আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ’৭১-এর গণহত্যাসহ স্বীকৃত ইতিহাস অস্বীকারকারীদের শাস্তির জন্য ইউরোপের ‘হলোকাস্ট ডিনায়েল এ্যাক্ট’-এর মতো আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হবে। তিনি সোমবার রাজধানীর ডব্লিউভিএ মিলনায়তনে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের ৪৬তম বার্ষিকী উপলক্ষে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতা করছিলেন।
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উপদেষ্টা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুলের পরিচালনায় ‘একাত্তরের গণহত্যার অস্বীকারকারীদের শাস্তির জন্য আইন চাই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তৃতা করেন নির্মূল কমিটির উপদেষ্টা বিচারপতি শামসুল হুদা, ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসির মামুন, নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ, শহীদসন্তান ডা. নুজহাত চৌধুরী ও আবুল কালাম আজাদ।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করেছেন। ’৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর সংবিধান সংশোধনের নামে জিয়া সংবিধান থেকে মূল চারনীতি বাদ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ভিত্তিতে প্রণীত সংবিধানকে তছনছ করেছেন।
জিয়াউর রহমান স্বাধীনতাবিরোধীদের রাজনীতিতে পূণর্বাসিত করেছেন। গোলাম আযমকে এদেশে নাগরিকত্ব দিয়ে রাজনীতি করার অধিকার দিয়েছে। আর তার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং রাজাকারদের মন্ত্রী বানিয়ে তাদের গাড়িতে পতাকা তুলে দিয়েছেন, আর আমাদের মতো মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে হাতকড়া পরিয়ে জেলে পাঠিয়েছেন।
আইনের সংশোধনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাজাপ্্রাপ্তদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে তা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে দেয়া যায় উল্লেখ করে ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, ‘একাত্তরের গণহত্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ক্ষতিপূরণ দেয়া খুব একটি কঠিন কাজ না। ১৯৭৩ সালের যে আইন দ্বারা যুদ্ধাপরাধী মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার করা হচ্ছে, সেই আইনটাকেই একটু সংশোধন করা হলে ট্রাইব্যুনালই তখন যুদ্ধাপরাধীদের সাজা দেয়ার সাথে সাথে তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে এবং বাজেয়াপ্তকৃত সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে দিতে পারে।’ এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, কেউ যদি সংবিধান, মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যা নিয়ে কোন ধরণের প্রশ্ন উত্থাপন করে বা কটুক্তি করে, তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনেই মামলা করা যায়।
বিচারপতি শামসুল হুদা বলেন, ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে মুক্তিযুদ্ধ কে ঘোষণা দিয়েছে তা স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। আমরা বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা ও তাঁর নির্দেশেই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম, অন্য কারো কথায় নয়।’
অধ্যাপক মুনতাসির মামুন বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধের জন্য যদি জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি আমরা করতে পারি, তাহলে বিএনপির সাথেও যুদ্ধাপরাধীরা রয়েছে। তারা যদি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রাখে এবং এ ধরনের কথাবার্তা বলতেই থাকেন, তাহলে এ ধরনের দলের নিষিদ্ধের বিষয়টিও ভাবতে হবে।’