দেশব্যাপী ডাকা অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে মানুষ। ধর্মঘটের কবলে নাকাল হয়ে পড়েছেন নগরবাসী। বাসা থেকে বরে হয়ে গন্তব্যে যেতে পদে পদে পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে। বাস না থাকায় অটোরিকশা, রিকশা-ভ্যানে তিন-চার গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে যেতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে। অনেকে আবার হেঁটে যাচ্ছেন গন্তব্যে।
মিরপুরের নিবাসী হাসান জুবায়ের। মতিঝিলে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরি করেন। পরিবহন ধর্মঘটের কারণে গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় অফিস শেষ করে রাত ১১ টায় বাসায় ফিরেছেন। মতিঝিল থেকে মিরপুর আসতে তার ৫ ঘণ্টা সময় লাগে। এ কারণে আজ ভোর ছয়টায় মিরপুর ১০ নম্বর বাসস্টান্ডে এসে বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন। টানা তিন ঘণ্টা অপেক্ষার পর ভ্যান গাড়িতে অফিসের দিকে যাত্রা শুরু করেন।
তিনি বলেন, হটাৎ করে পরিবহন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়ে গেছি। আমরা খেটে খাওয়া মানুষ একদিন অফিসে না গেলে অনেক অসুবিধায় পড়তে হয়। এর শেষ কোথায় প্রশ্ন তুলে দ্রুত পরিবহন চলাচল সাভাবিক করার অনুরোধ জানান।
তার মতো এমন অসংখ্য মানুস নিজ গন্তব্যস্থলে যাওয়ার প্রতিক্ষার প্রহর গুনছে। অনেকে ব্যর্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। কেউ আবার প্রয়োজনের তাগিতে হেটে বা বিকল্প পন্থায় যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
অন্যদিকে, ধর্মঘটের কবলে পড়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এসএসসি পরীক্ষার্থী, অফিসগামী যাত্রী আর নানা প্রয়োজনে রাস্তায় বের হওয়া সাধারণ মানুষকে।
সড়ক দুর্ঘটনায় তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরের মৃত্যুর জন্য দায়ী বাসচালককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে গত সপ্তাহে মানিকগঞ্জের আদালতে রায়ের পর থেকে শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করেন। এরপর গত সোমবার সাভারে এক নারীর ওপর ট্রাক তুলে হত্যার অপরাধে আরেক চালকের মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পর শুরু হয় দেশজুড়ে ধর্মঘট।
এদিকে, টানা দুদিন ধর্মঘটের ফলে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের জনজীবনে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকার সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে পুরো দেশ।
ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিন রাজধানী ঢাকার চিরচেনা ব্যস্ত সড়কগুলো অনেকটাই ছিলো ফাঁকা। বাস নেই বললেই চলে। তবে সীমিত আকারে পিকআপ, প্রাইভেট কার, টেম্পো, সিএনজিচালিত স্কুটার আর রিকশা চলতে দেখা গেছে।
কোথাও কোথাও ব্যক্তিগত গাড়ি চলতেও বাধা দিয়েছেন শ্রমিকেরা। অনেকে অফিসে যেতে পারেননি। কেউ দেরিতে গেছেন। আবার কেউ হেঁটে পথ ধরেছেন। আর পরিবহন ধর্মঘট নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশের জন্য অনেকে বেছে নিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুককে।
এদিকে, দাবি না মানা পর্যন্ত ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনরত পরিবহন শ্রমিক নেতারা। মঙ্গলবার বিকেলে গাবতলীতে এক সমাবেশে আন্তঃজেলা ট্রাকচালক শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি তাজুল ইসলাম এ ঘোষণা দেন।