বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। শ্রীলংকার সাবেক এই ক্রিকেটার নিজ দেশের সহকারী কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ২০০৮ সালে। তবে ওই সময় শ্রীলংকান ক্রিকেট বোর্ড এবং খেলোয়াড়দের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ার কারণে চাকরি ছাড়তে হয় তাকে এবং অস্ট্রেলিয়ায় চাকরি খুঁজে নেন বাংলাদেশের বর্তমান কোচ। এরপর এক সময় তো চলেই এলেন বাংলাদেশের প্রধান কোচ হয়ে। বাকিটা ইতিহাস।
সেই চন্ডিকা হাথুরুসিংহেই এখন শ্রীলংকার মাটিতে, স্বদেশের বিপক্ষে লড়াই করার জন্য নিয়ে গেলেন বাংলাদেশের টাইগারদের। তার সঙ্গী আরও দুই লংকান। শ্রীলংকার এক সময়ের পেস বোলার মারিও ভিল্লাভারায়ন, যিনি এখন বাংলাদেশ দলের ট্রেনার এবং জাতীয় দলের ব্যাটসম্যান থিলান সামারাবিরা, যিনি ব্যাটিং কোচ।
বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজে এখন এই তিন লংকানকেই যত ভয় স্বাগতিক শ্রীলংকার খেলোয়াড়, কর্মকর্তা এবং দর্শকদের। কারণ, শ্রীলংকা দলের অন্দর মহলের খবর তো এই তিনজন খুব ভালোকরেই জানেন। তাদের দুর্বলতা, শক্তি- সবকিছুই। এ কারণেই বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের আগে শ্রীলংকাজুড়ে তুমুল আলোচনায় চন্ডিকা হাথুরুসিংহে এবং তার দুই সতীর্থ ভিল্লাভারায়ন ও থিলান সামারাবিরা।
শ্রীলংকার পত্রিকাগুলোতেও তুমুল আলোচনা। কলম্বো থেকে প্রকাশিত ‘ন্যাশন’ পত্রিকায় বিশেষ নিবন্ধই চাপানো হয়েছে আজ। ‘হাথুরুসিংহে ইনভেডস শ্রীলংকা’ শিরোনামে প্রকাশিত এই নিবন্ধটিতে বাংলাদেশ কোচের উত্থান, তার সঙ্গে শ্রীলংকা ক্রিকেট বোর্ডের অতীত আচরণ এবং তার বর্তমান অবস্থা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, হাথুরুসিংহের অধীনে মাত্র কিছুদিন আগেই ইংল্যান্ডকে বিধ্বস্ত করেছে বাংলাদেশ।
নিজ দেশে প্রতিপক্ষ হলেও ৪৮ বছর বয়সী হাথুরুসিংহে এখানে পুরোপুরি পেশাদার। যদিও শ্রীলংকা থেকে একবার তিনি প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন। সেই প্রতিহিংসা থেকেই মনেপ্রাণ চান, শ্রীলংকাকে হারতে। জানিয়ে দিয়েছেন, তার অধীনে বাংলাদেশ যদি শ্রীলংকাকে হারাতে পারে, তাহলে এটা হবে অনেক বড় একটি অর্জন। যদিও নিজ দেশের হয়ে ক্রিকেটে কোনো ভূমিকা রাখতে না পারার আক্ষেপও পোড়ায় তাকে।
ন্যাশন পত্রিকাকে হাথুরুসিংহে বলেন, ‘হ্যাঁ আমাকে এখান থেকে (শ্রীলংকান ক্রিকেট) সরিয়ে দেয়া হয়েছিল। এবং সত্যিই আমি দেশের হয়ে ক্রিকেটে ভূমিকা রাখতে পারিনি বলে খুব হতাশ। তবে আমি এখন যা করছি এটা নিয়ে খুবই খুশি।’
সাবেক লংকান এই ওপেনার আরও স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন, ‘এখনই সময়, আমার অধীনে বাংলাদেশ কতটুকু উন্নতি করেছে সেটা দেখিয়ে দেয়ার।’
শ্রীলংকার ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক রঙ্গনা হেরাথ ইতিমধ্যেই নিজেদের চিন্তার কথা জানিয়ে দিয়েছে এই তিন লংকানকে নিয়ে। তিনি বলেছিলেন, ‘থিলান সামারাভিরা, চন্ডিকা হাথুরুসিংহে জানে আমাদের কোথায় দুর্বলতা। কিংবা কোথায় আমাদের শক্তি। আমি নিশ্চিত তারা এগুলো নিয়ে কাজ করবে। সুতরাং আমাদেরকে নতুন কোনো পরিকল্পনা নিয়েই মাঠে নামতে হবে।’
কোচের প্রশংসা ঝরেছে বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিকুর রহীদের কণ্ঠ থেকেও। তিনি বলেন, ‘গত দুই-আড়াই বছরের রেকর্ডই জানিয়ে দিচ্ছে তিনি (হাথুরুসিংহে) দলের জন্য কতটা নিবেদিতপ্রাণ। তার অধীনে অনেক উন্নতি করেছে আমাদের দল। এবং অনেক সাফল্যও এসেছে। আশা করছি এই সফরে সেগুলোরই পুনরাবৃত্তি করতে পারবো।’