রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) প্রস্তাবিত ‘কেরানীগঞ্জ মডেল টাউন’ প্রকল্পে বসত-বাড়ি ও কৃষি জমি অধিগ্রহণের খবরে ভূমি রক্ষায় আন্দোলনে নেমেছেন কেরানীগঞ্জের বাসিন্দারা। নিজেদের বাপ-দাদার ভিটা-বাড়ি অধিগ্রহণের খবরে একত্রিত হয়েছেন ক্ষুব্ধ জনতা।
সোমবার কেরানীগঞ্জের বসিলা থেকে কলাতিয়া পর্যন্ত প্রায় আট কিলোমিটার এলাকায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন এলাকাবাসী। এতে শত শত নারী-পুরুষ ও শিশু-কিশোর অংশ নেয়।
মানববন্ধন থেকে রাজউক প্রস্তাবিত কেরানীগঞ্জ মডেল টাউন প্রকল্পটি বাতিল করার দাবি জানান তারা। এ সময় মানববন্ধনে অংশ নেয়া অনেকের হাতেই দাবি সম্বলিত বিভিন্ন ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।
মানববন্ধনে তারানগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন ফারুক বলেন, ‘জীবন থাকতে এক ইঞ্চি জমি হুকুম দখল করতে দেয়া হবে না। এই এলাকা জাতীয় অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক, ভাষাসৈনিক শিল্পী ইমদাদ হোসেন, সংগীতজ্ঞ ওয়াহিদুল হক ও ঐতিহাসিক যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে নির্বাচিত বঙ্গবন্ধুর সহকর্মী এমএলএ মৌলভী সিরাজ উদ্দিনের জন্মস্থান। মুক্তিযুদ্ধের বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিয়েছে এ এলাকার মানুষ।’
তিনি বলেন, ‘আট হাজার মানুষকে লাভবান করার আবাসিক প্রকল্পের নামে এমন করে লাখ লাখ মানুষকে উচ্ছেদ করার চেষ্টা যেকোনো মূল্যে প্রতিরোধ করা হবে।’
এ প্রকল্প বাতিল না করলে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলারও হুঁশিয়ারি দেন স্থানীয়রা।
এর আগে গত ২৬ মার্চ নাজিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আয়োজিত সমাবেশে কেরানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ ও কলাতিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. তাহের আলী যেকোনো মূল্যে বসতভিটা ও কৃষি জমি রক্ষার ঘোষণা দেন।
এরপর গত ২৭ থেকে ৩০ মার্চ প্রতিবাদ সমাবেশ করেন স্থানীয়রা। সর্বশেষ ২ এপ্রিল বটতলী সিরাজ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে প্রতিবাদ সভায় এ মানববন্ধন কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয়।
জানা গেছে, জাতীয় সংসদের সদস্য, মন্ত্রী, আমলা ও সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের আবারও প্লট দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে রাজউক। এ লক্ষ্যে কেরানীগঞ্জের সাভার সংলগ্ন এলাকায় বাস্তবায়নের জন্য একটি প্রকল্পপত্র তৈরি করে সম্প্রতি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে উপস্থাপন করা হয়। পরে সাভার সংলগ্ন বছিলার পশ্চিম পাশে ১৬টি মৌজাকে প্রকল্পের স্থান হিসেবে বেছে নেয়া হয়।
মৌজাগুলো হচ্ছে- আহাদীপুর, নিশানবাড়ী, বাড়িলগাঁও, কাশারিয়া ভাওয়াল, নিমতলী, দেউলি, দেউতা, দক্ষিণ বাহেরচর, উত্তর বাহেরচর, বরইকান্দি, ছাগলাকান্দি, চুনার চর, বাকুরত্তা, বাছুলি ও বিনামালী। মৌজাগুলো কেরানীগঞ্জের তারানগর, কলাতিয়া ও সাভারের বাকুরত্তা ইউনিয়নের মধ্যে পড়েছে।
এদিকে, রাজউক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, কেরানীগঞ্জ মডেল টাউন প্রকল্পটি এখনও প্রাথমিক পর্যায়েই রয়েছে। প্রকল্পপত্র তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত দিলেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
তবে স্থানীয়রা যাতে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে না পারেন সে লক্ষ্যে রাজউক কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে। তাই ভূমি অধিগ্রহণে বর্তমানে ক্ষতিপূরণ দেড়গুণের স্থলে তিনগুণ দেয়ার পরিকল্পনা করে রাজউক। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুমদখল আইন, ২০১৭’ এর খসড়া অনুমোদন করা হয়েছে। এ আইনের ফলে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ক্ষতিপূরণের পরিমাণ ক্ষেত্র বিশেষে বেসরকারি ক্ষেত্রে চারগুণ ও সরকারি ক্ষেত্রে তিনগুণ বাড়ানো হয়েছে।
অন্যদিকে, স্থানীয় জনসাধারণের আশঙ্কাকে ভিত্তিহীন উল্লেখ করে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রাজউক জানিয়েছে- একটি বিশেষ স্বার্থান্বেষী মহল এই অপপ্রচার চালাচ্ছে। যা অসত্য ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বাস্তবতা হচ্ছে- পরিকল্পিত নগরায়ন ও জনগণের আবাসন সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে রাজউক কেরানীগঞ্জে একটি পরিকল্পিত আবাসন প্রকল্প গ্রহণের বিষয়ে প্রাথমিক সমীক্ষা পরিচালনা করছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোনো বাড়িঘর কিংবা স্থাপনা অধিগ্রহণের আওতায় যাতে না পড়ে সে লক্ষেই কেবল বসতিহীন জায়গাতেই প্রকল্প গ্রহণের জন্য সমীক্ষা চালানো হচ্ছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনাক্রমেই রাজউক কর্তৃক প্রকল্প এলাকা চূড়ান্ত করা হবে। এ অবস্থায় কোনো স্বার্থান্বেষী মহলের মাধ্যমে প্ররোচনায় প্রভাবিত না হতে অনুরোধ করেছে রাজউক।