প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘ধমক দিয়ে আওয়ামী লীগকে জনগণের সেবা করা থেকে বিরত রাখতে পারবেন না।’
বৃহস্পতিবার রাজশাহীর মাদ্রাসা মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বসে জনগণের জন্য কাজ করবে এটাই আমাদের লক্ষ্য। দেশের মানুষ জেগে উঠেছে। আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়বো।’
এদিকে রাজশাহীবাসীর প্রাণের দাবি গ্যাস পাইপ লাইনের মাধ্যমে রাজশাহীতে গ্যাস সংযোগ আগামী জানুয়ারির মধ্যে দেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘গ্যাস পাইপ লাইন স্থাপন হলেও নাটোরে আরো তিনটি নদী পার করতে হবে। এ কাজ সম্পন্ন করেই আগামী জানুয়ারি মাসে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার সরা দিনই রাজশাহীতে ব্যস্ত সময় কাটান। সকালে বিমান যোগে রাজশাহীতে পৌছেই সরাসরি সেনানিবাসে যান। সেখানে দুপুর পর্যন্ত রাজশাহী সেনানিবাসে একের পার এক বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেন। সেনানিবাসে মধ্যাহ্নভোজ শেষ করে তিনি যান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা ছাত্রী হলের ভিত্তি ফলক উন্মোচন করে বিকেলে যান মহানগরীর কাটাখালিতে। সেখানে নর্দান পাওয়ার সলুসন লি: এর নব নির্মিত ৫০ মেগাওয়াট কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন তিনি। পরে একই স্থানে আরো একটি সরকারি খাতে ৫০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্লান্টের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন।
সেখান থেকে তিনি সরাসরি চলে যান মাদ্রাসা মাঠের জনসভায়। বিরোধী দলে থাকাকালে ২০০৫ সালে এই মাদ্রাসা মাঠে শেখ হাসিনা অনুরূপ একটি জনসভা করেছিলেন।
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসভায় প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আওয়ামী লীগ জনগণের সেবা করার জন্য ক্ষমতায় এসেছে। আওয়ামী লীগ জনগণের পাশে আছে, থাকবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার বাবা বাংলাদেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন। দেশের জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি আনতে গিয়ে তিনি বুকের রক্ত দিয়েছেন। আমরা দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য যা কিছু প্রয়োজন করবো। প্রয়োজনে বাবার মতো রক্ত দিয়ে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়বো।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা দখল ছিলো অবৈধ, অসাংবিধানিক। আদালতের রায়ে আমরা সংবিধান সংশোধন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুন:প্রতিষ্ঠা করেছি।’
তিনি বিএনপির দুর্নীতি, লুটপাটের চিত্র তুলে ধরে বলেন, ‘এই দুর্নীতিবাজদের স্থান বাংলার মাটিতে হবে না। খালেদা জিয়া ২০০৬ সালে বলেছিলেন- আওয়ামী লীগ নাকি নির্বাচনে ৩০টি আসন পাবে না। অথচ ২০০৮ সালে বিএনপিই ৩০টি আসনও পায়নি, মাত্র ২৯টি আসন পেয়েছে।’
খালেদা জিয়ার উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আল্লাহর উপর ভরসা রেখে কথা বলবেন। আপনি যা বলেন তা আপনার জন্য প্রযোজ্য হয়। আওয়ামী লীগের কোনো ক্ষতি হয় না।’
প্রধানমন্ত্রী বিএনপির শাসনামলের কথা স্বরণ করিয়ে দিয়ে জনতার উদ্দেশ্যে বলেন, ‘বিএনপির সময় রাজশাহী ছিলো সন্ত্রাসের জনপদ, বাংলা ভাই, জঙ্গিবাদের আখড়া। তারা রাজশাহীবাসীকে দিয়েছিলো বাংলাভাই। তাদের অত্যাচারের কথা রাজশাহীর মানুষ ভুলে যায়নি।’
প্রধানমন্ত্রী বর্তমান সরকারের সময় রাজশাহীর উন্নয়নের বিভিন্ন কর্মসূচি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘পদ্মা নদীর ভাঙন রোধে গোদাগাড়ীতে ১২ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে চাপাইনবাগঞ্জে বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। রাস্তাঘাটের উন্নয়নে ১৪ শ’ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছি। এছাড়া ভবিষ্যতে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আশাবাদও ব্যক্ত করেন তিনি।