যদিও ইলাভেন/ওয়ান তবু আমাদের হাউশ হয়েছে ওয়ান ইলাভেন বলে ডাকার। নিত্য ব্যবহৃত দিন-মাস-বছর ফরম্যাট বাদ দিয়ে নাইন-ইলাভেনের সাথে মিলিয়ে ওয়ান-ইলাভেন। একটি সন্ত্রাসী, সহিংস দিবসের সাথে মিলিয়ে ওয়ান-ইলাভেন বলার বুদ্ধি কার মস্তিষ্কপ্রসূত তা আমার জানা নেই। বাংলাদেশে গনতান্ত্রিক যুগে পা ফেলার পর হাটতে গিয়ে সবচেয়ে বড় হোঁচট ২২ জানুয়ারির নির্বাচন । এগারো জানুয়ারি ২০০৭, নির্বাচন পূর্ববর্তী সহিংসতা আর অচলাবস্থা হতে উত্তরনের একটি দিন। আমরা সেটির নাম রেখেছি টুইন-টাওয়ার হামলার সাথে মিলিয়ে।
স্কুলের সাহিত্যপত্র পরীক্ষার ন্যায় কেউ আমাকে ওয়ান ইলাভেন- নামকরনের সার্থকতা লিখতে বললে আমার ভাগ্যে জুটত বড় বড় দুটি গোল্লা। ডাবল শূন্য। শুধু ওয়ান ইলাভেন নয় ইদানীং অনেক নাম, উপাধি আর বিশেষনের সার্থকতা খুজে পাই না। বিশেষকরে সাবেক জ্বালানি উপদেষ্টা মাহমুদুর রহমানকে নিয়ে কিছু বুদ্ধিজীবী যখন বলপেনের অগ্রভাগে গাওয়া ঘি মেখে গুনকীর্তন করেন, আমার দেশ পত্রিকায় নিজের নাম ছাপার অক্ষরে দেখার লোভে মাহমুদুর রহমানকে গনতন্ত্রের পূজারী, সময়ের সাহসী সৈনিক বলে সম্বোধন করে তখন দুচার কথা বলতেই হয়। ওসব বুদ্ধিজীবীর বুদ্ধিবৃত্তি কোন স্তরের তা নিয়ে কারো কোনোকালেই মাথা ব্যাথা ছিল না। তবে মাহমুদুর রহমানের বুদ্ধির কু-এর মাত্রাধিক্য নিয়ে অনেকে শঙ্কিত। বিশেষ করে ২৪ নভেম্বর এলে তার কুবৃত্তির কথা মনে পড়ে। ২০০৬ সালের ২৪ নভেম্বর উত্তরায় তার ব্যবসায়িক কার্যালয়ে সরকারি আমলাদের সাথে ২২ জানুয়ারি নির্বাচন নিয়ে গভীর রাতে গোপণ ষড়যন্ত্রে যোগ দেন। সাংবাদিকরা উপস্থিত হলে, পতিতালয় থেকে বেরিয়ে পড়া ভদ্রলেবাসের খদ্দেরের মতো কোর্টের আড়ালে মুখ ঢাকা ছবি পরদিন প্রত্রিকায় প্রকাশিত হয়। পুরো জাতি জানতে পারে, মাহমুদুর রহমান কি ‘জিনিস’। গণতন্ত্রকে নস্যাত করতে কাশিমবাজার কুঠির ভূমিকায় অবতীর্ন হয় উত্তরার আর্টিসান সিরামিক কার্যালয়। জগতশেঠ, রাজভল্লবের ভূমিকায় মাহমুদুর রহমানরা। এখন তিনি আপোষহীন, অকুতোভয়, গণতন্ত্রের অগ্রনী সৈনিক নানা বিশেষণে স্বগোত্রীয় ভ্রাতাবৃন্দ দ্বারা বিশেষায়িত হচ্ছেন।
অভদ্রজনরা বলে থাকে, যেখানে মোরগ নেই সেখানে ভোররাতে মুরগীকেই ডাক দিতে হয়। মাহমুদুর রহমান এখন বিএনপির থলেতে থাকা সর্বত্তোম বুদ্ধিজীবী বলে বিবেচিত। গত নির্বাচনে মাহমুদুর রহমান প্রদত্ত দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও- স্লোগান মুখ থুবড়ে পড়ে। এরপরও তার পরামর্শে বেগম জিয়া ব্যাপক প্রভাবিত। বেগম জিয়ার উপদেষ্টা তিনি। ৪ জুন চট্টগ্রামে ডিসি হিলে এক বক্তৃতায় তিনি সর্বকালের সর্বচমকপ্রদ তথ্য দিয়ে বলেন, আওয়ামীলীগ কখনো মুক্তিযুদ্ধ করেনি। তারই কয়েক মাস পর ১৮ অক্টোবর সিরাজগঞ্জে তার শিখিয়ে দেওয়া বুলিতে বেগম জিয়াও বলেন “আওয়ামীলীগ কখনো মুক্তিযুদ্ধ করেনি”। জামায়াত মিত্রের মুখে এমন বক্তব্যে কেউ অবাক হয়নি ঠিকই তবে এ নিয়ে ব্যাপক হাস্যরসের সৃষ্টি হয়। এমন লোক দ্বারা বিএনপির নেত্রী যদি প্রভাবিত হন দীর্ঘশ্বাস ফেলে অস্ফুটস্বরে ‘দুর্ভাগ্য’ বলা ছাড়া আমাদের কি-ই বা করার থাকতে পারে।
অত্যন্ত সুচতুর, শেয়াল বুদ্ধি সম্পন্ন আমলা মাহমুদুর রহমান। নিজের পৃষ্ঠদেশ রক্ষা করতে রক্ষাকবচ হিসেবে তিনি একটি পত্রিকার মালিক হয়েছেন। পত্রিকা কিনে মালিক নন, সাংবাদিক বনে গিয়েছেন। তাকে গ্রেফতার করা মানে সাংবাদিক নির্যাতন। দুর্নীতির দায়ে জেলে গিয়েও তিনি বিশেষায়িত হন আপোষহীন সাংবাদিক বলে! এখন তিনি ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদ, আধিপাত্যবাদ শব্দগুলো অতিমাত্রায় তার লেখনীতে ব্যবহার করছেন। একসময় তিনিই ভারতীয় টাটাকে নিয়ে অতি-উৎসাহী ছিলেন। টাটার প্রশংসায় মুখে উজ্জল আভা দেখা দিত। তার নাইকো প্রীতি আজও সর্বজনবিধিত। ফুলবাড়ীয়া কয়লা খনিতে এশিয়া এনার্জির প্রতি তার প্রশ্নবিদ্ধ দরদ ছিল। তখন আন্দোলনরত জনতার উপর পুলিশের বেড়ধক পিটুনীতে ৫ জন মারা যায়। আজ মাহমুদুর রহমান মানবাধিকারের কথা বলেন! স্বীয় বাকযন্ত্রের উপর সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগ করে তিনি টিভিতে গণতন্ত্রের কথা বলেন। অথচ তিনিই গণতান্ত্রিক নির্বাচন পদ্ধতিতে প্রভাবিত করতে চেয়েছিলেন। সরকারি কর্মকর্তাদের প্ররোচিত করেছিলেন ষড়যন্ত্রে। আওয়ামীলীগকে তিনি নির্বাচনে হারাতে চেয়েছেন। তবুও তিনি আওয়ামীলীগের আক্রোশের শিকার হয়েছেন বলা যাবে না। তিনি জেল খেটেছেন আদালত অবমাননার দায়ে। এখনও তিনি আওয়ামীলীগকে গালাগাল করেন। আওয়ামীলীগ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ বলে প্রচার করেন।
সত্যিই আওয়ামীলীগ আইনেই শাসন প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ। ব্যর্থ না হলে, এতদিনে উত্তরা গোপন বৈঠকের অপরাধীদের কঠিন বিচারের মুখোমুখি হতে হতো। নির্বাচন প্রভাবিত করার ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে রাষ্ট্র যন্ত্রকে বিকল করার অপচেষ্টায় অবশ্যই জগতশেঠরা শাস্তি পেতো।