জাতীয় সংসদের স্পিকার, সিপিএ নির্বাহী কমিটির চেয়ারপার্সন ও ১৩৬তম আইপিইউ এসেম্বলির সভাপতি ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সাথে ১৩৬তম আইপিইউ এসেম্বলিতে আগত ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, ইরান ও সুইডেনের প্রতিনিধিদলের প্রধানরা আজ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) তার কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেন।
স্পিকার আইপিইউ এসেম্বলিতে আগত প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানান। তিনি আইপিইউ এসেম্বলিকে বিশ্বের সর্ববৃহৎ মিলনমেলা আখ্যায়িত করে বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সংসদ ও সহযোগী সংস্থা থেকে আগত প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ বাংলাদেশকে এক অনন্য উচ্চতায় অধিষ্ঠিত করেছে।
সাক্ষাৎকালে তারা ১৩৬তম আইপিইউ এসেম্বলি, বাংলাদেশের সংসদীয় কার্যক্রম, বাংলাদেশের নির্বাচন পদ্ধতি, নারীর অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষমতায়ন, সামাজিক নিরাপত্তা, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
ফিলিপাইন সিনেটের প্রেসিডেন্ট ও প্রতিনিধিদলের প্রধান একুইলিনো কোকো পিমেন্টেল সাক্ষাৎকালে বলেন, ফিলিপাইন ও বাংলাদেশের মধ্যে দীর্ঘদিন থেকে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান। তিনি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রশংসা করেন। ২০১৭ সাল জুড়ে ফিলিপাইনে অনুষ্ঠানরত আসিয়ান সম্মেলনে যোগ দিতে তিনি স্পিকারকে আমন্ত্রণ জানান।
ভিয়েতনাম পার্লামেন্টের প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ভিয়েতনাম প্রতিনিধিদলের প্রধান মোদ টং থি ফং বলেন, বাংলাদেশের সাথে ভিয়েতনামের দ্বিপাক্ষিক সর্ম্পক অত্যন্ত সুদৃঢ়। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের মতো ভিয়েতনামের জন্যও ক্ষতিকর উল্লেখ করে তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশের একযোগে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।
স্পিকার ভিয়েতনামের মহান নেতা হো চিমিনকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে বলেন, তিনি ছিলেন বাঙালী জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। উভয় নেতাই দারিদ্র্যমুক্ত সমৃদ্ধশালী দেশ গড়ার জন্য আমরণ সংগ্রাম করে গেছেন।
ভিয়েতনামে আয়োজিত আইপিইউ এসেম্বলিতে বাংলাদেশ থেকে প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করেছিল। বর্তমানে ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশ দু’দেশের সংসদীয় পর্যায়ে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে সংসদীয় সম্পর্ককে জোরদার করতে পারে। এ ছাড়াও নারীর ক্ষমতায়ন, জাতিসংঘ শান্তি মিশন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় ভিয়েতনাম বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারে।
ইরান ইন্টার পার্লামেন্টারি গ্রুপের সেক্রেটারি জেনারেল ও ইরান প্রতিনিধিদলের প্রধান ঘোলামালি জাফরজাদেহ, এমপি সফলভাবে ১৩৬তম আইপিইউ এসেম্বলি আয়োজন করায় স্পিকারকে ধন্যবাদ জানান। স্পিকার প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ইরানের সাথে বাংলাদেশের ভ্রাতৃত্ববন্ধন দীর্ঘদিনের। ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের মাধ্যমে এ বন্ধন ভবিষ্যতে আরো শক্তিশালি হবে।
সুইডেন পার্লামেন্টের স্পিকার ও সুইডেন প্রতিনিধিদলের প্রধান আরবান আহলিন বাংলাদেশের সংসদীয় চর্চা, সংসদীয় রীতিনীতি, বাংলাদেশের গণত›ত্র ও নির্বাচন সম্পর্কে জানতে চাইলে স্পিকার বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দীর্ঘ ২৩ বছর পাকিস্তান সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম করেন। এরই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে বাঙালী জাতি শোষণ ও বৈষম্য থেকে মুক্তি পায়Ñ অর্জিত হয় কাঙ্খিত স্বাধীনতা।
ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে ১৯৯৬ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। সাংবিধানিক সংকট কাটিয়ে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুনর্বার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে তিনি বাংলাদেশকে পরিণত করেছেন উন্নয়নের রোল মডেলে।
স্পিকার বলেন, বর্তমান সরকার দেশের মানুষের কল্যাণে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। এর ফলে আর্থ-সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ দ্রুত উন্নতি লাভ করছে। তিনি বাংলাদেশের মানব সম্পদ উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি, বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধিসহ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন বিষয়ে বাংলাদেশের অগ্রগতির বিবরণ দেন।
বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে ফিলিপাইন,ভিয়েতনাম, ইরান ও সুইডেনের বিনিয়োগকারীদের পাটজাত দ্রব্য, ওষুধ, তৈরি পোশাক শিল্প, বিদ্যুৎ, নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও চামড়া শিল্পে বিনিয়োগের আহবান জানান।
সাক্ষাৎকালে প্রতিনিধিদলের অন্যান্য সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন।