সময় প্রবাহমান। নদীর স্রোতের মতো সময়ও কখনো থেমে থাকে না। বয়ে চলে আপন গতিতে। সময়ের এই প্রবাহমানতায় আজ থেকে মহাকালের অতল গহ্বরে হারিয়ে যাচ্ছে আরেকটি বাংলা বছর।
নানা আয়োজনে আজ যখন চৈত্র সংক্রান্তির পার্বণ, তখন একই সঙ্গে দুয়ারে কড়া নাড়ছে বাঙালির সবচেয়ে বড় অসাম্প্রদায়িক উৎসব পহেলা বৈশাখ। নতুন বছরকে বরণ করতে দেশজুড়ে প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে। বর্ষবরণে সাজসাজ রব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণে। নতুন বছরকে বরণ করে নিতে প্রস্তুতি প্রায় শেষ করে ফেলেছেন এ ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। বর্ষবরণের অন্যতম আকর্ষণ মঙ্গল শোভাযাত্রা। আর এ শোভযাত্রা ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পেয়েছে গত নভেম্বরে। তাই তো শোভাযাত্রা আকর্ষণীয় করার সর্বোচ্চ চেষ্টায় আয়োজকরা।
চারুকলায় চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি। কেউ তৈরি করছেন কাগজের মুখোশ, কেউবা আবার দিচ্ছেন রংতুলির আঁচর। অন্যরাও ব্যস্ত কাঠামোগুলোর উপর আবরণ লাগাতে। লক্ষ্য শোভাযাত্রাকে অন্যবারের চেয়ে আরও আকর্ষণীয় ও সুন্দর করে তোলা। এ বছর শোভাযাত্রার স্লোগান ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্য সুন্দর’ নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতীক হিসেবে থাকবে উজ্জ্বল সূর্যে হাস্যোজ্জ্বল মুখচ্ছবি। যার পেছনে থাকবে আরেকটি কদাকার মুখ। উদ্দেশ্য সব অন্ধকার যেন আসে আলোর দিকে।
আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার ১৩টি মোটিফ তৈরি হবে। এর মধ্যে ১২টি মোটিফ তৈরি হবে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে। যেখানে আছে বাঘ, ঘোড়া, হাঁস, মুরগি, টেবা পুতুল, সমুদ্র বিজয়ের ময়ূরপঙ্খী, যুদ্ধাপরাধীদের কালো হাতের থাবা ইত্যাদি। এছাড়াও দেখা যায় চারুকলার শিক্ষার্থীরা তৈরি করেছেন মুখোশ, সড়া, পেপার ম্যাশ, ওয়াটার কালার ও কাগজে তৈরি বিভিন্ন ধরনের পাখি। এসবেই ফুটে উঠবে বৈশাখের চিরায়ত রূপ।
চারুকলার ১৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাগর হোসেন সোহাগ বলেন, এবার মঙ্গল শোভাযাত্রা অন্যবারের তুলনায় একটু আলাদা। কারণ এবার এ আয়োজন ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পেয়েছে। যার কারণে এবার একটু আগেই কাজ শুরু করেছি। ইতোমধ্যে কাজও শেষের দিকে। আশা করছি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সব কাজ শেষ করতে পারব।
মঙ্গল শোভাযাত্রা উপ-কমিটির আহ্বায়ক ও চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. নিসার হোসেন বলেন, এবার অন্যবারের তুলনায় আরও সুন্দর শোভাযাত্রা উদযাপন করতে পারব বলে আশা করছি। শোভাযাত্রায় জঙ্গিবাদকে ‘না’ বলার বিষয়টি ফুটে উঠবে।
নববর্ষের প্রথম দিন সকাল ৯টায় চারুকলা অনুষদ থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হবে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ছাড়াও অন্যান্যবারের মতো আপামর জনতাও অংশ নেবেন বলে আশা করছেন আয়োজকরা।