ডিসিসি (ঢাকা সিটি করপোরেশন) উত্তর ও দক্ষিণের নির্বাচন স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে। আর এতে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে ডিসিসি নির্বাচন।
নির্বাচন কমিশন সূত্র বলছে, আদালত স্থগিতাদেশ দিলে কিছু করার থাকবে না। তবে সরকার চাইলে নির্বাচন হবে, না চাইলে নয়।
রোববার দুপুর বারোটায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ এ রিট দায়ের করেন।
অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ জানান, বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের বেঞ্চে রোববার দুপুরের পর আংশিক শুনানি হয়। সোমবার এ রিটের পরবর্তী শুনানি হবে। আর এ সময়ের মধ্যে নির্বাচনের পরবর্তী কার্যক্রম না চালানোর জন্য সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে বলবেন বলে আদালতকে আশ্বস্ত করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এমকে রহমান ও নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক।
রিটে স্থগিতাদেশ ছাড়া নির্বাচনের বৈধতা নিয়েও চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার ডিসিসি নির্বাচন বন্ধ রাখতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ তিন জনের প্রতি হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান সিদ্দিকীর পক্ষে উকিল নোটিস পাঠিয়েছিলেন অ্যাড. মনজিল মোরসেদ।
বেঁধে দেওয়া ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জবাব না দেওয়ার এ রিট দায়ের করা হয়।
উকিল নোটিস পাওয়াদের মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দন আহমেদ ছাড়া অপর দু’জন হলেন, নির্বাচন কমিশন সচিব ড. মোহাম্মদ সাদিক এবং ঢাকা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শাহ আলম।
এদিকে আদালতে রিট হওয়ায় রোববার দুপুর পর থেকেই ইসি কর্মকর্তারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। চার নির্বাচন কমিশনার প্রধান নির্বাচন কমিশনারের রুমে বসে পড়েন অনির্ধারিত বৈঠকে।
ব্যাস্ত হয়ে পড়েন ইসির যুগ্ম সচিব জেসমীন টুলী এবং সিনিয়র সহকারী সচিব (নির্বাচন ব্যবস্থাপনা এবং সমন্বয়) ফরহাদ হোসেন। তারা ডিসিসির সীমানা গেজেট এবং ভোটার পুনর্বিন্যাসের গেজেট নিয়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন।
ইসির এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, ‘আপনি যদি আমাকে ডিসিসির ১ নম্বর ওয়ার্ডের কোনো কাগজ দেখাতে বলেন, আমি ১৯৯৩ সালের সীমানা গেজেট ছাড়া আর কিছু দেখাতে পরব না। অথচ সে সময় ১ নম্বর ওয়ার্ড হিসেবে উত্তরা আবাসিক এলাকা বলা হয়েছিল। এখনো সেই উত্তরা আবাসিক এলাকাই ১ নম্বর ওয়ার্ড। কিন্তু আয়তন এবং ভোটার সংখ্যা বেড়েছে কয়েকগুন বেশি।’
তিনি রিট বিষয়ে বলেন, ‘আদালত রিটের কারণে নির্বাচন স্থগিত করে দিলে কিছু করার থাকবে না।’
এদিকে নির্বাচন কমিশনের একজন কমিশনার বাংলানিউজকে বলেন, ‘নির্বাচনটা হলে ভালো হতো। তবে সম্ভবত আদালত স্থগিতাদেশ জারি করতে যাচ্ছে। তবে এতো মানুষের অংশগ্রহণের একটা নির্বাচন ঢাকায় একটা উৎসব তৈরি করত, আদালত নিশ্চয়ই এ বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত দেবেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা যে সময়ে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব নিয়েছি, তখন ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা ছিল। সীমানা নির্ধারণ এবং ভোটার হালনাগাদের সময় ছিল না।’
তিনি আরো বলেন, ‘আদালতের রিটে নির্বাচন এখন ঝুলে যেতে পারে।’
অন্যদিকে অন্য এক কর্মকর্তা জানান, ‘নির্বাচন এখন সম্পূর্ণ সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। সরকার চাইলেই নির্বাচন হবে। নইলে নয়।’
মনজিল মোরসেদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন-২০০৯ এর ২৭, ২৮ ও ২৯ ধারা অনুযায়ী নতুন সিটি করপোরেশনের কয়টি ওয়ার্ড হবে তা নির্ধারণ করতে হবে এবং এসব ওয়ার্ডের সীমানাও নির্ধারণ করতে হবে। এ সীমানা নির্ধারণের জন্য কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়ে গেজেট প্রকাশ করতে হবে। আইনের এসব ধারা কার্যকর না করে নির্বাচন করা যাবে না। আর আইনের এ ধারাগুলো সিটি করপোরেশন পালন করেনি। তাই আইন অনুযায়ী নির্বাচন করার সুযোগ নেই। এ অবস্থায় আইন মেনে নির্বাচন না করার জন্য অনুরোধ জানানো হচ্ছে এবং আইন কার্যকর করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।’
রোববার সারাদিন নির্বাচন কমিশনের আলোচনার বিষয়ই ছিল, ডিসিসি নির্বাচন হবে তো!
অনিশ্চিত ইভিএম
আদালত যদি ঘোষিত সময়ে ডিসিসি নির্বাচন অনুষ্ঠানে স্থগিতাদেশ না ও দেয় তাহলে ডিসিসি নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহৃত হবে না।
নির্বাচন কমিশনের একজন কর্মকর্তা জানান, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ইভিএমে ব্যবহৃত ব্যাটারি আমদানি করতে না পারায় এ অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
তিনি জানান, চীন থেকে ব্যাটারি আমদানির জন্য ১০ এপ্রিলের মধ্যে এলসি খুলতে বলেছিল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। কিন্তু এ জন্য অগ্রিম টাকার প্রয়োজন ছিল। ইসি এ টাকা দিতে সিদ্ধান্ত নিতে না পারায় ডিসিসি নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহৃত হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
এদিকে একজন নির্বাচন কমিশনার বলেন, যদি ডিসিসি নির্বাচন হয়, তাহলে কয়েকটি ওয়ার্ডে ইভিএম হবে। এ ক্ষেত্রে দেশি উৎস থেকে ব্যাটারি সংগ্রহ করা হবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা দেশি ব্যাটরি দিয়ে এরই মধ্যে ইভিএম পরীক্ষা করে দেখেছি, রেজাল্টও ইতিবাচক। তাই এ নিয়ে কাউকে মনোপলি ব্যবসা করতে দেওয়া হবে না। আমরা প্রযুক্তির পক্ষে, কিন্তু কারো হাতে বন্দি হতে রাজি নই।’
ওই কমিশনার বলেন, ‘সামান্য ব্যাটারি কেনা নিয়ে এর সঙ্গে জড়িত একজন ১৪ লাখ ৬০ হাজার টাকার প্রজেক্টকে ৮৪ লাখে নিয়ে গেছেন। জনগণের টাকা এভাবে লুটে খেতে দেওয়া হবে না।’
তিনি আরো জানান, রাজনৈতিক ঐক্য ছাড়া আগামী জাতীয় নির্বাচনেও ইভিএম ব্যবহারের কোনো ইচ্ছা বর্তমান ইসির নেই।
তিনি বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের মতো পর্যায়ে পৌঁছাতে বাংলাদেশের আরো ১৫ বছর অপেক্ষা করতে হবে।’