সিলেটের আলোচিত শিশু শেখ সামিউল আলম রাজন হত্যা মামলায় ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও আসামিদের করা আপিলের শুনানি শেষে আদালতের দেয়া রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন রাজনের বাবা।
মঙ্গলবার রায় ঘোষণার পর সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের রাজনের বাবা শেখ আজিজুর রহমান আলম বলেন, ‘আমি ন্যায়বিচার পেয়েছি। হাইকোর্টের কাছে কৃতজ্ঞ।’
তিনি সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘তারা সারাবিশ্বে আমার ছেলের মৃত্যুর ঘটনা তুলে ধরেছেন। সারাদেশের মানুষ আমার সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন। তাদের ধন্যবাদ জানাই।’
এছাড়াও রাজনের বাবা নিম্ন আদালত, উচ্চ আদালত ও প্রধানমন্ত্রীসহ সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে রাজনের বাবা বলেন, ‘আর কোনো বা-মা যেন এ পরিস্থিতির শিকার না হয়।’
এরআগে রাজন হত্যা মামলায় চারজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং পাঁচ আসামির বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডের সাজা বহাল রেখে রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। তবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত নূর মিয়ার সাজা কমেছে হাইকোর্টে।
হাইকোর্টের বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ হত্যা আপিলের শুনানি শেষে এ রায় দেন।
গত ১২ মার্চ মামলার ১৯তম দিনের শুনানি শেষ করার পর আদালত রায় ঘোষণার জন্য ১১ এপ্রিল দিন ধার্য করেন।
এর আগে গত ৩০ জানুয়ারি পেপারবুক উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে শুনানি শুরু করেন রাষ্ট্রপক্ষ। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জহিরুল হক জহির, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আতিকুল হক সেলিম ও বিলকিস ফাতেমা।
সিলেটের কুমারগাঁওয়ে চুরির অভিযোগে ২০১৫ সালের ৮ জুলাই সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন শেখপাড়া এলাকার বাদেয়ালি গ্রামের সবজি বিক্রেতা শিশু রাজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরে তার মরদেহ গুম করার সময় ধরা পড়েন একজন। এরপর পুলিশ বাদী হয়ে জালালাবাদ থানায় মামলা করে।
এদিকে, ফেসবুকে প্রচারের উদ্দেশে নির্যাতনের ভিডিওচিত্র ধারণ করে নির্যাতনকারীরা। পরে তা ভাইরাল হয়ে পড়েল দেশজুড়ে তোলপাড় ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
পরে তদন্ত শেষে ওই বছরের ১৬ আগস্ট ১৩ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ১৭ কার্যদিবস বিচারিক কার্যক্রম শেষে ওই বছরের ৮ নভেম্বর বিচারিক আদালত রায় দেন।
রায়ে আসামিদের মধ্যে কামরুল ইসলাম, ময়না চৌকিদার, তাজউদ্দিন আহমদ বাদল ও জাকির হোসেন পাভেল আহমদের ফাঁসির আদেশ হয়। কামরুলের সহযোগী নূর মিয়াকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং কামরুলের তিন ভাই মুহিত আলম, আলী হায়দার ও শামীম আহমদকে (পলাতক) সাত বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এক বছর করে কারাদণ্ড হয় দুলাল আহমদ ও আয়াজ আলীর।