পাপুয়া নিউগিনির বন্দী শিবিরে ‘শঙ্কায়’ বাংলাদেশিরা

পাপুয়া নিউগিনির বন্দী শিবিরে ‘শঙ্কায়’ বাংলাদেশিরা

পাপুয়া নিউগিনির ছোট্ট দ্বীপ মানাস আইল্যান্ডের একটি বন্দী শিবিরে গত চার বছর ধরে প্রায় ৭০ জন বাংলাদেশি বন্দী রয়েছেন। বাংলাদেশ ছাড়াও ইরান, ভারত, পাকিস্তান, সোমালিয়া এবং মিয়ানমারের রোহিঙ্গারাও এই বন্দী শিবিরে রয়েছেন। খবর বিবিসির।

এই বন্দী শিবিরের একজন বাংলােদেশের রাসেল মাহমুদ। বগুড়া থেকে মানাস আইল্যান্ড যাওয়া পর্যন্ত ভয়ঙ্কর সব কাহিনী ঘটেছে তার সঙ্গে। অথচ অবাক বিষয় হচ্ছে এত কিছুর পরেও তিনি দেশে ফিরে যেতে চান না। তার একটাই আকুতি, তাকে যেন অস্ট্রেলিয়ায় আশ্রয় দেয়া হয়।

তিনি বলেন, ‘আমি দেশে ফিরে যেতে চাই না। যদি আমাকে জোর করে দেশে ফেরত পাঠানো হয়, আমার আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না। আমি আত্মহত্যাই করবো।’

২০১৩ সালের জানুয়ারিতে রাসেল মাহমুদ বাংলাদেশ থেকে ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে মালয়েশিয়া যান। সেখানে এক সপ্তাহ থাকার পর তার যোগাযোগ হয় মানব-পাচারকারী একটি চক্রের সঙ্গে। অস্ট্রেলিয়ায় নিয়ে যাওয়ার বিনিময়ে ওই চক্রকে ৭ হাজার মার্কিন ডলার দিতে হয়েছিল।

একটি উপকূলীয় এলাকা থেকে নৌকায় করে তারা প্রথমে ইন্দোনেশিয়ায় রওনা হন। প্রায় ১৮ ঘন্টা নৌকায় ছিলেন তারা। সহযাত্রীদের মধ্যে ছিলেন অনেক রোহিঙ্গা, সোমালীয় এবং ইরানি নাগরিক। তাদের নৌকা ইন্দোনেশিয়ার উপকূলে পৌঁছায়। মেডান শহরের একটি বাড়িতে তাদের এক সপ্তাহ রাখা হয়। তারপর নিয়ে যাওয়া হয় জাকার্তায়।

জাকার্তা থেকে তাদের বিমানে করে নিয়ে যাওয়া হয় সুরাবায়া শহরে। সেখান থেকে আবারও নৌকায় করে যান অস্ট্রেলিয়ার উপকূলে। নৌকায় ছিল প্রায় একশো মানুষ। মাঝারি সাইজের নৌকায় ঘুমাতে হতো পাটাতনে। নয়দিন নয়রাত তারা সাগরেই ছিলেন।

papua

একদিন অস্ট্রেলিয়ান নৌবাহিনীর একটি জাহাজ দেখা দেখে রাসেল এবং তার সঙ্গীরা ভেবেছিলেন এবার তাদের নিশ্চয় উদ্ধার করে অস্ট্রেলিয়ায় নিয়ে যাওয়া হবে। কিন্তু তাদের ভাগ্য ছিল খারাপ।

নৌবাহিনীর জাহাজে ওঠার তিনদিন পর তাদের ক্রিসমাস আইল্যান্ডে নিয়ে যাওয়া হয়। কয়েকদিন থাকার পর তারা একটু স্বাভাবিক হলে জানানো হয় যে, তাদের আশ্রয় দেয়া হবে না।

ক্রিসমাস দ্বীপ থেকে তাদের সবাইকে নিয়ে যাওয়া হয় দূরের পাপুয়া নিউ গিনির ছোট্ট দ্বীপ মানাস আইল্যান্ডে। সেখানেই গত চার বছর ধরে তাদের বন্দী জীবন কাটছে।

মানাস দ্বীপে অস্ট্রেলিয়া এই শিবির তৈরি করেছে অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার চেষ্টা করছে এমন আশ্রয় প্রার্থীদের আটকে রাখার জন্য। এরপর এখান থেকে তাদের যার যার দেশে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করা হয়। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তরফ থেকে অস্ট্রেলিয়ার এই কার্যক্রমের তীব্র সমালোচনা হয়েছে।

প্রায় এক হাজার মানুষকে এখানে আটকে রাখা হয়েছে। গত চার বছর ধরে ক্যাম্পে একই রুটিনে বাঁধা পড়েছে তাদের জীবন। সকালে ঘুম থেকে উঠে নাশতা। এরপর সবাইকে জিমন্যাশিয়ামে গিয়ে একটু শরীর চর্চা করতে হয়। সেখান থেকে ফিরে গোসল সেরে যেতে হয় ক্লাশে। সেখানে তাদের ইংরেজী শেখানো হয়। ফিরে এসে দুপুরের খাবার। বিকেলে একটু ক্রিকেট বা ফুটবল খেলা। ফিরে এসে রাতের খাবার খেয়ে ঘুমাতে যাওয়া।

ভালো আচরণের জন্য তাদেরকে পয়েন্ট দেয়া হয়। সেই পয়েন্ট দিয়ে তারা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে পারেন। ক্যাম্পের ভেতর বিনোদনের ব্যবস্থাও আছে। টিভি, সিনেমাও দেখতে পারেন পারেন তারা।

কিন্তু তারপরও ভালো নেই এই শরণার্থীরা। তাদের বলা হয়েছে, দেশে ফিরে যাও। নইলে আমরা তোমাদের জোর করে ফেরত পাঠাবো। কিন্তু এখানকার কেউই দেশে ফিরে যেতে চান না। তারা অস্ট্রেলিয়ায় আশ্রয় চান।

আন্তর্জাতিক