জনগণের ক্ষমতায়ন নিয়ে আঙ্কারা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা

জনগণের ক্ষমতায়ন নিয়ে আঙ্কারা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা

তুরস্কে সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশটির আঙ্কারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘জনগণের ক্ষমতায়ন’র ওপর বক্তৃতাকালে বলেছেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি জনগণ বিশেষ করে নারীর ক্ষমতায়ন শান্তি ও উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত শক্তিশালী গণতন্ত্রের পথে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।

শুক্রবার তিনি এ বিশ্ববিদ্যালয়টিতে এ বক্তব্য দেন। অন্যান্যের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেক্টর প্রফেসর ড. কেমাল তালুগ বক্তৃতা করেন। সিনেট, অনুষদ সদস্য এবং শিক্ষার্থীরা এসময় উপস্থিত ছিলেন।

তিনি বলেন,‌ ন্যায়বিচার, শান্তি ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ অর্জনে জনগণকে সমাজের মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত করে দারিদ্র্য বিমোচন ও বৈষম্য দূরীকরণে শিক্ষা জনগণের ক্ষমতায়নে প্রধান চালিকাশক্তি হতে পারে। কেবল শিক্ষা ও জ্ঞান জনগণকে ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান অর্জনে সহায়ক হতে পারে, যা সামাজিক অগ্রগতি, সমতা, ন্যায়বিচার ও শান্তির জন্য অপরিহার্য। উপাদান ছয়টি হচ্ছে- দারিদ্র্য ও ক্ষুধা বিমোচন, বৈষম্য দূরীকরণ, সমাজের মূলস্রোতে অন্তর্ভুক্তকরণ, মানবসম্পদ হিসাবে গড়ে তোলা এবং সন্ত্রাস নির্মূল। আমি বিশ্বাস করি এই ছয়টি বিষয় একে অপরের ওপর নির্ভরশীল এবং সামগ্রিকভাবে তা নিরসন করতে হবে। ’

এই বিশ্বাস থেকে গত বছর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৬ তম অধিবেশনে ‘জনগণের ক্ষমতায়ন’ শীর্ষক তার দেওয়া একটি প্রস্তাব পেশ এবং পরে সর্বসম্মতভাবে তা গৃহীত হওয়ার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।

শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, শান্তি অর্জনের জন্য গণতন্ত্রের বিকল্প নেই, উন্নয়নেরও তা পূর্বশর্ত এবং শান্তি, রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার অনুশীলনের ওপর নির্ভরশীল। জনগণের মৌলিক ও সামাজিক-অর্থনৈতিক কল্যাণের অধিকার এবং সমতা বিশেষ করে মহিলা, সংখ্যালঘু ও সুবিধাবঞ্চিতদের সম-সুযোগ লাভের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য ন্যায়বিচার গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি মর্যাদাসম্পন্ন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, পণ্ডিত ও অনুষদ সদস্যদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতাদানের সুযোগ দেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেক্টরকে ধন্যবাদ জানান।

প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে শত শত বছর ধরে বিদ্যমান বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে ভ্রাতৃপ্রতীম সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন।

বাংলাদেশের রাজনীতি এবং জনগণের অর্থনেতিক মুক্তির জন্য তাঁর সংগ্রামের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা চাই জনগণ মর্যাদার সংগে এবং মুক্ত ও গণতান্ত্রিক পরিবেশে বাস করুক। স্বৈরাচার ও আধা-স্বৈরাচারী শাসকেরা আমাকে নির্বাসনে রেখে বারবার আমাদের গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করার চেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের নিরলস সংগ্রাম ও ব্যাপক ত্যাগের কারণে তাদের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ হয়েছে।

বৃহত্তর সামাজিক সাম্যতা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তাঁর সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণ এসব কর্মসূচির সুফল পেতে শুরু করেছে এবং সারা বিশ্বে তা প্রশংসিত হয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুন বাংলাদেশকে সারা বিশ্বের জন্য অনুকরণীয় উন্নয়নের মডেল হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

প্রগতিশীল ও বিশ্বায়নের যুগে জনগণের ক্ষমতায়নে আধুনিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি)’র যথাযথ ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ২০২১ সাল নাগাদ মধ্যম আয়ের দেশ ও ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত হওয়ার রূপকল্প গ্রহণ করেছে।

প্রধানমন্ত্রী এক পর্যায়ে জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির কথা উল্লেখ করে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে গিয়ে বাংলাদেশের বহু উন্নয়ন প্রচেষ্টা মুখ থুবড়ে পড়েছে। এর পরও গত তিন বছরে বাংলাদেশ শতকরা ১০ ভাগ দারিদ্র্য হ্রাস করতে সক্ষম হয়েছে।

উল্লেখ্য, এ বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে কামাল আতাতুর্ক প্রতিষ্ঠিত দেশের প্রথম উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এখানে বর্তমানে প্রায় ৪০টি বৃত্তিমূলক ও ১১৪টি আন্ডার গ্রাজ্যুয়েট এবং ১১০টি গ্রাজুয়েট কোর্সে প্রায় ৪৫ হাজার ছাত্র-ছাত্রী পড়াশোনা করছে।

বাংলাদেশ