দেশের উপকূলীয় এলাকার নৌপথে ১৫ মার্চ থেকে সাত মাসব্যাপী ঝুঁকিপূর্ণ মৌসুম শুরু হয়েছে। এ সাত মাস নির্ধারিত ঝুঁকিপূর্ণ নৌপথে ‘সি সার্ভে’ (সমুদ্রে চলাচল উপযোগী) সনদ ছাড়া অন্য নৌযান চলাচল নিষিদ্ধ করেছে বিআইডব্লিউটিএ। তবে বিকল্প নিরাপদ নৌযানের অভাবে বিগত বছরগুলোর মতো এবারও ঝুঁকিপূর্ণ নৌপথে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষিত হবে বলে ধারণা করছেন উপকূলের বাসিন্দারা।
প্রতিবছর ১৫ মার্চ থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত সাত মাস ঝুঁকিপূর্ণ মৌসুম হিসেবে দেশের উপকূলীয় নৌপথে দেশীয় যন্ত্র চালিত ট্রলার, নৌকাসহ এক ইঞ্জিনচালিত সব ধরনের নৌযানে যাত্রী পরিবহন নিষিদ্ধ করা হয়। এমনকি ‘সি সার্ভে’ সনদ ছাড়া দুই ইঞ্জিন বিশিষ্ট নৌযানগুলোও চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকে।
এসব কারণে উপকূলীয় এলাকার লোকজনের নৌপথে চলাচলে নৌযানের চরম সংকট তৈরি হয়। নৌযাত্রীদের এ সময়ের একমাত্র ভরসা বিআইডব্লিউটিসির সি-ট্রাক। তবে সংস্থার ১৩টি সি-ট্রাকের মধ্যে ৯টিই অচল। যে চারটি সচল আছে তা সংশ্লিষ্ট নৌপথে যাত্রী পরিবহন করবে কি না, তা নির্ধারণ করে ইজারাদাররা।
কারণ বিআইডব্লিউটিসি প্রায় সব রুটেই সি-ট্রাকগুলো পরিচালনা করছে বেসরকারি ইজারাদারের মাধ্যমে। অথচ উপকূলীয় নৌপথে চলাচলের জন্য সরকার প্রতি বছর ৫০ লাখ টাকার নগদ অর্থ সহায়তাও প্রদান করছে সংস্থাটিকে।
এরপরেও মেরামতের জন্য উপকূলীয় রুটে ইজারায় চলাচলকারী সি-ট্রাক ‘শেখ কামাল’ গত তিন মাসের বেশি সময় ধরে সংস্থার ডকইয়ার্ডে । একইভাবে বন্ধ রয়েছে বরিশাল-লক্ষ্মীপুর রুটের এসটি খিজির-৮,ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটের এসটি খিজির-৫ ও খিজির-৭ সি-ট্রাক।
এর মধ্যে এসটি খিজির-৫ ও খিজির-৭ এর ইজারাদার পাওয়া গেলেও নৌযান দুটির সি সার্ভে সনদ নেই। এমনকি খিজির-৭ দীর্ঘদিন ধরে ডকিং না করায় এর তলার অবস্থা খুবই নাজুক।
অপরদিকে, বরিশাল-লক্ষ্মীপুর রুটে খিজির-৮ সি-ট্রাকটির ইজারাদার পাওয়া না যাওয়ায় ওই রুটে কবে নৌযানটি যাত্রী পরিবহন করবে তা বলতে পারছে না সংস্থার দায়িত্বশীল কর্মকর্তরা। এমনকি মূল ভূ-খণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন সাগর বক্ষের দ্বীপ উপজেলা মনপুরার সঙ্গে নিরাপদ নৌ যোগাযোগ থাকছে কি না তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিআইডব্লিউটিসির ১৩টি সি-ট্রাকের মধ্যে চট্টগ্রামের কুমিড়া-গুপ্তছড়া রুটে এস-টি ভাষা শহিদ সালাম, এস-টি ভাষা শহিদ জব্বার, বয়ারচর-হাতিয়া রুটে এসটি শহিদ, শেখ ফজলুল হক মনি এবং চরচেঙ্গা-বয়ারচর রুটে এসটি শহিদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত সি-ট্রাকগুলো চলাচল করছে।
অন্য ৯টি সি-ট্রাক চলাচল বন্ধ রয়েছে। এরমধ্যে এসটি শেখ কামাল সংস্থাটির ২ নম্বর ডকইয়ার্ডে এসটি শেখ জামাল ও ১ নম্বর ডকইয়ার্ডে এসটি শেখ রাসেল এবং এসটি সুকান্ত বাবু চট্টগ্রামে এক ইজারাদারের জিম্মায় বসিয়ে রাখা হয়েছে। এসটি খিজির-৫ ও এসটি খিজির-৭ ভোলার ইলিশা ঘাটে, এসটি খিজির-৬ নারায়ণগঞ্জে ও এসটি খিজির-৮ বরিশালে পড়ে আছে। এছাড়া মেরামতের জন্য এসটি রূপালী সি-ট্রাকটি গত প্রায় তিন বছর ধরে এক নম্বর ডকইয়ার্ডে পড়ে আছে।
এদিকে, যাত্রী বহনে নৌযানের ব্যবস্থা না হলেও নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার জন্য ইতিমধ্যে বিআইডব্লিউটিএ সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসকদের চিঠি দিয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএ’র বরিশালের নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপ-পরিচালক মো. আজমল হুদা মিঠু সরকার জানান, সি সার্ভে সনদ ছাড়া অন্য নৌযান উপকূলীয় নৌপথে চলাচল বন্ধ করার জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন, পুলিশ সুপার এবং কোস্টগার্ডকে গত ৭ মার্চ চিঠি দেয়া হয়েছে। বরিশালে সি সার্ভে অনুমোদিত বেসরকারি মাত্র দুটি যাত্রীবাহী জাহাজ রয়েছে। এছাড়া বিআইডব্লিউটিসির সি-ট্রাক এ রুটে যাত্রী পরিবহন করতে পারবে।
বিআইডব্লিউটিসির উপ-মহাব্যবস্থাপক সৈয়দ আবুল কালাম আজাদ জানান, উপকূলীয় রুটে চলার জন্য চারটি সি-ট্রাক রয়েছে। সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ রুট মনপুরা-শশীভূষনের জন্য নির্ধারিত সি-ট্রাক শেখ জামাল সংস্কারের জন্য তিন মাস আগে নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ডে নেয়া হয়েছে। সেটি এখনও ফেরত আসেনি। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এ জাহাজটি ডকইয়ার্ড থেকে ফেরত পাঠানো হবে বলে তিনি দাবি করেন।
অন্যদিকে বরিশাল-মজু চৌধুরীর হাট রুটের জন্য নির্ধারিত খিজির-৮ চালু করার জন্য ইজারাদার পাওয়া যাচ্ছে না।
সৈয়দ আবুল কালাম আজাদ বলেন, গত মৌসুমে জাহাজটি মাসে চার লাখ টাকায় ইজারা দেয়া হয়েছিল। এবার এ পর্যন্ত দুইবার দরপত্র দেয়া হলেও দেড়লাখ টাকার বেশি দর পাওয়া যাচ্ছে না। মীর্জাকালু-চরআলেকজান্ডার রুটে গত কয়েক মৌসুম ধরে সি-ট্রাক নেই। শুধুমাত্র ইলিশা-মজু চৌধুরীর হাট রুটের দুটি জাহাজ খিজির-৫ ও খিজির-৭ ১৫ মার্চ থেকে চলার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।