কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে (কুসিক) পাঁচ মেয়র ও ১৯২ জন কাউন্সিলর প্রার্থীর মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হবে আগামী রোববার ও সোমবার। প্রতীক বরাদ্দ ১৫ মার্চ। তাই নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু না হলেও নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রার্থীরা বসে নেই।
ভোটের মাঠের হিসাব-নিকাস নিয়ে সবাই ব্যস্ত। কেউ কেউ ঘরোয়া পরিবেশে সভা করছেন। কেউ কেউ আবার নির্বাচনী আইন মেনেই শোডাউন ছাড়াই ছুটে যাচ্ছেন ভোটারদের কাছে। আর এ ভোট উৎসব যাদের নিয়ে সেই ভোটাররাই বা কি ভাবছেন? মেয়র হিসেবে যোগ্য কে ? কাকে বিজয়ী করলে নগরীর কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হবে।
নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আগ পর্যন্ত মেয়র প্রার্থী পাঁচজন। তবে শেষ লড়াই হবে নৌকা আর ধানের শীষের। তাই আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমা ও বিএনপির মনিরুল হক সাক্কুকে ঘিরেই ভোটারদের যতো চুল চেরা বিশ্লেষণ।
নির্বাচন কমিশনে প্রার্থীদের জমা দেয়া হলফনামা অনুযায়ী প্রধান দুই দলের প্রার্থীর মধ্যে সাক্কু সম্পদে এগিয়ে থাকলেও সীমার তুলনায় শিক্ষায় পিছিয়ে রয়েছেন। শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত সীমার শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএ/বিএড।
অপরদিকে, পেশায় ব্যবসায়ী সাক্কুর শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি। সাক্কুর সম্পদের চেয়ে তার স্ত্রী আফরোজা জেসমিন টিকলীর সম্পদের পরিমাণ বেশি।
জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিএনপির মনিরুল হক সাক্কুর সম্পদ সকল মেয়র প্রার্থীর চেয়ে বেশি। এছাড়াও সাক্কুর বিরুদ্ধে বর্তমানে রাজধানীর রমনা থানায় দুর্নীতি দমন কমিশন আইনে একটি এবং আয়কর অধ্যাদেশ আইনে কুমিল্লায় একটি মামলা রয়েছে।
অপরদিকে, আওয়ামী লীগের সীমার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। সাক্কুর সম্পদ তার চেয়ে বেশি। সাক্কু বাড়ি ভাড়া থেকে পান ৭২ হাজার টাকা, ব্যাংক সুদ ২ লাখ ১২ হাজার টাকা ও সম্মানী ভাতা ১১ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে নগদ রয়েছে ৮৭ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। তার স্ত্রীর নামে নগদ আছে ৫৫ লাখ ৮৬ হাজার টাকা ও ব্যাংকে জমা ৮৭ হাজার টাকা। সঞ্চয়পত্র বাবদ সাক্কুর রয়েছে ২ লাখ টাকা। তার স্ত্রীর এ খাতে আছে ২৯ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। তার গাড়ি আছে দুইটি। দুইজনের স্বর্ণ আছে ১০ তোলা করে।
সাক্কুর স্ত্রী ব্যবসায় পুঁজি খাটিয়েছেন ২ কোটি ১২ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। স্থাবর সম্পদের মধ্যে সাক্কুর অকৃষি জমি আছে দশমিক ০৯২৩ একর।
অন্যদিকে, তার স্ত্রীর রয়েছে দশমিক ০৫ একর জমি। তার স্ত্রীর আবাসিক ও বাণিজ্যিক সম্পদের মধ্যে কুমিল্লা নগরীর রেসকোর্স এলাকায় সেল নিশা টাওয়ারে রয়েছে তিনটি বাণিজ্যিক দোকান, দ্বিতীয় তলায় ১২টি দোকান, তৃতীয় ও চতুর্থ তলার ৭ হাজার ২৫৬ বর্গফুটের দুটি স্পেস, ফাতেমা জাহানারা টাওয়ারে ষষ্ঠ ও সপ্তম তলায় দুইটি ফ্ল্যাট এবং তিন হাজার ২২৯ বর্গফুটের স্পেস।
অপরদিকে, আওয়ামী লীগের আঞ্জুম সুলতানার বাড়ি ও দোকান ভাড়া থেকে আয় ৫৪ হাজার টাকা। তিনি শিক্ষকতা পেশা থেকে আয় করেন আড়াই লাখ টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে ২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে নগদ ৫০ হাজার টাকা, ব্যাংকে জমা ৪৬ লাখ টাকা, সঞ্চয়পত্র বাবদ ২০ লাখ টাকা ও স্বর্ণ ৩০ তোলা। এছাড়া তার স্বামী নিসার উদ্দিন আহমেদের রয়েছে ৩০ তোলা সোনা। আঞ্জুম সুলতানার স্থাবর সম্পদের মধ্যে আছে অকৃষি জমি ১০ শতক ও টিনশেড দালান। তার স্বামীর অকৃষি জমি আছে ২০ শতক, ২ হাজার বর্গফুটের দ্বিতল বিশিষ্ট আবাসিক দালান ও ১ হাজার ২০০ বর্গফুট তিনতলা আবাসিক দালান।
মনোনয়নপত্র জমা দেয়া অপর ৩ প্রার্থীর মধ্যে পিডিপি প্রার্থী সোয়েবুর রহমানের পেশা থেকে আয় ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। তার অস্থাবর সম্পদের মধ্যে আছে নগদ ১ লাখ টাকা ও ব্যাংকে জমা ২ লাখ টাকা। জেএসডির শিরিন আক্তারের অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ রয়েছে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা, স্বর্ণ ৩০ ভরি ও ঋণপত্র ৫০ হাজার টাকা। আর তার স্থাবর সম্পদ আছে ১৪ শতক জমি।
স্বতন্ত্র প্রার্থী মেজর (অব.) মামুনুর রশীদের বাড়ি ভাড়া থেকে আয় ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা। এছাড়া তার স্ত্রীর শিক্ষকতা পেশা থেকে আয় ৬০ হাজার টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে দেড় লাখ টাকা।
মামুনুর রশীদের অস্থাবর সম্পদ রয়েছে নগদ ১ লাখ টাকা, স্ত্রীর নামে ২ লাখ টাকা ও স্ত্রীর স্বর্ণ ৬ লাখ ৩০ হাজার টাকার। আর স্থাবর সম্পদের মধ্যে কৃষিজমি ১১ শতক, অকৃষি জমি ৬০ শতক ও স্ত্রীর একটি বাড়ি। শিরিন আক্তার এসএসসি পাস ও পেশায় মৌসুমী ব্যবসায়ী। সোয়েবুর রহমানের শিক্ষাগত যোগ্যতা এলএলবি। তিনি পেশায় আইনজীবী। মামুনুর রশীদ এমবিএ পাস। তার পেশা ওষুধের ব্যবসা। প্রার্থীদের হলফনামা থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
উল্লেখ্য, আগামী ৫ ও ৬ মার্চ মনোনয়নপত্র যাছাই-বাছাই, প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৪ মার্চ। ১৫ মার্চ দেয়া হবে প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ এবং নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৩০ মার্চ।