শহীদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতরে একটি গাছের তলায় প্লাস্টিকের ওপর বিছানো ময়লা কাঁথায় শুয়ে ঘুমাচ্ছিল সাত বছরের ছোট্ট শিশু সুমাইয়া।
পাশে শুয়ে নানি রুপজান বেগম নাতনির মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম ভাঙানোর চেষ্টা করছিলেন। নাতনিকে নিয়ে গত রাতে উদ্যানের বৃক্ষমায়া নামক সংগঠনের সদস্যদের ব্যায়ামের জন্য নির্মিত শেডে ঘুমিয়েছিলেন রুপজান বেগম।
মশার কামড়ে ভালো ঘুম হয়নি। আবার খুব ভোরে ব্যায়াম করতে ওই সংগঠনের সদস্যরা চলে আসায় নাতনিকে কোলে করে গাছতলায় নিয়ে এসেছেন। কিন্তু রাতে ঘুম ভালো না হওয়ায় সুমাইয়া চোখ মেলতে চাইছিল না।
রুপজান বেগম এবার একটু রাগত স্বরে ধমকে উঠলেন, ‘দেরি কইরা উঠলে ফুল বেচবি কহন, আর বেচাকেনা না অইলে আর জমি রাখবি কেমনে?’ এতেই কাজ হলো, আড়মোড়া ভেঙে ঘুম থেকে উঠে বসলো সুমাইয়া।
বৃহস্পতিবার ভোরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘আর জমি কেমনে রাখবি’ বাক্যটি কানে আসতেই কৌতূহলবশত এ প্রতিবেদক এগিয়ে যান।
রুপজান বেগমের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, সুমাইয়ার বাবা নেই। কয়েক বছর আগে দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রেখে মারা গেছেন। পরে মা হনুফা বেগম আবার বিয়ে করে সংসার করছেন। পুরান ঢাকার আগামসি লেনে নতুন সংসারে দুই সন্তান ও স্বামীসহ থাকেন তিনি।
বৃদ্ধা রুপজান বেগম জানান, সুমাইয়া জন্মের পর থেকে তার কাছে থেকেই বড় হচ্ছে। সুমাইয়ার মা হনুফা প্রতিদিন সকালে এসে শাহবাগ থেকে ফুল কিনে মেয়েকে বিক্রির জন্য দিয়ে যান। ফুল বিক্রি করে যে টাকা মুনাফা হয়, তা নানির কাছে জমা রাখে সুমাইয়া।
রুপজান বেগম জানান, ছোট্ট সুমাইয়ার মিষ্টি চেহারা দেখে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঘুরতে আসা তরুণ-তরুণীরা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অনেকেই নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি টাকা দিয়ে ফুল কিনে নেয়।
সুমাইয়ার মুনাফার টাকা অল্প অল্প করে জমিয়ে গ্রামে ৫২ হাজার টাকা দিয়ে জমি রেখেছেন। ওই জমি এখন বর্গা রেখে চাষ করাচ্ছেন।
রুপজান জানান, সুমাইয়ার বাবা নেই, মা থেকে নতুন সংসার ও ওই ঘরে ছেলেমেয়ে থাকায় সেভাবে সুমাইয়াকে সময় দিতে পারেন না। তাই সুমাইয়ার ভবিষ্যতের জন্য টাকা সঞ্চয় করছেন তিনি।
সুমাইয়া, তুমি কি জমির মালিক? প্রশ্ন করতেই সুমাইয়ার মুখজুড়ে হাসি। লজ্জাবনত হয়ে তার উত্তর, ‘আমি জানি না, নানি জানে।’
ঘণ্টাখানেক পরে আবারও সুমাইয়ার দেখা মেলে। সুন্দর একটি জামা পরে গোলাপ ফুল বিক্রি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে সে।