বাসচালক জামির হোসেনের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি ও সড়ক দুর্ঘটনার মামলায় চালক মীর হোসেনের মৃত্যুদণ্ডের রায়ের প্রতিবাদে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের ডাকা দেশব্যাপী ধর্মঘটে সাধারণ যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। দেশজুড়ে একপ্রকার অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
বিভিন্ন জেলা থেকে অবরোধের বর্তমান পরিস্থিতি জানিয়েছেন জাগো নিউজের প্রতিনিধিরা।
কুমিল্লা থেকে কামাল উদ্দিন জানিয়েছেন, এ জেলার সঙ্গে রাজধানী ঢাকা, সিলেট, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রামসহ অন্তত ২০ রুটের দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হতে হয়েছে।
আজ বুধবারও কুমিল্লার জেলার সহস্রাধিক বাস শ্রমিক ট্রার্মিনাল অবরোধ করে ধর্মঘট পালন করছে। এ ধর্মঘট থাকায় কুমিল্লা নগরীর জাঙ্গালিয়া, শাসনগাছা ও চকবাজার টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। তবে আঞ্চলিক সড়কগুলোতে গাড়ি চলাচলের সময় বেলা ১১টার দিকে শ্রমিকদের একটি অংশ মহাসড়কের আলেখারচর এলাকায় বাধা প্রদানসহ ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে গাড়ি ভাঙচুর করে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে পরিবহন শ্রমিক ও পুলিশের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি আজিজুল সঞ্চয়। বুধবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আশুগঞ্জ গোলচত্বর এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা। তবে তাৎক্ষণিকভাবে আহতদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। তাদেরকে স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
এদিকে জেলা প্রতিনিধি সালাইদ্দন কাজল জানিয়েছেন, চুয়াডাঙ্গায় অষ্টম দিনের মতো বুধবারও পরিবহন ধর্মঘট অব্যহত রয়েছে। অন্যদিনের মত বুধবার ভোর থেকে শুধু দূরপাল্লার পরিবহনই নয় অভ্যন্তরীণ রুটেও কোনো বাস-ট্রাক চলাচল করেনি। এমনকি মোটরশ্রমিকরা অভ্যন্তরীণ রুটে ভ্যান, রিকশা, ইজিবাইক, সিএনজিসহ আলমসাধু ও করিমন-নছিমন পর্যন্ত চলাচল করতে দিচ্ছে না। এতে সাধারণ যাত্রীসহ চলতি এসএসসি পরীক্ষার্থীরা চরম বিপাকে পড়েছেন।
বরিশাল থেকে সায়ীফ আমিন জানিয়েছেন, বরিশালে ধর্মঘটের কারণে রিকশা ভাড়া বেড়ে গেছে ৩ থেকে ১০ গুন। স্বাভাবিক সময়ে নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে রহমতপুরে অটোরিকশায় যেখানে ১৫ টাকা করে ভাড়ায় যাতায়াত করা যায়। আজ সেখানে ভাড়া চওয়া হচ্ছে ৬শ টাকা
গাজীপুর থেকে আমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন, পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘটের কারণে অচল হয়ে পড়েছে গাজীপুর। বুধবার সকাল থেকে গাজীপুরের বিভিন্ন পয়েন্টে পরিবহন শ্রমিকরা লাঠিসোটা নিয়ে অবস্থান নেয়। ফলে কিছু যানবাহন রাস্তায় বের হলেও শ্রমিকদের বাধার কারণে তারা ফিরে যেতে বাধ্য হয়।
শ্রমিকদের অবরোধের সুযোগে রিকশা চালকরাও যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।
সিলেট থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক ছামীর মাহমুদ জানিয়েছেন, দুদিন ধরে চলা পরিবহন ধর্মঘটে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সিলেটের মানুষ। পরিবহন শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে পিকেটিং, যান চলাচলে বাঁধা ও যানবাহন থেকে নামিয়ে দিচ্ছেন যাত্রীদের। ফলে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। অনেক দুরপাল্লার যাত্রী ও সিলেটে আসা পর্যটকরা ধর্মঘটের কারণে আটকা পড়েছেন।
ঝালকাঠি থেকে আতিকুর রহমান জানিয়েছেন, ধর্মঘটের কারণে দূরপাল্লাসহ সকল রুটের বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। ঝালকাঠি জেলা বাস ও মিনি বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়ন কোনো ধরণের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই সকল রুটের বাস চলাচল ২ দিন ধরে বন্ধ থাকায় জনজীবনে নেমে এসেছে নানা দুর্ভোগ।
ঝিনাইদহের নাসিম আনসারি জানিয়েছেন, জেলা থেকে দূরপাল্লার অভ্যন্তরীণ রুটে বাস, ট্রাক বন্ধ করে দিয়েছে শ্রমিকেরা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। বাস, সিএনজিসহ গণপরিবহন চলাচল না করায় বাড়তি ভাড়া দিয়ে ইজিবাইক ও অটোভ্যানে চলাচল করতে দেখা গেছে।
সকালে শহরের বাসটার্মিনাল, আরাপপুর, বাইপাস সড়ক, চুয়াডাঙ্গা স্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন পয়েন্টে শ্রমিকদের বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে।
এদিকে টানা ধর্মঘটে দুইদিন যাবত বন্ধ রয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্লাস-পরীক্ষা। পরিবহনের চাকা সচল না হওয়ায় কার্যত অচল হয়ে পড়েছে গোটা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল।
ভুক্তভোগিরা বলছেন, বিচারিক প্রক্রিয়া না মেনে যারা জনজীবনকে জিম্মি করেছে, তাদের রুখতে হবে প্রশাসনিকভাবে। একই বক্তব্য আইনজীবীদেরও। তবে আন্দোলনকারীরা বলছেন, বাধ্য হয়ে এই ধর্মঘট পালন করছেন তারা। দেশব্যাপী শুরু হওয়া পরিবহন ধর্মঘটে ব্যবসায়ীরা বিপদে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন কুষ্টিয়া প্রতিনিধি আলমামুন সাগর।
মাদারীপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানের নির্বাচনী এলাকা মাদারীপুরেও বুধবার ভোর থেকে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের একাধিক স্থানে টায়ার জ্বলিয়ে রাস্তায় অগ্নি-সংযোগ করে অবরোধকারীরা। এ সময় গাছের গুড়ি ফেলে সকল যানবাহন চলাচলে বাধাঁ সৃষ্টি করে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়ে সাধারণ যাত্রীরা।
মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি নুপুর জানিয়েছেন, ধর্মঘটে ঢাকা-মুন্সীগঞ্জ ও ঢাকা-মাওয়া সড়কের গণপরিবহন গুলো বন্ধ রয়েছে ২ দিন যাবৎ। এমতাবস্থায় এরুটে চলাচলকারী যাত্রীসাধারণ পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। অতিরিক্ত ভাড়াসহ ছোট গণপরিবহনের একচ্ছত্র প্রভাবের কারণে অসন্তোষে যাত্রীরা।
অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটে বুধবারও অচল হয়ে পড়ে ময়মনসিংহের পরিবহন ব্যবস্থা। যানবাহনের অভাবে যাত্রীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। ময়মনসিংহ থেকে কোনো রুটেই দূরপাল্লার কোনো যানবাহন চলাচল করেনি। পরিবহন শ্রমিকরা সকাল থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বাইপাস মোড়ে এবং চুরখাইমোড়ে মহাসড়কের উপর বাস, ট্রাক আড়াআড়ি করে অবরোধ সৃষ্টি করে। এসময় মাসকান্দায় টায়ারে আগুন ধরিয়ে বিক্ষোভ করায় কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারেনি।
নাটোরে ধর্মঘটের সুযোগে দ্বিগুণ ভাড়া নিচ্ছে সিএনজি ও অটো চালকরা। বাধ্য হয়েই দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে গন্তব্য স্থানে যাচ্ছে অফিসগামী মানুষ। তবে আদালতের রায় উপেক্ষা করে ধর্মঘট নিয়ে ক্ষুদ্ধ সাধারণ মানুষ। যাত্রীদের দাবি দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করা হোক।
এদিকে ধর্মঘট শুরু হওয়ার কারণে দুর পাল্লার যাত্রীদের আগে থেকে কেটে রাখা টিকিট বাতিল করে তাদের টিকিটের টাকা ফেরত দেয়া হচ্ছে।
রাজবাড়ি জেলায় দূরপাল্লা ও লোকাল বাস, পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, পিকআপসহ বড় কোনো যানবাহনই চলাচল করতে দেখা যায়নি। শুধুমাত্র অটোরিকসা, অল্প কিছু ব্যাক্তিগত যানবাহন ও অ্যাম্বুলেন্স চলতে দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রতিনিধি রুবেলুর রহমান।
শরীয়তপুর থেকে ছগীর হোসেন জানিয়েছেন, শরীয়তপুর নতুন বাস্ট্যান্ট ও আশপাশে পার্কিং করে রাখা হয়েছে অসংখ্য গাড়ি। এমনকি রাস্তার এক অংশ দখল করেও খালি গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা।
যাত্রীবাহী গাড়ি না পেয়ে অনেকে রিকশা, অটোরিকশা, বেবি ও ভ্যানে চেপে গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে বেশিরভাগের কপালে রিকশা অথবা বেবিসহ কোনোটিতেই ওঠা সম্ভব হচ্ছে না।