জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিরুৎসাহিত করে এ খাত থেকে যতবেশি রাজস্ব আদায় করা যায় সেটিকে মূল লক্ষ্য ধরে তামাকাজাত পণ্যের উপর করের কাঠামো (স্লাব) পুনর্বিন্যাস করা হচ্ছে।
বুধবার এনবিআর কার্যালয়ে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সঙ্গে অনুষ্ঠিত প্রাক বাজেট আলোচনায় এনবিআরের পক্ষে এ কথা জানান সদস্য (মূসক নীতি) ব্যারিস্টার জাহাঙ্গীর হোসেন।
তিনি বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য এ টোবাকোর (তামাক) ব্যবহার কমানো এবং এ খাত থেকে যত বেশি রাজস্ব আদায় করা যায়। সেভাবেই নতুন ভ্যাট আইনে তামাকজাত পণ্যের স্লাব নির্ধারণ করা হচ্ছে।
এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনায় আরও অংশ নেন ইআরএফ সভাপতি সাইফ ইসলাম দিলাল, সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান, যুগ্ম সম্পাদক রিজভী নেওয়াজ, অর্থ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম, কার্যনির্বাহী সদস্য সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আশরাফুল ইসলাম, সাবেক সভাপতি সুলতান হোসেন বাদল, সদস্য রাজু আহমেদ, ফখরুল ইসলাম হারুন, শফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
জিয়াউর রহমান বলেন, পুঁজিবাজারের লেনদেন বাড়লে এনবিআরের রাজস্বও বাড়বে। তাই পুঁজিবাজারকে ভাইব্রেন্ড (গতিশীল) করে রাজস্ব আহরণের পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। বন্ড মার্কেটে আরও বেশি সুযোগ-সুবিধা দেয়া যেতে পারে।
তালিকাভুক্তির পরের বছর কোম্পানি কর মওকুফ সুবিধা পায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর পাশাপাশি তালিকাভুক্তির উপযুক্ত যেসব কোম্পানি তালিকাভুক্ত হচ্ছে না তাদের উপর একটা জরিমানার বিধান চালু করা যেতে পারে।
তিনি আরও বলেন, রেমিটেন্স আসা কমে গেছে। এর কারণ হলো দেশ থেকে টাকা পাচার হচ্ছে, হুন্ডি হচ্ছে। কীভাবে এই হুন্ডি ও পাচার হচ্ছে এটি এনবিআরকে ক্ষতিয়ে দেখতে হবে।
রাজু আহমেদ বলেন, অবৈধ অর্থ উপার্জন ও কর ফাঁকির পথ বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশে ব্যাংকের চেকের মাধ্যমে ঘুষের টাকা লেনদেন হয়। যিনি বৈধভাবে আয় করেন এবং কর দেন, তিনি বিভিন্নভাবে অবৈধ অর্থ উপার্জনকারী ও কর ফাঁকিবাজ থেকে পিছিয়ে পড়ছেন। অবৈধ অর্থ উপার্জনের পথ বন্ধ করতে না পারলে, যারা কর দেন তারাও কর ফাঁকি দেয়ার সুযোগ খুঁজবেন।
কর ফাঁকির পথ বন্ধে কর আইনজীবীদের সঙ্গে এনবিআরের আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়ে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক এই সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমাদের সাধারণ মানুষ যে কর ফাঁকি দেয় তার পথ দেখায় কর আইনজীবীরা। এনবিআরের উচিত কর আইনজীবীদের সঙ্গে বসে এ পথ বন্ধ করা।
রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি ও করদাতাদের কর দেয়ায় উৎসাহিত করতে কর রিফান্ড (অতিরিক্ত কর ফেরত দেয়া) ব্যবস্থা চালু করার দাবি জানিয়ে রাজু আহমেদ বলেন, যদি কেউ অতিরিক্ত কর দিয়ে থাকেন, তা পরের বছরে রিফান্ড দেয়ার বিধান চালু করলে করদাতারা কর দিতে উৎসাহিত হবেন। সেইসঙ্গে প্রচারও হবে অতিরিক্ত কর দিলে তা ফেরতও পাওয়া যায়। এতে রাজস্ব আহরণে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম গ্যাস-বিদ্যুৎ ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখার দাবি জানান।
সুলতান হোসেন বাদল বলেন, দেশ থেকে টাকা যারা বিদেশে নিয়ে গেছেন তাদের নাম ও কে কতো টাকা নিয়ে গেছেন তা এনবিআরের প্রকাশ করা উচিত। সেইসঙ্গে কত টাকা রাজস্ব দিয়েছেন এবং দেশের রাজস্ব খাতে তাদের অবদান কত এই তথ্যও প্রকাশ করতে হবে। পাশাপাশি দেশে কর দেয়ার যোগ্য কতজন আছেন এবং কতজন কর দেয় তারও জরিপ করা না হয়ে থাকলে জরিপ করা উচিত।
শফিকুল ইসলাম বলেন, সিগারেট, তামাক, জর্দা, গুলসহ মানবদেহেরে জন্য ক্ষতিকর পণ্যের ব্যবহার কমানো এবং এ খাত থেকে যতবেশি রাজস্ব আদায় করা যায় সেদিকে লক্ষ্য রেখে তামাকজাত পণ্যের স্লাব পুনর্বিন্যাস করা বিষয়টি বেবেচনা করা উচিত।
আলোচনার শেষ অংশ সভাপতির বক্তব্যে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আপনাদের মতামতগুলো আমরা বিবেচনা করবো। তার আগে আলোচনার শুরুতে তিনি বলেন, বকেয়া কর আদায়ে এবার বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে এনবিআর হালখাতা অনুষ্ঠান করবে। এর অংশ হিসেবে পহেলা বৈশাখের আগের দিন চৈত্র সংক্রান্তিতে করদাতাদের মিষ্টিমুখ করানো হবে।