হাসিনা-নাজিব ভিডিও কনফারেন্স পদ্মা সেতু সমঝোতা স্মারক ৯ মাসের মধ্যে কার্যকর

হাসিনা-নাজিব ভিডিও কনফারেন্স পদ্মা সেতু সমঝোতা স্মারক ৯ মাসের মধ্যে কার্যকর

বহুল আলোচিত পদ্মা সেতু নির্মাণে মালয়েশিয়ার সঙ্গে অবশেষে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করেছে বাংলাদেশ।

‘মেমোরান্ডাম অব আন্ডারস্টান্ডিং অন কো-অপারেশন ইন দ্য কনস্ট্রাকশন অব দ্যা পদ্মা মাল্টি পারপাস ব্রিজ অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটেড ফ্যাসিলিটিজ ইনক্লুডিং আদার ইনফাস্ট্রাকচার প্রোজেক্টস ইন বাংলাদেশ’ নামের এই সমঝোতা স্মারক ৯ মাসের মধ্যে কার্যকর হবে।

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার একেএম আতিকুর রহমান মঙ্গলবার দুপুরে কুয়ালালামপুরের হোটেল হিলটন থেকে টেলিফোনে এসব তথ্য জানান।

মালয়েশিয়া সরকারের সমন্বয়ে ২ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের এই সেতু নির্মাণের পর একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মালয়েশিয়া এর টোল আদায় করবে। পরে সেতুটির মালিকানা বাংলাদেশকে দেওয়া হবে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা হাইকমিশনার আরো বলেন, ‘কুয়ালালামপুরের হোটেল হিলটনে স্থানীয় সময় সোয়া বারোটায় এই সমঝোতা স্মারক সই হয়।’

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক এই সমঝোতা স্মারক সই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

হাইকমিশনার আতিকুর জানান, চুক্তি সই অনুষ্ঠানস্থল থেকেই মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মধ্যে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেন।

এ সময় তিনি শেখ হাসিনাকে পদ্মা সেতুর ব্যাপারে মালয়েশিয়ার তরফ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করার আশ্বাসও দেন বলে হাইকমিশনার বাংলানিউজকে জানান।

যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর দক্ষিণ এশিয়ার অবকাঠামোবিষয়ক বিশেষ দূত সামি ভেলু নিজ নিজ দেশের পক্ষে সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন।

সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী, পদ্মা সেতু নির্মাণে অবকাঠামোসহ সব ধরনের সহযোগিতা দেবে মালয়েশিয়া। সমঝোতা স্মারকের ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে মূল চুক্তি হবে বলেও মঙ্গলবার জানানো হয়।

পদ্মা সেতু নির্মাণে মালয়েশিয়া ২ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার বা পরবর্তীতে প্রয়োজন হলে আরো অর্থ বিনিয়োগ করবে। এই অর্থ তারা পরবর্তীতে সেতুর টোল থেকে আদায় করবে।

সমঝোতা স্মারকে যা রয়েছে:
‘মেমোরান্ডাম অব আন্ডারস্টান্ডিং অন কো-অপারেশন ইন দ্য কনস্ট্রাকশন অব দ্যা পদ্মা মাল্টি পারপাস ব্রিজ অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটেড ফ্যাসিলিটিজ ইনক্লুডিং আদার ইনফাস্ট্রাকচার প্রোজেক্টস ইন বাংলাদেশ’ নামের সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী বিওওটি (বিল্ট অন অপারেট অ্যান্ড ট্রান্সফার) পদ্ধতিতে পদ্মা সেতু নির্মিত হবে।

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার এ সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য জানান।

মালয়েশিয়া সরকারের সমন্বয়ে ২ দশমিক ৩০ ডলার বিনিয়োগের এই সেতু নির্মাণের পর একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মালয়েশিয়া এর টোল আদায় করবে। পরে সেতুটির মালিকানা বাংলাদেশকে দেওয়া হবে।

সমঝোতা স্মারকে সেতু সম্পর্কিত সহযোগিতা, তথ্য বিনিময়, প্রযুক্তি বিনিময় এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন অবকাঠামোখাতে সহযোগিতা দেবে মালয়েশিয়া সরকার।

পদ্মা সেতু নির্মাণে সাম্যতার ভিত্তিতে এক দেশ অন্যদেশকে সহযোগিতা দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি এই সমঝোতা স্মারকে করা হয়েছে।

সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী, সেতুটি নির্মাণের ক্ষেত্রে মালয়েশিয়া সরকার তাদের দেশের বা বাইরের বেসরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ ও সমন্বয় করবে।

মালয়েশিয়ার সেতু নির্মাণ সম্পর্কিত কর্তৃপক্ষ সমঝোতা স্মারকের মেয়াদের মধ্যে পদ্মা সেতুর জন্য নতুন করে কারিগরি ও আর্থিক প্রস্তাবনা (বিড) বাংলাদেশ সরকারের কাছে জমা দেবে।

সমঝোতা স্মারকে আরো বলা হয়েছে, সমঝোতা স্মারক সইয়ের দিন থেকেই পরবর্তী ৯ মাসের মধ্যে এই সমঝোতা স্মারক কার্যকর করতে হবে।

সমঝোতা স্মারক অনুষ্ঠানে যারা উপস্থিত ছিলেন:

কুয়ালালামপুরের পাঁচ তারকা হোটেল হিলটনে অনুষ্ঠিত পদ্মা সেতু নির্মাণের সমঝোতা স্মারক সই অনুষ্ঠানে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও হাইকমিশনার একেএম আতিকুর রহমান ছাড়াও অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বিভাগের সিনিয়র সচিব ইকবাল মাহমুদ, সেতু বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক গোলাম সরওয়ার, পদ্মা সেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রথম সচিব রেজাউল বাশার সিদ্দিকি প্রমুখ।

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক ও তার বিশেষ দূত দাতো সেরি সামি ভেলু ছাড়াও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর বিষয়কমন্ত্রী দাতো এস কে দেবমনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, পদ্মা সেতু নির্মাণে এর আগে গতবছর ঢাকায় বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই হয়। কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংক ওই অর্থায়ন স্থগিত করে।

প্রস্তাবিত ২৯০ কোটি ডলার খরচের পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে ১২০ কোটি ডলার সহায়তার চুক্তি হয়। একই প্রকল্পে এডিবি ৬১  কোটি, জাপানের জাইকা ৪০ কোটি এবং ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের ১৪ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ারও পৃথক চুক্তি হয়। তবে বিশ্বব্যাংকের ঋণ স্থগিত করায় অন্যরা আর ঋণ দিতে চায়নি। কারণ বিশ্বব্যাংকই পুরো প্রকল্পের ঋণ দাতাদের সমন্বয়কারীরর দায়িত্বে ছিল।

বাংলাদেশ