প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকার দেশের দ্রুত উন্নয়নে সর্বাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তাঁর সরকারের প্রধান লক্ষ্যই হচ্ছে দ্রুততার সঙ্গে দেশের উন্নয়ন সাধন করা, সুতরাং এই লক্ষ্য অর্জনে সরকার সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার সকালে তাঁর তেজগাওস্থ কার্যালয়ে ব্রাজিলের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত ওয়ানজা ক্যাম্পোস দা নোবরেগান সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে একথা বলেন।
বৈঠকের পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ সংগ্রামের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা তাঁর জীবনের অধিকাংশ সময় মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে জেলেই কাটিয়েছেন।
তিনি বলেন, জাতির পিতার স্বপ্ন অনুযায়ী বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত করে গড়ে তুলতে তাঁর সরকার সার্বিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
দেশের বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়ন প্রসঙ্গে সরকারের নানামুখী পদক্ষেপের উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৭২৬ মেগাওয়াট। অথচ বিএনপি-জামায়াতের সীমাহীন দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে এক সময় বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ৪ হাজার ৩শ’ মেগাওয়াট থেকে ৩ হাজার ২শ’ মেগাওয়াটে নেমে এসেছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার নারীর ক্ষমতায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। কারণ দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারীকে উন্নয়নের বাইরে রেখে কোনোভাবেই সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়।
নারী উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমাজের সর্বস্তরে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছে তাঁর সরকার।
দেশের নারীরা এখন প্রশাসন, বিচার বিভাগ, শিক্ষাসহ সশস্ত্র বাহিনী এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন উচ্চপদে আসীন।
তিনি বলেন, স্থানীয় সরকারের ইউনিয়ন, উপজেলা, পৌরসভা এবং সিটি কর্পোরেশন পর্যায়ে নারীদের জন্য ৩০ শতাংশ আসন বরাদ্দ রাখা হয়েছে। স্থানীয় সরকারের সর্বনি¤œ পর্যায় গতবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রায় ১২ হাজার পদের জন্য ৪৫ হাজার নারী সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর দায়িত্ব পালনকালে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জেরদারে ভূমিকা রাখায় ব্রাজিলের বিদায়ী রাষ্ট্রদূতের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে দেশের উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করে রাষ্ট্রদূত ওয়ানজা ক্যাম্পোস বলেন, বাংলাদেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নয়নসাধন করেছে, বিশেষ করে বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নের চিত্র দেখে আমি সন্তুষ্ট।
ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত এ সময় জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলা সফরের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, সেখানে সফলভাবে স্কুল ফিডিং কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ায় তিনি খুব আনন্দিত।
রাষ্টদূত বলেন, বাংলাদেশের সিরামিক, ওষুধ শিল্প এবং তৈরি পোশাকের সম্ভাবনাময় বাজার ব্রাজিলে রয়েছে। দু’দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিমাণ ইতোমধ্যেই ১ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে বলেও ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত উল্লেখ করেন।
ওয়ানজা ক্যাম্পোস এ সময় দুই দেশের মধ্যে কৃষিখাতে সহযোগিতা সম্প্রসারণেও গুরুত্বারোপ করেন। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থনীতি এবং বাণিজ্য সহযোগিতা সম্প্রসারণের আরো বহু ক্ষেত্র রয়েছে।
ঢাকায় আগামী এপ্রিলে অনুষ্ঠিতব্য ইন্টার পার্লামেন্টারিয়ান ইউনিয়ন (আইপিইউ) কনফারেন্সের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, ব্রাজিল সেই কনফারেন্সে একটি বড়ো প্রতিনিধি দল প্রেরণ করবে।
ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত এ সময় ব্রাজিলে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ মিজারুল কায়েসের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন।
বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য্য সচিব ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।