মৌলভীবাজারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঘেরাও করে রাখা দুটি আস্তানায় এক ডজনের বেশি জঙ্গি রয়েছে- এমনটি ধারণা কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি)।
সিটিটিসি ডিসি মহিবুল ইসলাম খান জানান, দুই জঙ্গি আস্তানার একটিতে আট থেকে ১০ জন এবং আরেকটিতে চার থেকে পাঁচ জঙ্গি থাকতে পারে। পুলিশের সহায়তায় রাত থেকে বাড়ি দুটি ঘেরাও করে রাখা হয়েছে। জঙ্গিরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর গ্রেনেড ছুড়েছে, এর জবাবে গুলি চালানো হয়েছে।
সোয়াট (কাউন্টার টেরোরিজমের বিশেষ ইউনিট) আসলে অভিযান চালানো হবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে বুধবার সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, মৌলভীবাজারে সন্দেহে থাকা দুটি জঙ্গি আস্তানার মধ্যে একটিতে তিন-চারজন আরেকটিতে তারও কিছু বেশি জঙ্গি থাকতে পারে। এর মধ্যে দু-একজন নারীও থাকতে পারেন।
দুই আস্তানায় জঙ্গিদের বিশেষ কেউ আছে কিনা- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, হয়তো বড় কেউ থাকতে পারে। তবে এখনই বলতে পারছি না। সেখানে গোলাগুলি হচ্ছে। পুলিশের বিশেষ ইউনিট সোয়াট বাহিনী রওনা হয়েছে। তারা সেখানে গেলেই কাজ শুরু করবে।
সিলেটের মতো এ অভিযানে সেনাবাহিনীর সহায়তা নেওয়া হবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, যদি প্রয়োজন হয় নেওয়া হবে। তবে সোয়াট বাহিনীই যথেষ্ট।
সিলেটে জঙ্গি আস্তানা আতিয়া মহলে ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ শেষ হওয়ার পরের দিন বুধবার ভোররাত থেকে মৌলভীবাজারে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে দুটি বাড়ি ঘিরে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট।
দুটি জঙ্গি আস্তানার একটি মৌলভীবাজার পৌরসভার বড়হাট এলাকায়। অপরটি সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নের নাসিরপুর গ্রামে।
মৌলভীবাজার পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার রাশেদুল ইসলাম বলেন, বুধবার সকালে জঙ্গিরা আস্তানার ভেতর থেকে বেশ কয়েকটি গ্রেনেড চার্জ করে। এ কারণে তারা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে পদক্ষেপ নিচ্ছেন। ধারণা করা হচ্ছে, তাদের হাতে বিপুল অস্ত্র-বিস্ফোরক রয়েছে।
রাশেদুল ইসলাম জানান, উভয় আস্তানাতেই জঙ্গিরা শক্ত অবস্থানে রয়েছে। তাদের কোণঠাসা করতে এরই মধ্যে সকল প্রয়োজনীয় কৌশল নেয়া হয়েছে। ভোররাত থেকে অত্যন্ত সাফল্যের সাথে দুটি আস্তানার আশপাশের বাড়ি থেকে কৌশলে বাসিন্দাদের সরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যেও দুটি জঙ্গি আস্তানায় বিস্ফোরণ ও গুলির শব্দ শোনা যায়। সাড়ে ১০টার দিকে বড়হাটের আস্তানার ভেতরে বিকট শব্দে তিনটি গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটায় জঙ্গিরা, জানান তিনি।
বেলা সাড়ে ১০টার পর ঘটনাস্থলে পৌঁছে র্যাব- ৯ এর বিপুলসংখ্যক সদস্য। যোগ দেয় ফায়ার সার্ভিস। আগে থেকেই বাড়ি দুটির আশপাশের লোকজনকে সরিয়ে দেয় পুলিশ। র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য আরো বাড়ানোর পর অভিযানস্থলসংলগ্ন এলাকা থেকেও উৎসুক লোকজনকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
মৌলভীবাজার পৌরসভার কাউন্সিলর জালাল আহমেদ জানান, বড়হাট এলকায় তিনতলা এবং খলিলপুর ইউনিয়নের সরকার বাজার এলাকার নাসিরপুর গ্রামের যে একতলা বাড়িটি রয়েছে তার মালিক সাইফুর রহমান। তিনি লন্ডন প্রবাসী।
জাগো নিউজের মৌলভীবাজার প্রতিনিধি জানান, নাসিরপুর গ্রামের জঙ্গি আস্তানা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে তিনটি গ্রেনেড ছোড়া হয়েছে। এছাড়া গোলাগুলিও চলছে।
দুই আস্তানার বাড়ির মালিক একই ব্যক্তি
মৌলভীবাজারের বড়হাট ও নাসিরপুর গ্রামের জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে পুলিশ যে দুটি বাড়ি ঘিরে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ তার মালিক একই ব্যক্তি। তিনি লন্ডন প্রবাসী সাইফুর রহমান।
মৌলভীবাজার পৌরসভার কাউন্সিলর জালাল আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বড়হাট এলকায় তিনতলা এবং খলিলপুর ইউনিয়নের সরকার বাজার এলাকার নাসিরপুর গ্রামের যে একতলা বাড়িটি রয়েছে তার মালিক সাইফুর রহমান। তিনি লন্ডন প্রবাসী।
নাসিরপুর গ্রামের সন্দেহভাজন আস্তানা থেকে আটক ১১
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার নাসিরপুর গ্রামের সন্দেহভাজন জঙ্গি আস্তানা থেকে ১১ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই ১১ জন জঙ্গি কিনা- তা এখনও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সিলেটের ডিআইজি কামরুল আহসান বলেন, ‘অভিযান শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না। ভেতরে ১১-১২ জনের মতো জঙ্গি থাকতে পারে।’
নাসিরপুর গ্রামের ওই বাড়ির মালিক সাইফুর রহমান। তিনি লন্ডন প্রবাসী। তার ওই বাগান বাড়িতে দুটি সেমি পাকা এবং একটি একতলা পাকা ভবন রয়েছে। সেখান থেকে ১১ জনকে আটক করেছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাউম ইউনিট।
ভুয়া পরিচয় দিয়ে বাসা ভাড়া নেয় জঙ্গিরা
নাসিরপুর গ্রামের ওই বাড়ি দুই মাস আগে ভুয়া পরিচয় দিয়ে মাসিক সাত হাজার টাকায় ভাড়া নেয় জঙ্গিরা। লন্ডন প্রবাসী সাইফুর রহমানের ফুফাতো ভাই আতিক মিয়া জানান, দুই মাস আগে ভুয়া পরিচয় দিয়ে মাসিক সাত হাজার টাকায় বাড়ি ভাড়া নেয় জঙ্গিরা। বাগান বাড়ির ভেতরে থাকা একতলা বাড়িতে দুই পুরুষ, একজন নারী ও দুটি বাচ্চা থাকতো। ওই বাড়িতে ভাড়াটিয়া ছাড়াও কেয়ারটেকার জুয়েল আহমেদ ও তার ফুফাতো বোন থাকেন। এছাড়া এক রিকশাচালকও থাকেন সেখানে।
নাসিরপুর গ্রামে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার নাসিরপুর গ্রামে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া জঙ্গি আস্তানার আশপাশের এলাকা থেকে লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে পুলিশ মাইকিং করছে। এরই মধ্যে ওই বাড়ির এক কিলোমিটার এলাকার মধ্যে থাকা লোকজনকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেটের ডিআইজি কামরুল আহসান।