মৈত্রী ট্রেনের চার বছর পূর্তি আজ : আশানুরুপ যাত্রী সংখ্যা নেই

মৈত্রী ট্রেনের চার বছর পূর্তি আজ : আশানুরুপ যাত্রী সংখ্যা নেই

দীর্ঘ ৪ বছরেও সফলতা আসেনি ভারত-বাংলাদেশে চলাচলকারী মৈত্রী ট্রেনের। শুরুর দিকে মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনটিতে বড় ধরনের যাত্রী সংকট দেখা দিলেও সে সংকট কাটিয়ে উঠেছে ট্রেনটি। তারপরও আশানুরম্নপ যাত্রী না পাওয়ায় লোকশানের বোঝা মাথায় নিয়েই চলাচল করছে বহুল আলোচিত মৈত্রী এক্সপ্রেস। যাত্রীরা বলছেন, দীর্ঘ সময় ধরে যাত্রা-বিরতি, ভারতের গেঁদেতে চেকিংয়ের নামে সময় ক্ষেপন এবং হয়রানির কারনে দিনে দিনে যাত্রী সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। তাছাড়া যাত্রীদের দাবি, শুধু ঢাকা থেকে নয়,এর মাঝামাঝি ঈশ্বরদী অথবা চুয়াডাঙ্গার দর্শনা স্টেশনে যাত্রী ওঠার ব্যাবস্থা থাকলে আরো গতিশীল হবে যাত্রী সংখ্যা।

জানা গেছে, বাংলাদেশ ভারত মৈত্রী ট্রেনের চলাচল শুরু হওয়ার পর ইতিমধ্যেই পেরিয়ে গেছে ৪ বছর। ২০০৮ সালের ১৪ এপ্রিল আজকের এই দিনে আনুষ্ঠানিকভাবে মৈত্রী ট্রেন চলাচল শুর করে। শুরু থেকেই যাত্রীসংখ্যা ছিল হতাশাজনক। উদ্বোধনী দিনে বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাওয়ার ট্রেনে ৭টি বগিতে আসন ছিল ৪২৫। ওইদিন ওই ট্রেনে যাত্রী ছিল ৩৩৩ জন। পরের দিনই যাত্রীসংখ্যা হ্রাস পেয়ে ৫০ জনে দাঁড়ায়।

দর্শনা আন্তর্জাতিক রেলওয়ে স্টেশন সূত্র জানায়, বহু প্রতিক্ষিত মৈত্রী ট্রেনে গত ৪ বছরে বাংলাদেশ থেকে  ভারতে গেছে  ৩৮ হাজার ৩৩৯ জন।  ভারত থেকে বাংলাদেশে এসেছে ৩৫ হাজার ৫০১ জন।

বাংলাদেশ রেলওয়ে দর্শনা আনর্ত্মজাতিক স্টেশনের হিসাবে মতে, ২০০৮ সালের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ভারতে গেছে ৩ হাজার ৫৬ জন। এ সময়ে  ভারত থেকে বাংলাদেশে এসেছে ২ হাজার ২৩৮ জন।

২০০৮-জুলাই থেকে জুন ২০০৯ পর্যনত্ম  বাংলাদেশ থেকে ভারতে গেছে ৭ হাজার ৮শ জন এবং ভারত থেকে বাংলাদেশে এসেছে ৭ হাজার ৫৬১ জন।

২০০৯-জুলাই থেকে জুন ২০১০ পর্যন্ত  বাংলাদেশ থেকে ভারতে গেছে ৬ হাজার ৬ শ ৯৯ জন এবং ভারত থেকে বাংলাদেশে এসেছে ৬ হাজর ৪ শ ১৬ জন।

সর্বশেষ ২০১১-জুলাই থেকে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত  বাংলাদেশ থেকে ভারতে গেছে ১১ হাজার ৫ শ ৪৭ জন এবং ভারত থেকে বাংলাদেশে এসেছে ১০ হাজার ৫শ ৯০ জন।

গত বুধবার ভারত থেকে বাংলাদেশে আসা মৈত্রী ট্রেনে যাত্রী সংখ্যা ছিল মাত্র ১৫৩ জন। এর মধ্যে বাংলাদেশী নাগরিক যাত্রী ছিল ১৩২ জন, ভারতীয় নাগরিক যাত্রী ছিল ২০ জন এবং ফ্যান্সের নাগরিক যাত্রী ছিল ১ জন।

গতকাল শুক্রবার সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে ১৩৩ জন যাত্রী নিয়ে ৪ বছর পূর্তির বিশেষ মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনটি ভারতের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। এর মধ্যে বাংলাদেশী যাত্রী ছিল ৯৬ জন, ভারতীয় ৩৩ জন,বিট্রিশ ২ জন ও ১ জন করে যাত্রী ছিলেন কানাডিয়ান এবং জার্মানি নাগরিক।

শুক্রবার দর্শনা স্টেশনে ভারতগামী টাঙ্গাইলের সাচ্চু নামে এক যাত্রীর সাথে আলাপকালে তিনি জানান, এর আগেও তিনি মৈত্রী এক্সপ্রেসে করে ভারতে গেছেন। তিনি বলেন,আগে দর্শনাতে কাস্টমস ইমিগ্রেমনের জন্য ২ ঘন্টা বিরতি থাকলেও এখন তা কমিয়ে ১ ঘন্টায় নিয়ে আসা হয়েছে। এতে করে যাত্রীদের দূর্ভোগ অনেকটা লাঘব হয়েছে।

ঢাকা খিলখেতের শাহানাজ বেগম নামে এক যাত্রী জানান,বাংলাদেশ থেকে ভারতগামী যাত্রীদের তেমন কোন অসুবিধা না হলেও ভারতের গেঁদে স্টেশনে কাস্টমস ও ইমিগ্রেশনের নামে বাংলাদেশী যাত্রীদের হয়রানী করা হয়।

পিরোজপুরের আব্দুর মাজেদ নামে এক যাত্রী জানান, আমি মৈত্রী ট্রেনে ভারতে যাওয়ার জন্য ঢাকায় গিয়ে ট্রেনে উঠতে হয়েছে। যদি দর্শনা অথবা ঈশ্বরদী স্টেপেজ থাকতো তা হলে আমাদের জন্য ভাল হতো।

মৈত্রী ট্রেনের সাথে সম্পৃক্ত একজন কর্মকর্তা নিজের নাম পদবী গোপন রাখার শর্তে বলেন, মৈত্রী ট্রেন চলাচল শুরুর পর থেকে আমি অনেক যাত্রীর সাথে কথা বলেছি। বেশিরভাগ যাত্রীর অভিযোগ ভারতের গেদে স্টেশনে যাত্রীদের খুব বেশি হয়রানি করা হয়।

চুয়াডাঙ্গার দর্শনা স্টেশন মাস্টার মীর লিয়াকত হোসেন জানান, সপ্তাহে গড়ে ৪ দিন চলাচল করে ভারত বাংলাদেশ মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনটি। তিনি জানান, বাংলাদেশ থেকে প্রতি শুক্রবারে ট্রেনটি ভারতে যায় এবং ফেরে পরদিন শনিবারে । একই ভাবে ভারত থেকে প্রতি মঙ্গলবারে বাংলাদেশে আসে ট্রেনটি বুধবারে ফিরে যায়।

বাংলাদেশ থেকে ভারতের উদ্দেশ্যে যাওয়া ট্রেনটিতে আসন থাকে সংখ্যা ২৩৪ ভারতের ট্রেনে আসন সংখ্যা ২৫৮। ট্রেনের  এসির রুমের বাড়া  ১ হাজার ৬১০ টাকা সাথে ভ্রমন ট্রেক্স ৩০০ টাকা।  এসি চেয়ার ৯০০ ভ্রমন ট্রেক্স ৩০০ টাকা এবং  চেয়ার শোভন ৫৬০ ভ্রমন ট্রেক্স ৩০০ টাকা ।

চুয়াডাঙ্গার দর্শনা রেলওয়ে ল্যান্ড কাস্টমস এর সুপারিনটেনডেন্ট ভারপ্রাপ্ত আব্দুস সালাম বলেন, এ রুটের ট্রেন ভ্রমন বেশ চমৎকার। সড়ক পথে দূর্ঘটনার ঝুকি থাকলেও রেলপথে খুবই কম। কিন্তু গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার না হওয়ায় মৈত্রী ট্রেনে আশানুরুপ যাত্রী হচ্ছেনা।

বাংলাদেশ