‌‌তদন্তে জানা যাবে তারেক-কোকো কত টাকা বিদেশে পাচার করেছে’

‌‌তদন্তে জানা যাবে তারেক-কোকো কত টাকা বিদেশে পাচার করেছে’

প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, তদন্ত কাজ শেষ হলে দেশবাসী জানতে পারবে তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোসহ বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে মোট কত টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে।

বুধবার জাতীয় সংসদে নির্ধারিত প্রশ্নোত্তরে নাজমা আকতারের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোসহ বিগত জোট সরকারের আমলে বিদেশে পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনতে মানি লন্ডারিং আইনসহ অন্যান্য বিধি ভ্রাম্যমাণ আদালত বিধান সংশোধন করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সন্দেহজনক লেনদেন পর্যালোচনা করা হচ্ছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট দশটি দেশের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের সঙ্গে সমঝোতা স্বাক্ষর করেছে।’

নাজমা আকতার জানতে চান, তারেক-কোকোর পাচার করা টাকার যেগুলো উদ্ধার হয়েছে সেগুলো দিয়ে দুর্নীতি বিরোধী সংগঠনের প্রচারণায় ও দেশের সাতটি বিভাগে দুর্নীতিবিরোধী স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হবে কি-না?

এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এরই মধ্যে সিঙ্গাপুরে পাচার করা ২০ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার ৬১৩ কোটি টাকা ফেরত এনে বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা করা হয়েছে। এই টাকা দুর্নীতিবিরোধী সংগঠনের প্রচারণায় ও দেশের সাতটি বিভাগে দুর্নীতিবিরোধী স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করার বিষয়টি বিবেচনা করে দেখা যেতে পারে।’

মেহের আফরোজের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, আগামী বছরের মার্চ মাস নাগাদ মেট্রোরেল নির্মাণের বিষয়ে জাপান সরকারের সঙ্গে লোন নেগোসিয়েশনের কাজ শেষ হবে।

তিরি আরও বলেন, ‘বর্তমান সরকারের মেয়াদের মধ্যেই মেট্রো রেলের কাজ শুরু করে একটি উল্লেখযোগ্য অংশ শেষ করার ব্যাপারে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।’

ফরিদুল হক খানের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে সরকার কৃষি মন্ত্রণালায়ের মাধ্যমে এরই মধ্যে ৫২টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। আরও ৪৭টি নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নধীন রয়েছে। এছাড়া ১৮টি নতুন প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।’

একই প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা জানান, চলতি অর্থবছরে সার ও অন্যান্য কৃষি কার্যক্রমে সাড়ে চার হাজার কোটি ভর্তুকির জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

কামাল আহমেদ মজুমাদরের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, ভারতের বাজারে বাংলাদেশের ৪৬টি পোশাকজাত পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশের সুযোগ পাওয়ায় সম্প্রতি রপ্তানির সীমা আট মিলিয়ন পিস থেকে দশ মিলিয়ন পিসে উন্নীত হয়েছে।

আশরাফুন নেছা মোশারফের প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা বলেন, ‘শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আওতায় বিভিন্ন জেলায় অবস্থিত চারটি প্রকল্পের ২৬টি কারিগরী প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে বছরে ২০ হাজার শিক্ষিত ও স্বল্প শিক্ষিত বেকার যুবক ও যুব মহিলাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।’

এবিএম আবুল কাশেমের তথ্য প্রযুক্তি সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, টেলিফোন শিল্প সংস্থার (টেশিস) ল্যাপটপ প্ল্যানটি প্রায় দুশ কোটি টাকার। টেশিসের তৈরি ল্যাপটপ ‘দোয়েল’ এর উপর তেমন কোনও মুনাফা ধরা হয়নি। জনগণের স্বার্থে এর দাম সংযোজন দামের কিছুটা নিচে ধরা হয়েছে।’

জলবায়ু পবির্তন মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সাহায্য প্রসঙ্গে মো. রহমত আলীর প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা জানান, বাংলাদেশ ক্ল্যাইমেট চেঞ্জ রিসাইলেন্স ফান্ড (বিসিসিআরএফ) এ পর্যন্ত ১২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আর্থিক সহায়তা পাওয়া গিয়েছে। এছাড়া দেড়শ’ থেকে দুশ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পাওয়ার বিষয়ে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।

একই প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী আরও জানান, গত ৩১ মে, ২০১০ এ বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাজ্য, ডেনমার্ক, সুইডেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বিসিসিআরএফ গঠনের বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। ওই স্মারক অনুযায়ী মোট একশ ২৫ দশমিক ৮৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পাওয়া গেছে।

এর মধ্যে যুক্তরাজ্য ৮৬ দশমিক ৭, ডেনমার্ক ১ দশমিক ৬, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ১০ দশমিক ৪, সুইডন ১১ দশমিক পাঁচ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়েছে। পরে সুইজারল্যান্ড ৩ দশমিক চার ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন আরও ১২ দশমিক ২৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী

মো. শফিকুল ইসলামের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাজারে অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে প্রতিযোগিতা আইন, ২০১১ মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী জানান, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলা শহরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এ যাবৎ ২ হাজার ছয়শ’ ৩৮টি অভিযান পরিচালনা করেছে। এসব অভিযান থেকে ২ কোটি ৭৮ লাখ আড়াই হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।

একই প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন, অ্যান্টি হোডিং আইন হাল নাগাদ করায় যে কোনও ব্যবসায় সিন্ডিকেটের অস্তিত্ব মুছে গেছে।

বাংলাদেশ রাজনীতি