‘বাংলাদেশ ফান্ড’ নিজেই তারল্য সংকটে

পুঁজিবাজারে তারল্য সংকট কাটিয়ে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে ‘বাংলাদেশ ফান্ড’ নামে ৫ হাজার কোটি টাকার একটি ওপেন অ্যান্ড মিউচ্যুয়াল ফান্ড গঠন করা হলেও এ ফান্ডটি নিজেই এখন বড় ধরনের তারল্য সংকটের মুখে পড়েছে।

ফান্ডের উদ্যোক্তা এবং সহযোগী উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানসমূহের কাছ থেকে দেড় হাজার কোটি টাকা এবং বাকি সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা ইউনিট বিক্রির মাধ্যমে সংগ্রহ করার কথা ছিল।

জানা যায় ফান্ডটির ইউনিট বিক্রির কার্যক্রম শুরু হলেও তাতে স্থানীয়ভাবে প্রতিষ্ঠানিক বা ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে কোনো সাড়া মিলছে না। দেশের বাইরে রোড শো করেও ইউনিট বিক্রি বাড়াতে পারেনি ফান্ডের উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টম্যান্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)।  ফলে বাংলাদেশ ফান্ড নিজেই এখন বড় ধরনের সংকটে পড়েছে।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ৫ হাজার কোটি টাকার ফান্ডের মধ্যে উদ্যোক্তা এবং ইউনিট বিক্রি থেকে দেড় হাজার কোটি টাকাও এখন সংগৃহীত হয়নি। একটি উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান তাদের প্রতিশ্রুত অর্থ যোগান না দেয়ায় ফান্ডের পরিমান দেড় হাজার কোটি টাকার কোটা পার হতে পারে নি। ফলে তহবিল সংগ্রহে উদ্যোক্তার কাছ থেকেই বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে।

উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রতিশ্রুত অর্থ না পাওয়ার বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইসিবির উর্দ্বতন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা শুধু একটি সহযোগী উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রতিশ্রুত অর্থের অংশ বিশেষ পেয়েছি। প্রতিশ্রুত অর্থ যোগান দেওয়ার জন্য আমরা তাদের চিঠি দিয়েছি। আশা করছি তারা তাদের অর্থ যোগান দিবে।’ কি পরিমাণ ইউনিট বিক্রি হয়েছে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলেননি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ফান্ডের সহযোগী উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান জীবন বীমা কর্পোরেশন ১০০ কোটি টাকা যোগান দেওয়ার কথা থাকলেও তারা মাত্র ২ কোটি টাকা দিয়েছে।

এদিকে উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ না পাওয়ার পর ইউনিট বিক্রিতেও বড় ধরনের হোঁচট খেয়েছে বাংলাদেশ ফান্ড। ব্যাংক, বীমা, আর্থিক  প্রতিষ্ঠান, অন্যান্য মিউচুয়াল ফান্ডসহ বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী কাছে বাংলাদেশ ফান্ডের ইউনিট ক্রয়ে চিঠি দেওয়া হলেও এসব প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। শেয়ারবাজারে ধস এবং বড় ধরনের তারল্য সংকটের কারণে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশ ফান্ডে বিনিয়োগে কোনো ধরনের আগ্রহ দেখায়নি।

অন্যদিকে ফান্ডের ইউনিট বিক্রি করতে বিদেশে প্রবাসী বাংলাদেশীদের টার্গেট করা হয়। এজন্য সংযুক্ত আবর আমিরাত ও যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশী অধ্যুষিত বিভিন্ন শহরে রোড শোর আয়োজন করা হয়। কিন্তু এসব রোড শো থেকেও প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। ফলে ‘বাংলাদেশ ফান্ড’ এখন নিজেই অর্থ সংকটের মধ্যে পড়েছে।

বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে বাংলাদেশ ফান্ড বাজারে স্থিতিশীলতার জন্য গঠিত হলেও বাজার স্থিতিশীলতায় এই ফান্ড কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি।

প্রসঙ্গত, গত ১৮ এপ্রিল বাংলাদেশ ফান্ড নামে ৫ হাজার কোটি টাকার মেয়াদহীন মিউচুয়াল ফান্ড অনুমোদন করে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)। এর আগে পুঁজিবাজারের পতনের ধারা রোধ করতে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ফান্ড গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় আইসিবি। কয়েক দফা আলোচনার পর ৬ মার্চ এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে গত ২৯ মার্চ এসইসিতে ফান্ড নিবন্ধনের আবেদন জমা দেওয়া হয়। ১৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় এ ফান্ড অনুমোদন করা হয়। এরপর ২৮ এপ্রিল বাংলাদেশ ফান্ডের আনুষ্ঠানিক রেজিস্ট্রেশন (নিবন্ধন) প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
২০১০ সালের ডিসেম্বর থেকে দেশের পুঁজিবাজারে ধস নামতে থাকে। তারল্য সংকট কাটাতে সরকারের নির্দেশে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্যোগে এ ফান্ডটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং গত বছরের ১০ অক্টোবর ফান্ডের ইউনিট বিক্রির কার্যক্রম শুরু করে।

অর্থ বাণিজ্য