বাংলাদেশে পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের হাতে ‘উচ্চ হারে’ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং গুম নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ।
মানুষের রাজনৈতিক ও নাগরিক অধিকার নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ও উদ্যোগের পর্যালোচনা শেষে গত মঙ্গলবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ উদ্বেগের কথা জানায় জাতিসংঘ।
এক্ষেত্রে ছয় মাসের মধ্যে বিরোধীদলীয় তিন নেতার ছেলেদের গুমের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। গুমের শিকার ওই তিনজন হলেন বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের ছেলেরা।
এদের মধ্যে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অপরাধী প্রমাণিত হওয়ায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরীকে কিছুদিন আগে রাস্তায় ফেলে গেছেন কে বা কারা।
কিন্তু অপর দুইজন জামায়াতের সাবেক নেতা যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা মীর কাশেম আলীর ছেলে আইনজীবী মীর আহমেদ বিন কাশেম এবং গোলাম আযমের ছেলে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল্লাহিল আমান আল-আযমী এখনও গুম রয়েছেন।
এদিকে, জাতিসংঘের পর্যবেক্ষণে ধর্ম ও গোষ্ঠীগত বৈষম্য, রাজনৈতিক অধিকার, নারী নির্যাতন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সন্ত্রাসবিরোধী লড়াই, বিশেষ ক্ষমতা আইন, বাল্যবিয়ে আইন নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশকে অবশ্যই বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম ও রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে ব্যবহারের বিষয়ে তদন্ত করতে বলেছে জাতিসংঘ।
গুম বিষয়ে জাতিসংঘ বলেছে, এ নিয়ে অবশ্যই সত্য জানাতে হবে। গুমের শিকার ব্যক্তির লোকজনকে ঘটনার অগ্রগতি ও তদন্ত সম্পর্কে বলতে হবে।
চলতি মাসের শুরুর দিকে জেনেভায় ইন্টারন্যাশনাল কভনেন্ট অন সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটসের (আইসিসিপি) সভায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার বাস্তবায়নে তার সকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন।
সভাতে আনিসুল হক বলেন, দেশে অল্প পরিমাণে যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে সে বিষয়ে সরকার কার্যকর ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে ওঠা যেকোনো অপরাধের ক্ষেত্রেও সরকার জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছে বলে দাবি তার।
জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০০৮৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৩০০ জনকে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও ৩২৫ জনকে গুম করা হয়েছে। এ হিসাব বাংলাদেশের মানবাধিকার কমিশনগুলোর। এরআগে বিগত বিএনপি সরকারের আমলেও অনেকটা একইহারে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
এছাড়া জাতিসংঘ কমিটি ২০১৬ সালে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের আওতায় বাংলাদেশ ৩৫ জন সাংবাদিক, প্রগতিশীল ব্লগার ও মানবাধিকার কর্মীকে গ্রেফতারের সমালোচনা করেছে।