেশে ব্যতিক্রমী ‘রাজস্ব হালখাতার’ আয়োজন করেছে।

দেখা গেছে, গ্রাম-বাংলার ঐহিত্য মাটির হাঁড়ি, পাতিল, কলা গাছ, কুলো, হাতপাখাতা, মুখোশ, হাতির গেট আর রঙ বেরঙের দেয়াল কার্টুনে সাজানো হয়েছে এলটিইউ। মূল ভবনে ঢুকতেই চোখে পড়বে বিশালকৃতির হাতির শুঁড় দিয়ে সাজানো গেট। সম্মানিত করদাতাদের জন্য খোলা হয়েছে হালখানার ঐহিত্যবাহী নতুন রেজিস্টার খাতা। মাটির সানকিতে দেওয়া হয়েছে মিষ্টি, বাতাসা, নারিকেলের নাড়ু, সন্দেশ, খৈ, কদমা, মুরালি, নিমকী, মুড়ির মোয়া, চিড়ার মোয়া, তিলের খাজা, সুন্দরী পাকন পিঠা, শাহী পাকন পিঠা, নকশি পিঠা, ঝিনুক পিঠা, স্পন্স রসগোল্লা, দই, ডাবের পানি, তরমুজ, পেয়ারা ও বরই ইত্যাদি।

জানা গেছে, দেশের সিংহভাগ রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় অংশ নেওয়া বৃহৎ করদাতাদের সম্মানে এলটিইউ এর এই বিশেষ ও ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজন। যা করদাতাদের আকৃষ্ট ও অনুপ্রাণিত করেছে। অনেক করদাতা নিজেই এসে বকেয়া পরিশোধ করেছেন, অনেকেই আগেই পরিশোধ করে এসেছেন হালখাতার মিষ্টি খেতে, সাথে সম্পর্কটা সুদৃঢ় করতে ও আগামীতে ‘উন্নয়নের অক্সিজেন রাজস্ব’ ব্যবস্থানায় আরো বেশি সহযোগিতার আশ্বাস দিতে।

১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা বকেয়া রাজস্ব দিতে এসে মেটলাইফ অ্যালিকোর প্রতিনিধি রওশন হোসেন জানান, উৎসবমুখর পরিবেশে প্রথমবারের মতো বকেয়া কর দিতে পেরে আমরা অত্যন্ত খুশি। এনবিআরের এমন আয়োজন আমাদের মুগ্ধ করেছে। এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হবে।

অনুষ্ঠানে আগত করদাতারা ও তাদের প্রতিনিধিরা এমন ব্যতিক্রমী আয়োজনের জন্য এনবিআর ও এলটিইউকে ধন্যবাদ জানান। ভবিষ্যতে এ ধরনের আয়োজন অব্যাহত রাখারও আহ্বান জানান। এ আয়োজনের মাধ্যমে একদিকে বাংলার ঐতিহ্যকে লালন ও অপরদিকে করদাতাদের সঙ্গে সুসর্ম্পক তৈরি ও রাজস্ববান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি হবে বলে তারা মনে করেন।

আইন আদালত