আবারও শেয়ারবাজারের লেনদেনে শীর্ষ স্থানে উঠে এসেছে ব্যাংক খাত। ২০১০ সালের মহাধসের পর অনেকটা ধারাবাহিকভাবে এ খাতের অবদান কমে যায়। তবে সদ্য সমাপ্ত মার্চে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মোট লেনদেনের ২২ শতাংশ রয়েছে ব্যাংক খাতের দখলে। গত পাঁচ বছরের মধ্যে মোট লেনদেনে এটিই ব্যাংক খাতের সর্বোচ্চ অবদান।
শেয়ারবাজারে মহাধসের পর বিনিয়োগকারীদের আস্থা হারানোয় ব্যাংক খাতের প্রভাব ধারাবাহিকভাবে কমে যা ২০১২ সালের পর তলানীতে পৌঁছায়। অথচ এ খাতের কোম্পানিগুলো শেয়ারবাজারের প্রাণ হিসেবে বিবেচিত হতো। দীর্ঘ খরার পর চলতি বছরের শুরু থেকে আবার ব্যাংক কোম্পানির শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়তে থাকে।
এরই ধারাবাহিকতায় মার্চে মোট লেনদেনের বড় অংশজুড়েই থাকে ব্যাংক খাতের শেয়ার। মার্চে মোট লেনদেনে ব্যাংকের যে অবদান দাঁড়িয়েছে তা প্রায় ২০০৯-১০ সালের সমান। ২০১০ সালের ডিএসইর মোট লেনদেনের ২৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ ছিল ব্যাংক খাতের। মার্চে মোট লেনদেনে ব্যাংকের অবদান দাঁড়িয়েছে ২১ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
তবে টাকার হিসাবে ২০১০ সালের তুলনায় মার্চে ব্যাংকের শেয়ারের লেনদেনের পরিমাণ অর্ধেক। ২০১০ সালে ব্যাংক খাতের শেয়ার লেনদেন হয় এক লাখ ১১ হাজার ৩০৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রতি মাসে গড়ে লেনদেন হয় নয় হাজার ২৭৫ কোটি টাকা। আর চলতি বছরের মার্চে ব্যাংক খাতের শেয়ার লেনদেন হয়েছে চার হাজার ৭১৭ কোটি টাকা।
মূলত ২০১০ সালে মহাধস এবং ২০১২ সালের কেলেঙ্কারির পর থেকেই শেয়ারবাজারে ব্যাংকের অবদান কমতে থাকে। ২০১১ সালে ডিএসইর মোট লেনদেনে ব্যাংক খাতের অবদান ছিল ২৫ শতাংশ। ২০১২ সালে তা কমে দাঁড়ায় ২২ শতাংশে। এরপর তা আরও কমে ২০১৩ সালে ১৫ শতাংশ, ২০১৪ সালে ১০ শতাংশ, ২০১৫ সালে ১০ শতাংশ এবং ২০১৬ সালে ৮ শতাংশে দাঁড়ায়।
চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয় ৩৪ হাজার ২৩২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংকের শেয়ারের অংশ পাঁচ হাজার আট কোটি টাকা বা ১৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ। পরের মাস ফেব্রুয়ারিতে লেনদেন হয়েছে ১৯ হাজার ৪০৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংকের শেয়ারের অংশ দুই হাজার ৩৬২ কোটি টাকা বা ১২ দশমিক ১৭ শতাংশ। আর মার্চে লেনদেন হয়েছে ২১ হাজার ৭৭০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংকের অংশ চার হাজার ৭১৬ কোটি বা ২১ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ মির্জ্জা এ বি আজিজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ব্যাংক কোম্পানিগুলো ২০১৬ সালে ভালো মুনাফা করেছে। এখন পর্যন্ত যে কয়েকটি ব্যাংক লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক ছাড়া সবকটি ভালো লভ্যাংশ দিয়েছে। এ কারণে ব্যাংকের শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েছে।
তিনি আরও বলেন, ইসলামী ব্যাংকে সম্প্রতি কিছু সমস্যা ছিল। নতুন পর্ষদ দয়িত্ব নিয়েছে। আমার ধারণা ভবিষ্যতে বিনিয়োগকারীরা এ ব্যাংক থেকে ভালো লভ্যাংশ পাবেন।
ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী জাগো নিউজকে বলেন, ব্যাংক খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম অনেক কম ছিল। এখন কিছুটা বেড়েছে। এর ফলে লেনদেন বেড়েছে। সে সঙ্গে ব্যাংক কোম্পানিগুলো ভালো মুনাফা করেছে এবং বিনিয়োগকারীদের ভালো লভ্যাংশ দিচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ব্যাংক খাতের লেনদেন বৃদ্ধি পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক। একটি বড় খাতের কোম্পানির শেয়ারের দাম এবং লেনদেন বৃদ্ধি শেয়ারবাজারে অবশ্যই ইতিবাচক ভূমিকা রাখে।
ডিএসইর মাসভিত্তিক লেনদেনের তথ্য অনুযায়ী, মার্চে লেনদেনের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে প্রকৌশল খাত। মোট লেনদেনের ১৩ দশমিক ৬০ শতাংশই খাতটির। আগের মাস ফেব্রুয়ারিতে মোট লেনদেনে প্রকৌশল খাতের আবদান ছিল ১৫ দশমিক ৫০ শতাংশ।
এর পরেই রয়েছে ওষুধ খাত। মার্চে মোট লেনদেনে এ খাতের অবদান ১৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে ছিল ১৬ দশমিক ২২ শতাংশ। চতুর্থ স্থানে থাকা আর্থিক খাতের অবদান মার্চে দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৫২ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে মোট লেনদেনে এ খাতের অবদান ছিল ১০ দশমিক ৯৭ শতাংশ। ১২ দশমিক ৮৯ শতাংশ অবদান রেখে মার্চে পঞ্চম স্থানে রয়েছে বস্ত্র খাত। ফেব্রুয়ারিতে এ খাতের অবদান ছিল ১১ দশমিক ৪৬ শতাংশ।
বাকি খাতগুলোর মধ্যে মার্চে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের অবদান দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ, যা ফেব্রুয়ারিতে ছিল ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ। বিবিধ খাতের অবদান ফেব্রুয়ারিতে ছিল ৫ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ, যা মার্চে বেড়ে হয়েছে ৫ দশমিক ৬১ শতাংশ।
এছাড়া বাকি সবকটি খাতের অবদান মার্চ শেষে ২ শতাংশের ঘরে বা তারও নিচে রয়েছে। এর মধ্যে সিমেন্টের ২ দশমিক ১৪ শতাংশ, খাদ্যের ১ দশমিক ৯৭ শতাংশ, বীমার ১ দশমিক ৫৫ শতাংশ, মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ১ দশমিক ৩৭ শতাংশ, ভ্রমণের ১ দশমিক ১৬ শতাংশ, সেবা ও আবাসনের ১ দশমিক ১১ শতাংশ, টেলিযোগাযোগের দশমিক ৯৬ শতাংশ, আইটির দশমিক ৯২ শতাংশ, ট্যানারির দশমিক ৭৫ শতাংশ, সিরামিকের দশমিক ৫১ শতাংশ, কাগজ ও মুদ্রণের দশমিক শূন্য সাত শতাংশ এবং পাটের দশমিক শূন্য সাত শতাংশ মোট লেনদেনে অবদান রয়েছে।