জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণ ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখার দৃঢ় প্রত্যয়ের মধ্যদিয়ে গতকাল রোববার রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপিত হয়েছে।
স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে রাজধানী ঢাকায় দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এসব কর্মসূচি থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক আধুনিক উন্নত রাষ্ট্র বিনির্মাণ ও মুক্তিযুদ্ধের সুমহান চেতনা সমুন্নত রাখার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়।
দিবসটি উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে জাতি উদযাপন করে এই দিনটিকে। সূর্যোদয়ের মুহূর্তে তেজগাঁও পুরনো বিমানবন্দর এলাকায় ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সব সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-সরকারি ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।
দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির মধ্যে ছিল জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন, বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে শিশু-কিশোরদের কুচকাওয়াজ ও ঢাকায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন, সরকারি ভবনে আলোকসজ্জা, দেশজুড়ে মসজিদ, মন্দির ও প্যাগোডয় দেশের কল্যাণ কামনায় প্রার্থনা ও নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্র, হাসপাতাল, জেলাখানা, সরকারি শিশুসনদসহ অনুরূপ প্রতিষ্ঠান সমূহে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়।
সকালে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে জাতির পক্ষে মুক্তিযুদ্ধের অমর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।
ভোর ৬টায় প্রথমে রাষ্ট্রপতি ও পরে প্রধানমন্ত্রী স্মৃতিসৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন তারা। এ সময় বিউগলে করুণ সুর বেজে ওঠে এবং সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড-অব-অনার প্রদান করে। রাষ্ট্রপতি স্মৃতিসৌধের পরিদর্শন বইয়েও স্বাক্ষর করেন।
প্রধানমন্ত্রী পরে আওয়ামী লীগ মন্ত্রী পরিষদ, উপদেষ্ঠা পরিষদের সদস্য ও কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে দলের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
এ সময় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সভাপতি মন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, এডভোকেট সাহারা খাতুন, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ড. আব্দুর রাজ্জাক, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ও খাদ্যমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলামসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
স্পীকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী, চিফ হুইপ, সংসদ সদস্যরা, তিন বাহিনীর প্রধান, কূটনীতিক, উচ্চপদস্থ সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ ও বীরশ্রেষ্ঠ পরিবারের সদস্য, গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে রক্ষিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। পরে আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে তিনি শ্রদ্ধা জানান। সকাল থেকে দলীয় নেতা-কর্মীসহ অনেক শ্রেণী-পেশার মানুষ বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে জড়ো হন ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে।
স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার এডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
দিনটি ছিল সরকারি ছুটির দিন। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে ঢাকা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ও সড়ক দ্বীপসমূহ জাতীয় পতাকাসহ বিভিন্ন পতাকায় সজ্জিত করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পৃথক বাণী দেন। দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে সংবাদপত্রসমূহ বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে এং বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার, এবং বিভিন্ন বেসরকারি রেডিও, টেলিভিশন বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করে।
এদিকে সকালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে শিশু-কিশোর সমাবেশ ও কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী কুচকাওয়াজসহ বিভিন্ন শারীরিক কসরত প্রদর্শন করে। এ সময় প্রধান অতিথি হিসাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন।
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি, জাসদ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, গণফোরামসহ বিভিন্ন সংগঠন জাতীয় স্মৃতি সৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
এছাড়াও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, আওয়ামী যুবলীগ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, যুবলীগ মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, ছত্রলীগ মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রলীগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, আমার মুক্তিযোদ্ধার সন্তানসহ বিভিন্ন সংগঠন বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে।
এদিকে ৪৫ বছর আগে ২৫ মার্চ কালরাতের দুঃসহ সেই স্মৃতি নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে শনিবার স্বাধীনতা দিবসে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত ৩৬ মাইল পথ হাঁটার কর্মসূচি পালন করে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর।
দিবসটি উপলক্ষে ছায়ানট, জাতীয় জাদুঘর, জাতীয় প্রেসক্লাব, অফিসার্স ক্লাব ঢাকা, বাংলাদেশ শিশু একাডেমী, বঙ্গবন্ধু গবেষনা পরিষদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস(বিইউপি), জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি বিস্তারিত কর্মসূচি পালন করে।