সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি এলাকায় আতিয়া মহলে বিস্ফোরক অপসারণ অভিযান চলাকালে মঙ্গলবার বেলা সোয়া একটার দিকে বিকট শব্দে চারটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। তবে এতে কেউ আহত হননি।
এ অবস্থায় হাতে তৈরি বোমা অপসারণ ঝুকিপূর্ণ হওয়ায় বোমা ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইইডি শনাক্ত ও নিষ্ক্রিয় করতে এখন ড্রোনসহ উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার শুরু করছে সেনাবাহিনী। ড্রোন ও এ ধরনের দূরনিয়ন্ত্রিত প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভবনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকা গ্রেনেড ও বিস্ফোরক দ্রব্য শনাক্ত ও নিষ্ক্রিয় করার কাজ চলছে।
মঙ্গলবার সেনাবাহিনীর দায়িত্বশীল একটি সূত্র এ তথ্য জানায়। সূত্রটি আরো জানায়, আতিয়া মহলের যেখানে-সেখানে অবিস্ফোরিত অবস্থায় হাতে তৈরি গ্রেনেড ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। এ ধরনের গ্রেনেড খুব বিপজ্জনক।
বিশেষ করে যদি পিন খোলা অবস্থায় কোনো গ্রেনেড পড়ে থাকে, তাহলে যেকোনো সময় বিস্ফোরিত হতে পারে। সেক্ষেত্রে সেগুলো শনাক্ত ও উদ্ধার করা জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। তাই ড্রোন ও এ ধরনের দূরনিয়ন্ত্রিত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে।
সেনাবাহিনীর আরেকজন কর্মকর্তা জানান, আপাতত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তৈরি দূরনিয়ন্ত্রিত একটি কোয়াডকপটার ব্যবহার করা হচ্ছে। সেনাবাহিনীরও নিজস্ব ড্রোন আছে। তবে সেগুলো ঢাকা থেকে আনতে সময় লাগায় এগুলো দিয়ে আপাতত চেষ্টা করা হচ্ছে।
সকাল থেকে আতিয়া মহলে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো দলের অভিযান চলছে। সোমবার রাত থেকে বেলা একটা পর্যন্ত কোনো গুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ পওয়া না গেলেও বেলা সোয়া একটার দিকে চারটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।
সকালে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (গণমাধ্যম) জেদান আল মুসা জানান, আতিয়া মহলের ভেতরে ঢুকেছে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো দল। সেখানে বিস্ফোরক দ্রব্য শনাক্ত ও নিষ্ক্রিয় করার কাজ চলছে।
এরআগে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়িতে জঙ্গি আস্তানা ‘আতিয়া মহলে’ নিহত চার জঙ্গির মধ্যে অপর দু`জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মরদেহগুলো মর্গে আনার প্রস্তুতি চলছে।
এদিকে আতিয়া মহলের আশপাশের এলাকায় ১৪৪ ধারা এখনো জারি রয়েছে। আতিয়া মহল ঘিরে তিন বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে সাধারণের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে, অভিযান শেষ না হওয়া পর্যন্ত সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কে চলাচল নিয়ন্ত্রিত থাকবে। গণমাধ্যমকর্মীরাও নির্দিষ্ট দূরত্বে অবস্থান করছেন।
দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি এলাকার আতিয়া মহলের নিচতলায় জঙ্গিরা অবস্থান করছে এমন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট ও মহানগর পুলিশের একটি দল গত বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) রাত আড়াইটার দিকে জঙ্গিদের ফ্ল্যাটের দরজায় তালা লাগিয়ে দিয়ে পুরো ভবনটি ঘিরে রাখে পুলিশ।
শুক্রবার (২৪ মার্চ) সকাল ৮টার দিকে ওই বাড়ির ভেতর থেকে পুলিশকে লক্ষ করে গ্রেনেড ছোড়া হয়। পরে ঢাকা থেকে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট সোয়াটকে পাঠানো হয় ঘটনাস্থলে।
তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সন্ধ্যা থেকে পুরো এলাকার নিয়ন্ত্রণে নেয় সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ডো দল। পরদিন তারা ওই ভবনের ২৯টি পরিবারের ৭৮জন বাসিন্দাদেরকে জঙ্গিদের জিম্মিদশা থেকে উদ্ধার করে নিরাপদে সরিয়ে নেন তাঁরা।
২৫ মার্চ সন্ধ্যায় অভিযান নিয়ে সেনবাহিনীর প্রেসব্রিফিং শেষ দুই দফা বিস্ফোরণে দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ ছয় জন নিহত হন। আহত হন র্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধানসহ ৪৬ জন।
অভিযানের চতুর্থ দিনে গত সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় প্রেসব্রিফিংয়ে সেনাবাহিনী জানায়, অভিযানে এ পর্যন্ত চার জঙ্গি নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে আছে তিন পুরুষ ও এক নারী। ভবনের ভেতরে আর কোনো জীবিত জঙ্গি নেই।
তবে পঞ্চম দিনের মতো ওই ভবনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিস্ফোরক অপসারণে অভিযান চালাচ্ছেন সেনা কমান্ডোরা।