জঙ্গি-সন্ত্রাসের স্থান বাংলাদেশে হবে না: প্রধানমন্ত্রী

জঙ্গি-সন্ত্রাসের স্থান বাংলাদেশে হবে না: প্রধানমন্ত্রী

চট্টগ্রামে জঙ্গিবিরোধী অভিযান চলার সময় রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদীদের কোনো স্থান হবে না। তিনি বলেন, এসব অপতৎপরতার বিরুদ্ধে সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়তেও সমাজের সব স্তরের মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার রাজধানীতে বিজ্ঞান শিক্ষার্থীদের বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বিজ্ঞান চর্চার পাশাপাশি গবেষণায় জোর দেয়ার আহ্বান জানান। বলেন, এ বিষয়ে সরকার সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।

প্রধানমন্ত্রী যখন এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছিলেন তখন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে সন্দেহভাজন জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের অভিযান কেবল শেষ হয়েছে। এই অভিযানে আত্মঘাতি বেল্ট পড়া এক নারী ও তার স্বামী পরিচয়ে একজন আটক হয়েছে। অন্য একটি বাড়িতে পুলিশ অভিযান চালানোর পর ‘আত্মঘাতী’ বিস্ফোরণে নিহত হয় এক নারীসহ চার জন।

গত জুলাইয়ে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার পরের ছয় মাসে রাজধানী, গাজীপুর, টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন এলাকায় জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহত হয়ে সন্দেহভাজন ৩০ জনেরও বেশি জঙ্গি। এদের মধ্যে সাম্প্রতিক জঙ্গি তৎপরতায় নেতৃত্বদানকারীরাও রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

গত ডিসেম্বরের পর থেকে জঙ্গিদের তেমন কোনো তৎপরতার কথা গণমাধ্যমে না আসলেও সাম্প্রতিককালে আবারও নানা ঘটনা এসেছে গণমাধ্যমে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের মিরসরাই ও সীতাকুণ্ডে দুটি সন্দেহভাজন আস্তানা খুঁজে পায় পুলিশ। সবশেষ গত বুধবার পাওয়া যায় সীতাকুণ্ড আস্তানাটির খোঁজ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করতে পারলেই তাদেরকে প্রতিরোধ করা যাবে। তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী নতুন একটা উপসর্গ দেখা দিয়েছে, সেটা হচ্ছে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদকাসক্তি। এর বিরুদ্ধে সকলকে জনমত সৃষ্টি করার জন্য আমি সবাইকে অনুরোধ জানাচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ছেলে-মেয়েরা অত্যন্ত মেধাবী। কেবল দেশে না, বিদেশেও যারা পড়াশোনা করে তারা তাদের মেধার দৃষ্টান্ত রেখে যাচ্ছে। এরা যেন কেউ বিপথে না যায়, এই ধরনের জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসের সঙ্গে যেন তারা সম্পৃক্ত না থাকে, সে দিকে বিশেষভাবে নজর দেয়ার জন্য শিক্ষক অভিভাবক থেকে শুরু করে সমাজের সকল স্তরের মানুষের কাছে আমি আবেদন জানাচ্ছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সকলে মিলে যদি যদি একটা সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারেন, তাহলে আমরা নিশ্চয় আমাদের দেশকে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস মুক্ত রাখতে পারবো। আমাদের সরকার এ ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, যেখানেই হোক, কোনো জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসের কোনো স্থান বাংলাদেশে হবে না। তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি।’

অনুষ্ঠানে গবেষণা ও উচ্চ শিক্ষার জন্য সরকারের নানা উদ্যোগের বর্ণনা দেন প্রধানমন্ত্রী। জানান, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে এজন্য নানা বৃত্তি ও ফেলোশিপের ব্যবস্থা করেছিল সরকার। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে তা বন্ধ করে দেয়। ভবিষ্যতে যেন এমন না হয়, সে জন্য সরকার একটি ট্রাস্ট ফান্ড করে দিয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

বিজ্ঞান নিয়ে আর বেশি গবেষণার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গবেষকদেরকে আরও বেশি সহযোগিতা কবে সরকার। তিনি বলেন, ‘মনে রাখতে হবে, আমরা স্বাধীন জাতি, যুদ্ধে বিজয়ী জাতি। এই দেশকে আমরা উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলবো।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘কারো কাছে মাথা নিচু করে আমরা চলবো না, কারো কাছে হাত পেতেও আমরা চলবো না। আমাদের সীমিত সম্পদ, এটা ঠিক, কিন্তু আমি মনে করি পরিকল্পিতভাবে এই সীমিত সম্পদ যদি আমরা ব্যবহার করতে পারি, তাহলে আমাদের কারও মুখাপেক্ষী হয়ে চলতে হবে না। আমরা নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে মাথা উচু করে বিশ্বসভায় চলতে পারবো-এটাই আমাদের লক্ষ্য।’

বাংলাদেশ