বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি রাশিয়া থেকে মিগ-২৯ এর পর এবার আটটি বহুমাত্রিক যুদ্ধবিমান কিনছে বাংলাদেশ। দেশটির একটি শীর্ষস্থানীয় বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আধুনিক প্রযুক্তির এসব বিমান সরবরাহ করতে পারে বলে জানা গেছে।
মস্কোভিত্তিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর অ্যানালাইসিস অব ওয়ার্ল্ড আর্মস ট্রেডের (সিএডব্লিউটি) এক প্রতিনিধির বরাত দিয়ে রাশিয়ার সরকারি বার্তা সংস্থা স্পুতনিক গত শুক্রবার ‘রাশিয়ার ইউএসি বাংলাদেশে যুদ্ধ বিমান সরবরাহের কাজটি পেতে পারে’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রচার করে।
সিএডব্লিউটির একজন প্রতিনিধি স্পুতনিককে বলেন, আধুনিক প্রযুক্তির এসইউ-৩৫, মিগ-৩৫ ও এসইউ-৩০ এসএম যুদ্ধবিমান উৎপাদনকারী ইউনাইটেড এয়ারক্রাফট করপোরেশন দরপত্র পাওয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী।
জানা গেছে, বাংলাদেশ সরকারের প্রতিরক্ষা ক্রয় মহাপরিদফতর সম্প্রতি আটটি বহুমাত্রিক যুদ্ধবিমান কেনার জন্য সম্প্রতি নিজস্ব ওয়েবসাইটে দরপত্র প্রচার করে। এতে বলা হয়, ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত দরপত্র বিক্রি করা হবে। আর ১৩ এপ্রিল ওই দরপত্র উন্মুক্ত করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ রাশিদুল হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, যুদ্ধবিমান কেনার জন্য সম্প্রতি একটি দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। তবে বিষয়টি এখন প্রক্রিয়াধীন।
এদিকে রাশিয়া থেকে বাংলাদেশের বড় ধরনের সামরিক সরঞ্জাম কেনার ঘটনা নতুন নয়। ১৯৯৯ সালে রাশিয়ার কাছ থেকে আটটি মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান কেনে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। ওই সময় থেকে চুক্তির মাধ্যমে প্রতিটি মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান ১ কোটি ১০ লাখ ডলারে কেনা হয়। সাজসরঞ্জামসহ প্রশিক্ষণ, পরিবহনসহ আটটি বিমানের জন্য মোট ১২ কোটি ৪ লাখ ডলার ব্যয় হয়, যা বাংলাদেশি টাকায় ছিল ৫৭৫ কোটি।
২০০১ সালে বিএনপির শাসনামলে বিমানগুলো বিক্রি করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেগুলো আর বিক্রি করা সম্ভব হয়নি। ওই সময় সরকারের ৭০০ কোটি টাকা ক্ষতির অভিযোগ এনে ২০০১ সালের ১১ ডিসেম্বর শেখ হাসিনাসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় মামলা করা হয়। ২০১০ সালে ২ মার্চ হাইকোর্ট মামলাটি বাতিল করে দেন।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে রাশিয়া থেকে রাষ্ট্রীয় ঋণে প্রায় আট হাজার কোটি টাকার (১০০ কোটি ডলার) সমরাস্ত্র কিনেছিল। মস্কোতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শীর্ষ বৈঠকের পর এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি সই হয়। চুক্তি অনুযায়ী সেনাবাহিনীর জন্য ট্যাংকবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রসহ বিভিন্ন ধরনের সমরাস্ত্র কেনা হয়।
এর আগে ২০০৯-১০ অর্থবছরে বিমানবাহিনীর জন্য চীন থেকে কেনা হয় স্বল্প পাল্লার বিমান প্রতিরক্ষা পদ্ধতি (এসএইচওআরএডি)। এ সময় এফ-৭ বিমানের জন্য চীন থেকে এবং মিগ-২৯ বিমানের জন্য রাশিয়া থেকে ক্ষেপণাস্ত্র কেনা হয়। ২০১০-১১ অর্থবছরে চতুর্থ প্রজন্মের ১৬টি যুদ্ধবিমান এফ-৭ বিজি ১ এবং রাশিয়ার তৈরি এমআই-১৭১ এসএইচ হেলিকপ্টার কেনা হয়।