ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে অনেকটাই বিপাকে পড়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিভক্ত ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ অংশে মেয়রপ্রার্থী হিসেবে কাদের সমর্থন দেওয়া হবে তা নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে দলটিকে।
দলের নীতি নির্ধারণী মহল এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন। তবে এ ব্যাপারে এখনই কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন তারা।
কারণ স্থান ও সময় উভয় দিক বিবেচনায় এ নির্বাচন সরকার ও দলের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলেই তারা মনে করছেন।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ উভয় সিটি করপোরেশনেই আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের বেশ কয়েকজন মেয়রপ্রার্থী হিসেবে আগাম প্রচারণায় নেমেছেন।
ডিসিসি উত্তরে মেয়র পদে নির্বাচন করার জন্য ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া এরই মধ্যে নিজেকে আওয়ামী লীগসমর্থিত প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন।
এখানে আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্নাও মেয়র পদে প্রার্থী হবেন বলে শোনা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের গত কাউন্সিলে মান্না দলের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বাদ পড়েন। বর্তমান আওয়ামী লীগের সঙ্গে তার সাংগঠনিক সম্পৃক্ততা আর নেই। তিনি নাগরিক কমিটির ব্যানারে নির্বাচন করবেন বলে শোনা যাচ্ছে।
এই সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমান কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য, ডাকসুর সাবেক ভিপি আখতারুজ্জামানের প্রার্থী হওয়ার কথাও শোনা যাচ্ছে।
দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই আখতারুজ্জামানের বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলে জানা গেছে।
এখানে মেয়রপ্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছেন মহাজোটের শরিক জাসদ নেত্রী শিরিন আক্তারও। প্রথম দিকে তিনি দক্ষিণে প্রচারণা শুরু করলেও পরে তিনি উত্তরে প্রচারণা শুরু করেন।
দক্ষিণে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রয়েছেন ৪ জন। ৪ জনই ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা। এরা হলেন ঢাকার সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফের ছেলে সাঈদ খোকন, হাজী মোহাম্মদ সেলিম, ফয়েজ উদ্দিন মিয়া ও আওলাদ হোসেন।
এখানে আরেকজন প্রার্থী রয়েছেন মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ।
একে তো দল ও জোটেই রয়েছেন কয়েকজন করে প্রার্থী, তার উপর আবার প্রধান বিরোধী দল বিএনপি শেষ মুহূর্তে প্রার্থী দিলে এবং দল ও জোট থেকে একক প্রার্থী সমর্থন দেওয়া সম্ভব না হলে আওয়ামী লীগের জন্য বিষয়টি আরো জটিল হয়ে পড়বে। এই অভিমত দলের অনেক নেতার।
দেশের প্রাণকেন্দ্র ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন আওয়ামী লীগ কোনোভাবেই হাতছাড়া করতে চায় না।
কারণ, ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের প্রভাব আগামী জাতীয় নির্বাচন গড়াবে।
সরকারের মেয়াদের শেষ মুহূর্তে ঢাকার মতো গুরুত্বপূর্ণ দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফল নেতিবাচক হলে দল ও সরকার উভয় ক্ষেত্রেই ইমেজ সংকটে পড়তে হবে আওয়ামী লীগকে।
এর আগে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পরাজয়ে আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের ঘাঁটি হাত ছাড়া হয়। শুধু তাই নয়, এ নির্বাচনে পরাজয়ের পর বিরোধী রাজনৈতিক মহলে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
চট্রগ্রাম সিটি করপোরেশনের পর নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনেও আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পরাজয় ঘটে। নারায়ণগঞ্জে দলীয় লোক নির্বাচিত হলেও আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী বিপুল ভোটে পরাজিত হন।
রাজনীতির প্রাণকেন্দ্র ঢাকার যে কোনো নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের প্রভাব পড়ে জাতীয় রাজনীতিতে।
গত জাতীয় নির্বাচনে ঢাকার সব ক’টি আসনে জয় লাভ করে আওয়ামী লীগ। এই বিপুল বিজয়ের তিন বছর পর সিটি করপোরেশন নির্বাচন দলের জনপ্রিয়তার মাপকাঠি হিসেবেও কাজ করবে বলে নেতারা মনে করছেন।
এ অবস্থায় একক প্রার্থীকে সমর্থন দিতে পারাই আওয়ামী লীগের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে দলের কেউ কেউ মন্তব্য করেন।
ডিসিসি নির্বাচন প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ‘এটা স্থানীয় নির্বাচন। দলগতভাবে এ নির্বাচন হবে না। আমরা দেখছি কারা কারা প্রার্থী হয়। শেষ মুহূর্তে যদি কাউকে সমর্থন দিতেই হয় তবে জনগণের পছন্দের প্রার্থীকেই সমর্থন দেওয়া হবে। এটা নিয়ে এখনই আমরা কিছু ভাবছি না। তবে আওয়ামী লীগের নেতা হোক, কর্মী হোক নির্বাচনে তারা অংশগ্রহণ করবে।’