জেলায় শুটকি উৎপাদনের মাধ্যমে জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানের পথ সৃষ্টি হয়েছে । চরফ্যাসন উপজেলার সাগর উপকুলীয় এলাকা কুকরী-মুকরী ও ঢালচরে গড়ে উঠেছে শুটকির পল্লী। শীত মৌসুমে ইলিশের স্বল্পতা থাকায় অনেক জেলেই জড়িয়ে পড়ছে শুটকি উৎপাদনে। প্রায় ৬ বছর যাবত জেলেরা এখানে বাণিজ্যিকভাবে শুটকি উৎপাদন করছে।
স্থানীয় নদ-নদী ও সাগর মোহনা থেকে চিংড়ি, চেউয়্যা, লউট্রা, ছুরা ও বদরছুিরসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ সংগ্রহ করে বিভিন্ন উপায়ে রোদে শুকিয়ে শুটকি উৎপাদন করা হচ্ছে। সে শুটকি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, চট্রগ্রাম, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, লক্ষীপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। ঢাকা থেকে অনেকে আবার এসব শুটকি দেশের বাইরেও রফতানি করে থাকেন।
জানা যায়, সাধারণত পৌষ, মাঘ ও ফাল্গুন এ ৩ মাস শুটকি উৎপাদনের মৌসুম। শীত মৌসুমে ইলিশের সংকট থাকায় অনেক জেলেরা বেকার হয়ে পড়ে। এ সময় তারা বিকল্প কর্মসংস্থান হিসেবে শুটকি উৎপাদন বেছে নিচ্ছে তারা। মাছ ধরার পাশাপাশি শুটকি উৎপাদন অনেকের ভাগ্য বদলে যাচ্ছে। জেলেরা জানায় , নদী থেকে মাছ ধরার পর ২/৩ দিন ভালোভাবে রোদে শুকিয়ে নিতে হয়। এরপর মাচা তৈরী করে সেখানে আরো কিছুদিন রোদে শুকানোর পর সংরক্ষণ করতে হয়। এরপরই শুটকি বিক্রির করতে হয়। এ মৌসুমে প্রতি মণ শুটকি ১১’শ থেকে ১৮’শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। দাম ভালো থাকায় লাভবান হচ্ছে জেলেরা।
কুকরী-মুকরীর বালুর ধুম, নারিকেল বাগান ও ডাকাতিয়া ঘাটের মধ্যবর্তী চরে আরো গড়ে উঠেছে শুটকি পলীø। সেখানে দেখা যায় জেলেদের ব্যস্ততা। কেউ মাছ কেটে রোদে দিচ্ছে, কেউ পরিচর্যা করছে। কেউ আবার মাচার ভেতর শুটকি সাজিয়ে রাখছে। এছাড়া উপজেলার ঢালচর এলাকাতেও আরেকটি শুটকি পল্লী গড়ে উঠেছে।
শুটকির আড়ৎদার মো: কবির হোসেন জানান, কুকরী-মুকরীতে শতাধিক জেলে বর্তমানে শুটকি তৈরীর সাথে জড়িত। তারা শুটকি তৈরী করে বিভিন্ন আড়তে বিক্রি করে। এ বছর পুরো মৌসুমে কুকরী থেকে শুধু এক কোটি টাকার শুটকি বিক্রি হবে।
জেলে কামাল মিয়া ও রহমান আলী জানায়, তারা গত ৩ বছর ধরে শুটকি পল্লীতে কাজ করছে। ফলে নদীতে মাছ না থাকার সময়টাতে শুটকি উৎপাদনে নিয়োজিত থাকায় তাদের আর্থিক সংকট হচ্ছে না।
জেলে মো: আলাউদ্দিন সিকদার বলে, শুটকি উৎপাদনে তেমন কোন মূলধনের প্রয়োজন হয় না। অল্প পুঁজিতে বেশী লাভ। তাই শুটকির প্রতি ঝুঁকছে জেলেরা। শুটকির বেপারী আক্তার হোসেন ও মো: শফিকুল জানান,কয়েক বছর ধরে শুটকি ব্যবসায় তাদের ভালো আয় হচ্ছে। এতে তাদের সংসার ভালো চলছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো: রেজাউল করিম জানান, জেলেদের সহযোগিতার মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে শুটকি শিল্পকে আরো প্রসারিত করা হবে। এতে করে শুটকি উৎপাদনের সাথে জড়িত জেলেদের আগ্রহ বাড়বে। অন্যদিকে জাটকা সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে।