নেত্রকোনায় আগাম বন্যায় ৫৮৩ কোটি ৫৫ লাখ ৮৪ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। জেলার দশ উপজেলার মধ্যে খালিয়াজুরী, মোহনগঞ্জ, মদন, কলমাকান্দা ও বারহাট্টায় বেশি ক্ষতির হিসাব পাওয়া যাচ্ছে।
কিন্তু বাস্তবে এর হিসাব দ্বিগুণ হবে বলে ধারণা করছেন সচেতন মহল। তাদের ধারণা প্রায় হাজার কোটির টাকারও বেশি ক্ষতি হয়েছে এ জেলায়। তবে জেলার কৃষি বিভাগ বলছে তাদের হিসাব এখনো চলমান।
কৃষি বিভাগ বলছে, জেলার ১ লাখ ৮৪ হাজার ৩শ ২০ হেক্টর জমির বোরো ফসলের মধ্যে ৪৭ হাজার ৯শ ৯০ হেক্টর জমির বোরো ফসল তলিয়ে গেছে। জেলায় প্রায় বিশ হাজার কৃষক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে ধারণা করছে কৃষি বিভাগ।
জেলার কৃষি বিভাগের প্রাথমিক হিসাবে, খালিয়াজুরীর মোট ২০ হাজার ৭০ হেক্টর বোরো আবাদি জমির মধ্যে ১৯ হাজার ১০০ হেক্টর জমির বোরো ফসল তলিয়ে গেছে। মোহনগঞ্জের মোট ১৬ হাজার ৮২০ হেক্টর বোরো আবাদি জমির মধ্যে ৯ হাজার হেক্টর জমির বোরো ফসল তলিয়ে গেছে। মদনের মোট ১৭ হাজার ১৫০ হেক্টর বোরো আবাদি জমির মধ্যে ৭ হাজার ৮৫ হেক্টর জমির বোরো ফসল তলিয়ে গেছে।
কলমাকান্দার মোট ২১ হাজার ৬২০ হেক্টর বোরো আবাদি জমির মধ্যে ৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমির বোরো ফসল তলিয়ে গেছে। আটপাড়ার মোট ১২ হাজার ৫০ হেক্টর বোরো আবাদি জমির মধ্যে ৯১০ হেক্টর জমির বোরো ফসল তলিয়ে গেছে। কেন্দুয়ায় মোট ১৯ হাজার ৯৫০ হেক্টর বোরো আবাদি জমির মধ্যে ১০০ হেক্টর জমির বোরো ফসল তলিয়ে গেছে।
নেত্রকোনা সদরের মোট ২২ হাজার ২৮০ হেক্টর বোরো আবাদি জমির মধ্যে ৭০০ হেক্টর জমির বোরো ফসল তলিয়ে গেছে। পূর্বধলার মোট ২১ হাজার ৯৫০ হেক্টর বোরো আবাদি জমির মধ্যে ৯৫০ হেক্টর জমির বোরো ফসল তলিয়ে গেছে। দুর্গাপুরের মোট ১৭ হাজার ৭০০ হেক্টর বোরো আবাদি জমির মধ্যে ২ হাজার হেক্টর জমির বোরো ফসল তলিয়ে গেছে ও বারহাট্টার মোট ১৪ হাজার ৭৩০ হেক্টর বোরো আবাদি জমির মধ্যে ২ হাজার ৬৪৫ হেক্টর জমির বোরো ফসল তলিয়ে গেছে।
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত প্রাথমিক হিসাবে ৪৭ হাজার ৯৯০ হেক্টর জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়ে ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি হওয়া জমিতে ২ লাখ ৭৩ হাজার, ৫৪৩ মেট্রেকটন ধান উৎপাদন হতো। যা থেকে ১ লাখ ৮২ হাজার ৩৬২ মেট্রিক টন চাল উৎপাদিত হতো। যার বর্তমান বাজার মূল্য ৫৮৩ কোটি ৫৫ লাখ ৮৪ হাজার টাকা।
নেত্রকোনার খামারবাড়ির উপ-পরিচালক বিলাশ চন্দ্র পাল জাগো নিউজকে জানান, উল্লেখিত হিসাব প্রাথমিকভাবে করা হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির হিসাব নিরুপণের কাজ চলছে। পুরো জেলার হিসাব না করে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে সঠিক তথ্য বলা যাচ্ছে না।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া জব্বার জাগো নিউজকে জানান, খালিয়াজুরীতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজ সঠিক সময়ের মধ্যে সঠিকভাবে হলে এই ক্ষতি হতো না। বরাদ্দের চার ভাগের এক ভাগ কাজও করেনি পিআইসি কমিটি।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম জাগো নিউজকে জানান, বাঁধ নির্মাণে অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি ও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তা দিতে সরকারের কঠোর নজরদারী দরকার।
তবে নেত্রকোনা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু তাহের জাগো নিউজকে জানান, কাজে কোনো অনিয়ম, দুর্নীতি হয়নি। আগাম বন্যার ফলে এ ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর কবীর হাওরাঞ্চল পরিদর্শন করে জাগো নিউজকে জানান, হাওর রক্ষা প্রকল্পে অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের তদন্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে। এছাড়া হাইজদা ২৯ কিলোমিটার স্থায়ী বাঁধের অংশের জন্য একনেকে ৪০ কোটি টাকা পাসের অপেক্ষায় রয়েছে বলেও জানান তিনি।
হাওর উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক মজিবুর রহমান জাগো নিউজকে জানান, হাওরাঞ্চলের বন্যার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য সরকারকে বিভিন্ন দিক তুলে দেয়া হবে।এছাড়া বাঁধ নির্মাণে অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অপরদিকে জেলা প্রশাসক ড. মুশফিকুর রহমান জাগো নিউজকে জানান, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য জরুরি ভিত্তিতে ১৫৩ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ১১ লাখ টাকা বিতরণ করা হচ্ছে। তিনি আরো জানান, ১৮ হাজার ৯৩৮ পরিবারকে ১৫ কেজি করে চাল ও ২২শ পরিবারকে নগদ পাঁচশ করে টাকা জরুরি ভিত্তিতে দেয়া হয়েছে।
এছাড়াও বিভিন্ন উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য নতুন ত্রাণ বরাদ্দ আসছে বলেও জানান তিনি।
নেত্রকোনার জেলা প্রাণী সম্পদ অফিসসূত্রে জানা যায়, নেত্রকোনা জেলায় ৫ লাখ ৮৯ হাজার ৭৩০টি গরু ও ২ লাখ ৪০ হাজার ৯৯টি ছাগল পালন করছেন কৃষকরা। এরমধ্যে খালিয়াজুড়ীতে ৩১ হাজার ৬৭৫টি, মোহনগঞ্জে ৭২ হাজার ১৯০টি, মদনে ৩৫ হাজার ২৮০টি ও কলমাকান্দায় ৫৬ হাজার ৮৯০টি গবাদি পশু পালন করছেন কৃষকরা।
জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা শংকর সরকার জাগো নিউজকে জানান, এই বন্যায় এখনো কোনো গবাদি পশুর রোগ বালাইয়ের সংবাদ পাওয়া যায়নি। তবে বন্যার কারণে গো-খাদ্যের অভাব দেখা দিতে পারে। গবাদি পশুসহ হাওরাঞ্চলের মানুষের খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। গো খাদ্যের অভাবে অর্ধেক মূল্যে কৃষকরা গবাধি পশু বিক্রি করে দিচ্ছেন।